'যাঁদের জন্য কোণঠাসা তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞ! আপনারা না থাকলে ঘুরে দাঁড়াতে পারতাম না'- শ্রীলেখা মিত্র

কিসের জোরে জিতে ফেরেন শ্রীলেখা? আর তখনই সটান উত্তর '২৮ বছরের টগবগে তরুণী 'ব্রা ' পরে ছবি দিচ্ছেন, লোকের মাথাব্যথা নেই, শ্রীলেখা ব্রা শব্দটা উচ্চারণ করলে ২০২২-এও গেল গেল রব!'- জয়ং দেহি পুজো বিভাগে কলম ধরলেন শ্রীলেখা মিত্র। 
 

প্রথা ভাঙলেই যে লড়াই শুরু, তা কিন্তু নয়। প্রথা না ভেঙেও নারীর লড়াই চলছে, চলবে। অদম্য জেদ নিয়ে যাঁরা জিতে ফেরেন, সমাজ-পরিবারে দুষ্টের দমন করেন— তাঁরাই প্রকৃত দশভূজা। এঁদের বীজমন্ত্র, জয়ং দেহি। শারদীয়ার আগে এশিয়ানেট নিউজ বাংলার এই বিশেষ বিভাগে কলম ধরলেন শ্রীলেখা মিত্র--- 

জীবন খাতার প্রতি পাতায়...
বিশ্বাস করুন, ফুরসত নেই! পিঠোপিঠি মিটিং। সকাল, সন্ধে দৌড়োচ্ছি। নন্দনে আমার প্রথম পরিচালনা ‘এবং ছাদ’ দেখানো হল। দেশের নানা কোন থেকে সম্মান, পুরস্কার, প্রশংসার ঢল। গত বছর ভেনিস গিয়েছিলাম আদিত্যবিক্রম সেনগুপ্তর ‘ওয়ান্স আপঅন এ টাইম ইন কলকাতা’ ছবির কারণে। পরের ছবির প্রস্তুতি নেওয়াও শুরু করেছি। পুজো মিটলেই সে সবে হাত দেব। প্রযোজনা সংস্থাও খুলেছি। পত্রিকা, ওয়েবসাইট, বিজ্ঞাপন দুনিয়ায় মডেলিং করছি। আর এ সব করতে করতেই বুঝতে পারছি, ভাগ্যের চাকাটা তো ঘুরছে! 

Latest Videos

একটা নয়, দুটো নয়, টানা আড়াই বছরের লড়াই। এক এক সময় যেন দম আটকে আসত। ক্লান্ত লাগত। অবসন্ন হয়ে পড়তাম, বিষণ্ণও! পরের দিন নতুন করে নিজেকে গুছিয়ে আবার ময়দানে নামতাম। আলাদা করে নিজেকে তুলে ধরার জন্য কিছু করতাম বা করেছি? না না। বরং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হাঁটার চেষ্টা করেছি। লেখালেখি, নিজেকে নিয়ে রসিকতা, মুখের উপরে সাদাকে সাদা বলার চেষ্টা করেছি। এ সব করতে গিয়ে রোষের মুখেও পড়েছি। যাঁরা অভিনয় দুনিয়ার ‘স্তম্ভ’, তাঁদের মুখোশ কথায় কথায় খুলে দিয়েছি। প্রতিদানে শ্রীলেখা মিত্র কোণঠাসা। একটুও ঘাবড়াইনি। গলা খুলে প্রতিবাদ করেছি। কটাক্ষের শিকার হয়েছি। আমার সারমেয়প্রীতি নিয়ে। স্পষ্টবাদিতা নিয়ে। নিজেকে নিয়ে রসিকতা নিয়ে। সপাট বক্তব্যের জেরে। কাউকে তেল না মেরে। আর হ্যাঁ, পছন্দের দলকে সাপোর্ট করেও! বিরুদ্ধ দল রাগে জ্বলতে জ্বলতে আমায় ‘দলনেত্রী’ বানিয়ে দিয়েছে! দলকে সমর্থন আর দলের নেত্রী কি এক তকমা? বুঝুন একবার, একুশ শতকেও মানুষ এ সব বোঝে না!

