আমাদের ছোটবেলায় পাড়ায় পাড়ায় শিল কাটাতে আসতেন জনা কয়েক মানুষ। ওটাই ছিল তাঁদের পেশা। ২০০০ সালের আগে পর্যন্ত পাড়ায় পাড়ায় দুপুরে আওয়াজ উঠত শিল কাটাও। কিন্তু কালের নিয়মেই ধীরে ধীরে হারিয়ে গিয়েছে এই পেশা।
বাঙালির কাছে পুজো মানেই নস্টালজিয়া। ছোটবেলার হাজারো স্মৃতির ভিড়ে পুজোর স্মৃতি সবার মনেই জ্বলজ্বল করে। কেমন হয় যদি সেই ছোটবেলাটাকেই হাজির করে এই বছরের দুর্গাপুজো? কালীঘাট নেপাল ভট্টাচার্য স্ট্রীট ক্লাবের পুজো সেই ব্যবস্থাই করে দিচ্ছে নিজের দর্শকদের জন্য। কোনও বড় নামের আড়ালে নয়, এই পুজো কমিটি তৈরি হয় এলাকার মানুষদের নিয়েই। এটা তাঁদের প্রাণের পুজো।
আমাদের ছোটবেলায় পাড়ায় পাড়ায় শিল কাটাতে আসতেন জনা কয়েক মানুষ। ওটাই ছিল তাঁদের পেশা। ২০০০ সালের আগে পর্যন্ত পাড়ায় পাড়ায় দুপুরে আওয়াজ উঠত শিল কাটাও। কিন্তু কালের নিয়মেই ধীরে ধীরে হারিয়ে গিয়েছে এই পেশা। মিক্সি ও গুঁড়ো মশলার ব্যবহার হারিয়ে দিয়েছে রান্নাঘরের অতি প্রয়োজনীয় জিনিস শিলনোড়াকে। আজ কলকাতা জুড়ে খুঁজলেও দেখা মিলবে না এই পেশার সঙ্গে যুক্ত একজনকেও। এই শিল কাটার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে আমাদের ছোটবেলা। এবারের কালীঘাট নেপাল ভট্টাচার্য স্ট্রীট ক্লাবের পুজোতে তাই থিমে সেই ছোটবেলার গন্ধমাখা শিল কাটার শব্দ।
শুধু থিমেই সামাজিক ভাবনা নয়, এই পুজো কমিটি সামাজিক বার্তাও দেন, থাকে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর ঐকান্তিক ইচ্ছা ও প্রচেষ্টা। থিমের পুজো হাজারো ছড়িয়ে শহর কলকাতায়। কিন্তু ছকভাঙা ভাবনা ভাবার সাহস দেখায় কতজন? কালীঘাট নেপাল ভট্টাচার্য স্ট্রীট ক্লাবের পুজো ঠিক সেই কাজটাই করে চলেছে। মায়ের আরাধনার পাশাপাশি, একাধিক সামাজিক কাজের সঙ্গে যুক্ত এই পুজো কমিটি।
দুঃস্থ মানুষদের কম্বল বিতরণ, বস্ত্র বিতরণ থেকে বিনামূল্য চশমা প্রদান। সবরকম ভাবে মানুষের পাশে থাকার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ কালীঘাট নেপাল ভট্টাচার্য স্ট্রীট ক্লাব কমিটি। করোনা কালে নিরন্তর দুঃস্থ মানুষদের মুখে খাবার যোগানোর কাজ করেছেন এই কমিটি। ২০ টাকার বিনিময়ে দুপুরের খাবার প্রতিদিন এখানে পান প্রায় ৪০ জন মানুষ।
গত তিন বছর করোনার কবলে সারা বিশ্ব জর্জরিত। এই বছর কোথাও তাই একটু হলেও স্বস্তির শ্বাস পেয়েছে শহর কলকাতা। কারণ সেই অর্থে করোনার প্রকোপ যেমন নেই, তেমনই ভ্যাকসিনকে হাতিয়ার করে করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মনে বল পেয়েছে মানুষ। গত তিন বছরের শুধু হারানোর যন্ত্রণা ভুলে ২০২২ সালের দুর্গোৎসব মহামিলন ক্ষেত্র হয়ে উঠুক, চাইছেন পুজো উদ্যোক্তারা। তবে অবশ্যই বিধি মেনে, সাবধানতা অবলম্বন করে। তবে সর্বাঙ্গীণ সার্থক হবে মায়ের আরাধনা। সেই লক্ষ্যেই পুজো প্রস্তুতিতে ব্যস্ত কালীঘাট নেপাল ভট্টাচার্য স্ট্রীট ক্লাব কমিটি।