নেটফ্লিক্সের গোস্ট স্টোরিজ আবার নিয়ে এল সেই চার বলিউডি পরিচালককে একসঙ্গে। ২০১৩ সালের বোম্বে টকিজ-এর এবং ২০১৮-এর লাস্ট স্টোরিজ-এর পর করণ জোহর, দিবাকর বন্দ্যোপাধ্যায়, জোয়া আখতার ও অনুরাগ কাশ্যপ আবার একসঙ্গে। এবার ভূত নিয়ে সিরিজ তাই আগ্রহ ছিল তুঙ্গে কিন্তু দর্শকদের প্রত্যাশা মিটল কি? দিবাকর বন্দ্যোপাধ্যায় একমাত্র যিনি সুনাম রাখতে পারলেন আবারও। বাকিরা 'না গোস্টকা না স্টোরিজ কা' হয়ে রইলেন।
প্রথম সমস্যা হল নাম নিয়ে। নেটফ্লিক্স লাস্ট স্টোরিজের পর হয়তো খুঁজছিল ক্যাচি নাম যা নতুন প্রজন্মের কাছে আকর্ষণীয় হবে। একমাত্র একটাই গল্প আছে যাতে ভূত আছে, ভয় আছে। প্রযোজকরা মাথাই ঘামাননি মনে হয় বিষয় নিয়ে। রোমহর্ষক সিরিজের জন্য যারা বসেছিলেন, নাম শুনে যারা সত্যি চেয়েছিলেন ভয় পেতে শীতের রাতে তারা হতাশ হবেন বলেই মনে হয় ।
জোয়া আখতারের গল্প নার্স সমীরা (জাহ্নবী কাপুর) ও অসুস্থ বৃদ্ধা (সুরেখা সিক্রি)-কে নিয়ে । বিছানায় শয্যাশায়ী বৃদ্ধা মনে করেন তার ছেলে তার সঙ্গেই থাকেন কিন্তু তাকে দেখা যায় না। সমীরা এ কথা শুনেও বিশ্বাস করতে চায় না প্রথমে কিন্তু পরে রাতের দিকে কিছু অদ্ভুত শব্দ শুনে তার হাড় হিম হয়। পরিবেশ দিয়ে যে ভয়ের সৃষ্টি করেছেন পরিচালক তা ভালো লাগবে কিন্তু গভীরতা ছিল না শেষ পর্যন্ত। তাই শেষ পর্যন্ত ওই ভয় পাওয়ার ইচ্ছেটা টিকে থাকে না দর্শকের।
এই গভীরতার অভাব সব গল্পগুলোতেই। জোহরের গল্পে ইরা (ম্রুনাল ঠাকুর) ও ধ্রুব (অবিনাশ তিওয়ারি) স্বামী স্ত্রী। ধ্রুব ভালো বাসে ইরাকে কিন্তু তার ঠাকুমার সঙ্গে তার সম্পর্ক ভীষণ গভীর। তারা কথা বলে যদিও ঠাকুমা মারা গেছেন দুই যুগ আগে। বিত্তশালী পরিবারের কেচ্ছা লুকনো থাকে অন্ধকারে। এই হল গল্প। কিন্তু গল্পটি ওপর ওপর ঘুরে ফিরে ফুরিয়ে যায়, নাড়া দেয় না অন্তরে। সংলাপের পুনরাবৃত্তি বিরক্তি ধরায় আর সামগ্রিক রূপায়নে গলদ চোখে পড়ে।
কাশ্যপের গল্প আবর্তিত হয় অন্তসঃত্ত্বা মহিলা (শোভিতা ধুলিপালা) ও তার বোনের ছেলেকে(জ্যাচ্যারি ব্রাজ) ঘিরে। দুঃস্বপ্ন, ফ্ল্যাশব্যাক এছাড়া তেমন কিছু পাবার ছিল না এ গল্প থেকে।
একমাত্র দিবাকর বন্দ্যোপাধ্যায় যিনি নিজের নামের প্রতি সুবিচার করেছেন। তিনি নিজেই গল্প লিখেছেন। এ ছবির সিনেমাটোগ্রাফি করেছেন রঞ্জন পালিত যার কাজে হিচককের ঝলক পাওয়া গেল। অভিনয় করেছেন, সুকান্ত গোয়েল, আদিত্য শেট্টি, এবং ইভা অমিত পরদেশী। দিবাকরের গুণ হল তিনি যা চান তাই বলেন সে যে মাধ্যমই হোক না কেন। এই ছবিতে একটি জনশূন্য গ্রামে পৌঁছয় একজন। দেখা হয় একটি ছোটো ছেলে ও মেয়ের সঙ্গে। ছবির প্লটে উঠে আসে এখনকার সামাজিক-অর্থনৈতিক অসহায়তা, নানাভাবে বিভক্ত ভারতের খন্ড চিত্র। গল্পে কীভাবে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট জুড়ে দিতে হয় তিনি জানেন। জাত পাতের লড়াই, দুর্নীতি, অসততা কীভাবে খেয়ে নেয় ছোটো শহরকে আর নাগরিক সভ্যতা চেপে ধরে তা আদপে এই ছবির প্রেক্ষাপট বড়ো করে দেয়। বাকিরা সেই নিজেদের ব্যক্তিগত ভয়, ভেতরের ভয় নিয়ে যখন গল্প ফাঁদছেন, দিবাকর সেখানে বাড়িয়ে দেন পরিধি অনেকখানি।
এই চারটে গল্প এক জায়গায় এনে একই মোড়কে পরিবেশনের অর্থ বোধগম্য হল না। একেবারে সবটা দেখার জন্য মজা নষ্ট হবে। এটাই যদি চারটি ভাগে পরিবেশিত হত তাহলে মনে হয় দর্শকদের প্রতি সুবিচার করা হত।