আমার তো কেবলই দোষ। কাউকে তেল দিতে পারি না। না বিনোদন দুনিয়ায় না রাজনীতিতে। ফলাফল? আপনারা জানেন। একটা সময় আমার হাতে কোনও কাজ ছিল না। মনে মনে হয়ত গুঁড়িয়ে যাওয়ার আগের মুহূর্ত। কিন্তু গুঁড়োগুঁড়ো হইনি। ঠোঁট চিপে খরচের বহরে লাগাম পরিয়েছি। ভগবান আমার বড় সহায়। আমি কোনও দিন দুহাত খুলে খরচ করি না। আমার ব্র্যান্ডেড গাড়ি, বিলাসবহুল গাড়ি, দামি আই ফোন, প্রচুর গয়না— লাগে না। এবং আমি কারওর কাছে হাতও পাতি না। স্বামী শিলাদিত্য সান্যালের সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছে। মা-বাবার কাছেও তখন হাত পাতিনি। জমানো টাকায় বাড়ি কিনেছি। বাড়ির মাসিকে সংসার খরচের জন্য গুনে গুনে পয়সা দিতাম। যাতে এক পয়সা নষ্ট না হয়। এটা বোধহয় ‘দুর্মুখ’ শ্রীলেখাই পারে।

সম্প্রতি, পঞ্চাশে পড়লাম। হাতে গোনা কয়েক জনকে নিয়ে টাকিলা খেয়েছিলাম। তাই নিয়ে তুলকালাম! জন্মদিন উদযাপনে টাকিলা খাব না তো কি গঙ্গাজল খাব? ক’জন নায়িকা আমার মতো প্রকাশ্যে এমন বয়স বলতে পারেন? তার পরেই ব্রা উচ্চারণ করতে ফের হুলুস্থূল। আমি মজা করতে গেলাম। লোকে যথারীতি উল্টো বুঝলি রাম! 

বিদ্রোহ আজ বিদ্রোহ চারিদিকে...
আর কাউকে তোয়াক্কা করিনি। এর মধ্যেই, এক মেয়ের মা হয়েও তথাকথিত ‘একা মা’ নই। শিলাদিত্য আর আমি এক ছাদের নীচে থেকে সরে গিয়েছি। কিন্তু মেয়ে মাইয়্যাকে ছাড়িনি। ওকে বলেইছিলাম, বন্ধুদের মধ্যেও ঝগড়া হয়। কেউ তখন কারওর কাছে যায় না। তোমার মা-বাবা কিন্তু তোমার। তোমার যে দিন যার কাছে ইচ্ছে তার কাছে থাকবে। মেয়েকে আমার থেকেও বেশি সময়, যত্নে বড় করেছে আমার সঙ্গে কাঁধ মিলিয়ে। আমি, মাইয়্যা এই ব্যাপারে ভাগ্যবতী। অনেক ক্ষেত্রেই অন্য বাবারা সঙ্গে সঙ্গে আবার বিয়ে করেন। সন্তানকে দেখেন না। শিলাদিত্য সেটা করেনি।

এ ভাবেই একা একা লড়েছি। বিনোদন দুনিয়া যেমন আমার থেকে মুখ ফিরিয়েছে। আমিও তাদের থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছি। বরাবরই পার্টি গোয়ার্সদের দলে পড়ি না। খুব ঠেকে না গেলে আমায় ঠেলে রাস্তায় বের করতে হয়। খাটের পাশেই লেখার টেবিল। কাগজ, কলম, ল্যাপটপ। আমার বাড়িতে দল বেঁধে আসে কাক, পায়রা। গা ঘেঁষে থাকে একাধিক সারমেয়। ওদের ভালবাসা যে না পেয়েছে সে বুঝবে না কতটা আন্তরিক ওরা। ওদের জন্য জমি কিনেছি। ওদের ভবিষ্যত নিয়ে ভাবছি। মন উঠলে লিখি। না হলে সিরিজ দেখি। কিচ্ছু ভাল না লাগলে ঘুমিয়ে পড়ি। আমার বাড়িতে কেউ আসেন না। আমিও কারও বাড়িতে গুঞ্জন ছড়াতেও যাই না। 

এই করতে করতেই কিন্তু আমার প্রতি মনোভাব বদলেছে সবার। আগে সবাই ভাবতেন আমিই দোষী। আমিই ভুল। নানা ঘটনা, ঘাত-প্রতিঘাত চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, আমিই ঠিক। যাঁদের যা বলেছি, তাঁরা আসলে তেমনই। আমার অভিনয়ে দাঁড়ি টানার চেষ্টা করেছে। আমি বদলে পরিচালনায় হাত পাকিয়েছি। একটা ছবি বানিয়ে ফেললাম। দর্শকেরা সে ছবি দেখে খুশি। আগের মতো ইনস্টাগ্রামে এত কটাক্ষের বন্যা নেই। বরং কেউ কিছু বললে আমায় হয়ে মুখ খোলেন অন্যরা। আগে দিনের পর দিন সপাট মুখ খুলে নিজেকে নিজে আগলাতাম। এঁরা আমায় বুঝেছেন। তাই ভালবাসেন। এটাই তো আমি চেয়েছি। জানেন, বিমা সংস্থা থেকে কত সময় অনুরোধ ফোন আসে। আমি হয়ত সঙ্গে সঙ্গে জবাব দিলাম, না, আমি বিমা করাবো না। ওঁরা  ফোন রাখার আগে আন্তরিক ভাবে বলেন, আপনি আমাদের অনুপ্রেরণা। আপনার সাহস, হার না মানার জেদ আমাদের মুগ্ধ করে। আমরা অনেক কিছু শিখি আপনার থেকে। এই কথাগুলো ইন্ডাস্ট্রির তথাকথিত ‘স্তম্ভ’রা শুনতে পান সাধারণের মুখ থেকে? ওঁদের আড়ালে ওঁদের নালিশের বহর যদি শুনতেন, বুঝতেন আপনারা।  

ভাগ্যিস কোণঠাসা হয়েছিলাম...!

