‘ভালোবাসার রং, নাকি নারীসত্ত্বার যতিচিহ্ন’, এই দ্বন্দ্বের মুখে দাঁড়িয়ে তৃতীয় বিশ্বের বহু নারীর জীবন, সেই ভাবনাকে সঙ্গী করে ৫৩তম বর্ষে পদার্পণ করে বেলেঘাটা সন্ধানীর এবছরের দুর্গাপুজোর থিম ‘সিঁদুর’।
স্বল্প পুঁজিতে বাঙালির দুর্গাপুজো শুরু হয়ে বছর ঘুরতে ঘুরতে লোকবলে আর আন্তরিক প্রচেষ্টায় সেই পুজো হয়ে ওঠে বৃহৎ। বেলেঘাটা সন্ধানী ক্লাবের পুজোতেও সেই উদ্যোগ আর আনন্দের তরঙ্গে ভাটা পড়েনি এতটুকুও। সেইজন্যেই এই ক্লাবের পুজো আট থেকে আশি, সকলকে সঙ্গে নিয়ে দেখতে দেখতে দেখতে ২০২২-এ এসে অবলীলায় পার করে ফেলল ৫৩টা বছর।
‘ভালোবাসার রং, নাকি নারীসত্ত্বার যতিচিহ্ন’, এই দ্বন্দ্বের মুখে দাঁড়িয়ে তৃতীয় বিশ্বের বহু নারীর জীবন, সেই ভাবনাকে সঙ্গী করে ৫৩তম বর্ষে পদার্পণ করে বেলেঘাটা সন্ধানীর এবছরের দুর্গাপুজোর থিম ‘সিঁদুর’। ভারতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে আগাগোড়া লেপটে রয়েছে সিঁদুর, অবুঝ বয়সে যখন মায়ের কপালে সিঁদুর দেখে নিজের কপাল রাঙিয়ে তুলতে চায় অবোধ শিশু, আলতা রাঙা পা আর গরদের শাড়ির রমাঞ্চ তাকে স্পর্শ করে উঠতে পারে না তখনও, গোপনে নিয়ম ভাঙার সেই খেলা বড় হয়ে উঠতে না উঠতেই ছুঁয়ে ফেলে আবেগের বসন্ত। শিল্পী বাসুদেব দাস বাউলের “ভোরের সূর্য কপালে তোর সিঁদূর হয়ে যাবে লো”-র আদুরে আকাঙ্ক্ষায় বঙ্গ নারী রাঙিয়ে নেয় তার উন্মুক্ত সিঁথি। কিন্তু, কবিগুরুর আলোয় রাঙা চৈত্রমাসে “তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ” হয়ে ওঠে কোনও কোনও সোহাগী নারীর ব্যর্থ ভবিতব্য। সেই সমগ্র নারীসত্ত্বার চিরন্তন গল্পকথা ধরা দেবে বেলেঘাটা সন্ধানী ক্লাবের দুর্গাপুজোতে। ‘সিঁদুর’ ভাবনার বাস্তবায়ন ঘটিয়েছেন শিল্পী রূপক বসু।
ইউনেস্কোর সম্মানের বিশেষ বছরে এসে সন্ধানী ক্লাবের পুজোর বাজেট এবছর প্রায় ৩০ লাখ। ২০২২-এ দেবী প্রতিমা গড়ে তুলছেন শিল্পী সনাতন পাল। পুজোকে আলো দিয়ে প্রাণ সঞ্চার করে তুলছেন শিল্পী আশিস সাহা। সমগ্র এলাকা জুড়ে ‘সিঁদুর’ থিমের গুনগুন ছড়িয়ে দিতে আবহ সঙ্গীত রচনা করেছেন রাজীব চক্রবর্তী, সুর বুনেছেন আশু চক্রবর্তী এবং কণ্ঠ দিয়েছেন শিল্পী দেবলীনা সিংহ রায়। আর এই সমস্ত বিষয়টিকে নিরন্তর সহযোগিতা দিয়ে সফল করার কাজে লেগে রয়েছেন সহযোগী শিল্পী তাপস হাজরা।
বেলেঘাটা সন্ধানী ক্লাবের দুর্গাপুজোর মণ্ডপ দর্শনার্থীদের জন্য খুলে যাবে দ্বিতীয়ার দিনেই। বহু তারকা, আঞ্চলিক কাউন্সিলর, বিধায়ক এবং বাংলার হেভিওয়েট মন্ত্রীদের পাশাপাশি পুজোর উদ্বোধনের দিন প্রধান অতিথি হয়ে আসবেন রামকৃষ্ণ মিশনের মহারাজ। কোভিড বিধি মেনে মণ্ডপে প্রবেশ করার এবং প্রস্থান করার গেট রাখা হয়েছে পৃথক। ভিড় এবং গাদাগাদি নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রস্তুত থাকছে ক্লাবের নিরাপত্তা রক্ষী এবং স্বেচ্ছাসেবক দল। এবছরের বিশেষ ব্যবস্থায় দেবী প্রতিমাকে সম্পূর্ণ প্রদক্ষিণ করে বাইরে বেরোতে পারবেন দর্শকরা।