রাসমণির বাড়ি হয়ে বিশ্বাস পরিবার, রানির মেয়েদের পরম্পরায় দুর্গাপুজোর নাম এখন ‘তিন বাড়ি’-র পুজো

রানি রাসমণির বাড়ির দুর্গাপুজো বলতে এখন 'তিন বাড়ি'-র পুজোকে বোঝায়। চৌধুরী বাড়ি, হাজরা বাড়ি এবং বিশ্বাস বাড়ি। রানি রাসমণির বাড়ির ঠাকুরের মুখের আদলেই ‘দেবী’ চলচ্চিত্রের পোস্টার এঁকেছিলেন সত্যজিৎ রায়। 

রানি রাসমণির চার মেয়ে ৷ পদ্মমণি, কুমারী, করুণাময়ী আর জগদম্বা।চার মেয়ে এল রাজচন্দ্র আর রাসমণির পরিবারে ৷ এত বড় জমিদারি দেখবে কে ? শেষ পর্যন্ত অবশ্য মেয়ে-জামাতার মধ্যেই ভাগ হয়েছিল রাজচন্দ্রের জমিদারি ৷ আর সেই কারণেই আজও তিনটি ভাগে চলছে এই পুজো। লিখেছেন, সংবাদ প্রতিনিধি অনিরুদ্ধ সরকার।

চৌধুরী বাড়ির পুজো-
 রানি রাসমণির বড় মেয়ে পদ্মমণির বংশধরেরা বাড়ির যে অংশে থাকেন, সেই অংশে একটি ঠাকুরদালান রয়েছে ৷ সেখানেও দীর্ঘদিন ধরে দুর্গাপুজো হত৷ অন্যদিকে রানি রাসমণির মেজো মেয়ে কুমারীর স্বামী প্যারীমোহন চৌধুরীর বংশধরেরা বাড়ির যে অংশে থাকেন, সেই অংশেও একটা ঠাকুরদালান আছে এবং সেখানেও আরেকটা দুর্গাপুজো হয় যা চৌধুরী বাড়ির পুজো নামে খ্যাত ৷

Latest Videos


হাজরা বাড়ির পুজো- 
রানির সেজো মেয়ে করুণাময়ীর সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল জমিদার মথুর মোহন বিশ্বাসের ৷ মথুরবাবুকে নিজের ছেলের মতোই ভালবাসতেন রানিমা৷ ভরসাও করতেন ৷ বিয়ের বছর দু’য়েকের মধ্যেই মারা যান করুণা ৷ তারপর করুণার বোন জগদম্বার সঙ্গে বিয়ে হয় মথুরমোহনের। জগদম্বা আর মথুরের এক ছেলে ৷ ত্রৈলোক্যনাথ বিশ্বাস ৷ তাঁর আবার চার ছেলে ব্রজগোপাল, নিত্যগোপাল, শ্রীগোপাল আর মোহনগোপাল। ব্রজগোপালের দুই মেয়ে ৷ বিদ্যুৎলতা ও লাবণ্যলতা ৷ লাবণ্যলতার বিয়ে হয়েছিল বিজয়কৃষ্ণ হাজরার সঙ্গে ৷ সেই থেকে আজও জানবাজারের মূল বাড়িতে এই পুজোর দায়িত্ব সামলাচ্ছেন হাজরা পরিবারের সদস্যরাই ৷ রানি রাসমণি যে মণ্ডপটিতে পুজো করতেন, সেটি এই পরিবারেরই অংশে।





বিশ্বাস বাড়ির পুজো- 
জগদম্বা আর মথুরের এক ছেলে। ত্রৈলোক্যনাথ বিশ্বাস। তাঁর আবার চার ছেলে ব্রজগোপাল, নিত্যগোপাল, শ্রীগোপাল আর মোহনগোপাল। নিত্যগোপালের দুই সন্তান, সুশীল কুমার বিশ্বাস আর সুনীল কুমার বিশ্বাস। সুনীল কুমার বিশ্বাসের ছেলেরাই বর্তমানে ১৮ রানি রাসমণি রোডে, রানি রাসমণি ভবনের দুর্গাপুজো পরিচালনা করেন যা বিশ্বাস বাড়ির পুজো নামেই পরিচিত।