কে কী বলল, কে কী করল— কিচ্ছু এসে যায় না। বিন্দাস আছি। একটাই জীবন। নিজের মতো করে উপভোগ করছি। নিজের ইচ্ছেমতো চালনা করছি। আমার সারমেয়প্রীতি নিয়ে আবাসন থেকে বাম দল— যে যার মতো করে বিরোধিতা করেছে। আমি ওদের পাশ থেকে সরিনি। আমায় বাড়ির কাজে যাঁরা সহযোগিতা করেন তাঁরাও গুঞ্জন ছড়ানোর চেষ্টা করলে সমঝে দিই। বলি, কে কোন পরিস্থিতিতে কী বলছেন না যে মন্তব্য করা ঠিক নয়। ভাগ্যিস টানা অভিনয় করতে হয়নি। নইলে জাস্ট হেজে যেতাম। আমার কাছে অভিনয় দশটা-পাঁচটার চাকরি নয়। আমি শিল্পী। তারকা নই। আমি ‘ওয়ান্স আপ অন এ টাইম ইন কলকাতা’র মতো ছবিতে অভিনয় করতে চাই। যা দেশ-বিদেশ থেকে সম্মানিত করবে। এর জন্য তিন মাস আমি বাড়ির বাইরে পা রাখিনি।

নিয়মিত অভিনয় করলে পরিচালক হতে পারতাম? না, প্রযোজক? হ্যাঁ, কাজ না থাকার সময় একা একা অবসাদে ভুগেছি। চিকিৎসকের কাছে গিয়েছি। ওষুধ নিয়েছি। আমি সুস্থ। যা এখন পাচ্ছি, তা আরও অনেক আগে পাওয়া উচিত ছিল। যা এখন করছি তা আরও আগেই করা উচিত ছিল। সবার চাপে অনেকটা পিছিয়ে গিয়েছিলাম। ভাগ্যিস কোণঠাসা হয়েছিলাম। ভাগ্যিস পিছিয়েছিলাম। তাই তো দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার পরেও ফিনিক্স পাখির মতো গা ঝাড়া দিয়ে নতুন করে উড়তে পারলাম। এখন মনে মনে ধন্যবাদ জানাই আমার তথাকথিত শত্রুদের। কৃতজ্ঞ ওঁদের কাছে। ওঁরা বিরোধিতা না করলে নিজেকেই নিজে চিনতে পারতাম না। 

অনুলিখন- উপালি মুখোপাধ্যায়, সাক্ষাৎকার সংগ্রাহক প্রতিনিধি- উপালি মুখোপাধ্যায় 

আরও পড়ুন- 
'কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে বাবা-কাকার মৃত্যু! একার দায়িত্বে সংসার ধরে রেখেছিলেন মা'- শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়  
স্বস্তিকার ন্যুড লিপস না সৌরভের দাড়ি! পুজোয় কী নিয়ে কাড়াকাড়ি? জানাচ্ছেন রূপসজ্জা বিশেষজ্ঞ অভিজিৎ চন্দ 
শাড়ি বেচে সংসার চালিয়েছেন, হার মেনেছে ক্যান্সার! দেবীর আশীর্বাদে ‘জয়ী’ ভারতী চক্রবর্তী

Read more Articles on
Share this article
click me!

Latest Videos

লজ্জা মমতার! জঙ্গিদের স্বর্গরাজ্য এই বাংলা!| Suvendu Adhikari #shorts #shortsvideo #suvenduadhikari
PM Modi Live : কুয়েতে Gulf Spic-এর ভারতীয় কর্মীদের সঙ্গে আড্ডা মোদীর, দেখুন সরাসরি
পুলিশের তৎপরতায় বানচাল ডাকাতির প্ল্যান! গ্রেফতার ২ অপরাধী, চাঞ্চল্য Birbhum-এ
Suvendu Adhikari: 'কত বড় জিহাদি, রামনবমীর মিছিলে ঢিল মেরে দেখাও', হুঙ্কার শুভেন্দুর
খাদান নিয়ে Dev কে বিশ্রী আক্রমণ রাজের, দেবের পাশে দাঁড়িয়ে পাল্টা দিলেন Aritra Dutta Banik