পুজো পদ্ধতি- 
রাসমণি বাড়িতে কাঠামো পুজো হয় রথের দিন। এক চালার প্রতিমার পরনে থাকে ডাকের সাজ। এখানে ছাঁচে ফেলে ঠাকুরের মুখ গড়া হয় না। প্রতিমার মুখ তৈরি হয় হাতে এঁকে। চিত্রকরদের নিপুণ রেখার টানে অসাধারণ হয়ে ফুটে ওঠে দেবীর তেজস্বিনী মুখ। ২২ ফুটের প্রতিমার গায়ের রং হয় শিউলি ফুলের বোঁটার মতো। সরস্বতীর মুখ হয় সাদা। অসুরের মুখ সবুজ।

প্রতিপদ থেকে শুরু হয় পুজো ৷ প্রথমে বোধন ঘরে হয় বোধন ৷ বোধন ঘরেই রয়েছে হোমকুণ্ড ৷ ঠাকুর দালানের থেকে তিন সিঁড়ি নীচে এই বোধন ঘর ৷ রানিমার পুজোর অন্যতম বিশেষত্ব হল, এই পুজোয় রোজই হয় কুমারী পুজো ৷ আরও একটা বিষয় হল, কুমোররা নয় পুজোয় ঠাকুর গড়েন চিত্রকররা ৷ তবে মায়ের মুখের কোনও নির্দিষ্ট ছাঁচ নেই ৷ বংশপরম্পরায় চিত্রকররাই হাতের আদলে জীবন্ত করে তোলেন মায়ের মুখ ৷ দেবীর গাত্র বর্ণ হয় শিউলি ফুলের বোঁটার মতো ৷ আটচালায় আঁকা থাকে নানা পৌরাণিক কাহিনীর ছবি ৷

পুজোয় সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী তিন দিনই চলে কুমারী পুজো। আর দশমীর বিসর্জনের দিন বিশেষ আকর্ষণ ছিল এই বাড়ির কুস্তি প্রদর্শনীর। দেশ-বিদেশ থেকে কুস্তিগীররা এসে কুস্তি লড়তেন এইদিন। বিজয়ীদের বকশিশ বা পুরস্কারও দেওয়া হতো জানবাজারের বাড়িতে। দেবীকে পুজোর কয়দিন নুন ছাড়া লুচি ও পাঁচরকম ভাজা ভোগ দেওয়া হয়, দেওয়া হয় বিশেষ 'মাতৃভোগ' মিষ্টি, খাজা, গজা বা নাড়ুও। আগে বলি প্রথা চালু থাকলেও এখন চালকুমড়ো ও আখ বলি হয় শুধু।

আরও পড়ুন-
দত্তক পুত্র আর নিজের পুত্রের মধ্যে ভাগ হল  শোভাবাজার রাজবাড়ির সম্পত্তি, কীভাবে শুরু হল ছোট তরফের দুর্গাপুজো?
১৭৫৭ সালের কাঠামোতেই এখনও গড়ে ওঠে শোভাবাজার রাজবাড়ির বড় তরফের দুর্গা প্রতিমা, জেনে নিন সেই পুজোর ইতিহাস
বাঈজি নাচ থেকে বলড্যান্স, নবাব সিরাজের অর্থ পেয়ে শোভাবাজার রাজবাড়ির দুর্গাপুজোয় এসেছিল ইংরেজরেজদের বৈভবের ছাপ

Read more Articles on
Share this article
click me!

Latest Videos

'TATA-কে তাড়িয়ে সিঙ্গুর নয়, নন্দীগ্রামের জন্যই পিসি আজ মুখ্যমন্ত্রী' চরম কথা Suvendu Adhikari-র
Election Commission Live : বিধানসভা নির্বাচন কবে দিল্লিতে? ভোটের নির্ঘণ্ট প্রকাশ নির্বাচন কমিশনের
বাপরে! কাঁপছে ঘর, দুলছে ফ্যান! সাতসকালে কেঁপে উঠল নেপাল, বিহার ও কলকাতা | Nepal Earthquake Today
'আখতার আলীর চরম সর্বনাশ করবে তৃণমূল', আশঙ্কা প্রকাশ অধীর রঞ্জন চৌধুরীর | Adhir Ranjan Chowdhury
'আমি যার দিকে তাকাই সে ধ্বংস হয়ে যায়' নন্দীগ্রামে চরম হুমকি শুভেন্দুর | Suvendu Adhikari Nandigram