চলতে চলতেই বিস্ফোরণ ঘটল ইলেকট্রিক স্কুটারে (Electric Scooter), নেট দুনিয়ায় ভাইরাল এরকমই এক সিসিটিভি ফুটেজ (Viral Video)। ভিডিওটি আদৌ সত্যি তো?
একদিকে জ্বালানী তেলের দাম (Fuel Price Hike) বেড়েই চলেছে। অন্যদিকে প্রচলিত শক্তিতে বাড়ছে বায়ুদূষণের (Air Pollution) মাত্রা, যা এখন গোটা বিশ্বের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই দুচাকা-প্রেমীরা অনেকেই বেছে নিচ্ছেন ইলেকট্রিক স্কুটার (Electric Scooter) বা ব্যাটারি চালিত স্কুটার। কিন্তু, স্কুটারগুলি থাকা ব্যাটারিতে কি হঠাৎ বিস্ফোরণ ঘটতে পারে? নেট দুনিয়ায় ভাইরাল এক সিসিটিভি ফুটেজে (Viral Video) তেমনটাই দাবি করা হচ্ছে। এই ভিডিও দেখার পর অনেকের মনেই ইলেকট্রিক স্কুটার নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। অনেকেই ইলেকট্রিক স্কুটার চড়তে ভয় পাচ্ছেন। কিন্তু, ওই ভাইরাল ভিডিওটি আদৌ সত্যি তো, নাকি মানুষ অযথাই আতঙ্কিত হচ্ছেন এই স্কুটার নিয়ে?
কী রয়েছে ওই ভাইরাল ভিডিও ফুটেজে? সেখানে দেখা যাচ্ছে, এক ব্যক্তি একটি স্কুটার নিয়ে যাচ্ছেন। স্কুটারটি থেকে কোনও ধোঁয়া বের হওয়া বা অন্য কোনও রকম অস্বাভাবিকতা ছিল না। তবে, চলতে চলতেই স্কুটারটিতে ভয়ানক বিস্ফোরণ ঘটে। এতটাই জোরে, যে সিসিটিভি ক্যামেরাও কিছুক্ষণের জন্য কাজ করা বন্ধ করে দেয়। তারপর দেখা যায়, স্কুটারটি খণ্ড-বিখণ্ড হয়ে গিয়েছে। ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে গিয়েছে আরোহীর দেহ। বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে এই ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়েছে। দাবি করা হচ্ছে, ওই স্কুটারটি একটি ব্যাটারি-চালিত স্কুটার ছিল। ব্যাটারি-চালিত স্কুটারগুলিতে এভাবেই চলতে চলতে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে।
ভাইরাল পোস্টে দাবি করা হচ্ছে, ব্যাটারি-চালিত স্কুটার চলতে চলতে বিস্ফোরিত হয়েছে
এই নিয়ে ইলেকট্রিক স্কুটারদের মালিকদের আতঙ্কের মধ্যেই ভিডিওটির সত্যতা যাচাই করেছে এশিয়ানেট নিউজ বাংলা। ভাইরাল ভিডিওটি থেকে প্রথমে কয়েকটি কি ফ্রেম নেওয়া হয়েছে। তারপর সেই ছবিগুলি দিয়ে গুগলে বিপরীত চিত্র অনুসন্ধান করা হয়। তাতে বেশ কয়েকটি সর্বভারতীয় ও তামিলনাড়ুর স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের সংবাদ প্রতিবেদন বের হয়। সেই প্রতিবেদনগুলি অনুযায়ী ওই ভিডিও তামিলনাড়ুর (Tamil Nadu) ভিলুপুরম (Viluppuram) জেলার। বিস্ফোরণের ঘটনাটি ঘটে, প্রায় এক মাস আগে। আরও বলা হয়েছে, একজন নয়, স্কুটারটিতে আরোহী ছিলেন দুইজন - বাবা এবং ছেলে। ঘটনায় দুজনেরই মৃত্যু হয়। তবে, স্কুটারটি বিস্ফোরিত হয়নি, বিস্ফোরণ ঘটেছিল তাদের সঙ্গে থাকা আতশবাজিতে।
কী ঘটেছিল ঘটনাটি? সংবাদ প্রতিবেদন অনুসারে, বাবা-ছেলের এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছিল চলতি বছরের ৪ নভেম্বর, অর্থাৎ দীপাবলির দিন সকালে। বাবা, কালাইনেসানের বয়স ছিল ৩৫, ছেলে প্রদেশ, মাত্র ৭ বছরের। পুদুচেরি থেকে আতশবাজি কিনে, ছেলেকে নিয়ে স্কুটারে করে ভিলুপুরম জেলায় শ্বশুড়বাড়িতে দীপাবলি উদযাপন করতে যাচ্ছিলেন কালাইনেসান। মাঝপথে তামিলনাড়ু-পুদুচেরি সীমান্তের কাছে এক জায়গায়, ওই দেশি বাজিতে বিস্ফোরণ ঘটেছিল। বাবা-ছেলের মৃত্যুর পাশাপাশি পথচলতি আরও বেশ কয়েকজন ওই বিস্ফোরণে আহত হন।
দেখে নিন আসল ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ -
ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ সোশ্যাল মিডিয়াতেও ভাইরাল হয়েছিল। সেই ভিডিওও পেয়েছে এশিয়ানেট নিউজ বাংলা। এনডিটিভির সেই সময়ের এক প্রতিবেদনে, তদন্তকারীদের উদ্ধৃত করে বলা হয়েছিল, ওই ব্যক্তির স্কুটারের সামনের অংশে বাজি গুলি দুটি বান্ডিলে শক্ত করে বেঁধেছিলেন। শিশুটি বলেছিল তার উপর। তদন্তকারীদের অনুমান, ঘর্ষণ এবং চাপের কারণে বাজিতে বিস্ফোরণ ঘটে। কোথাও উল্লেখ করা হয়নি স্কুটারটি ইলেকট্রিক স্কুটার ছিল এবং তার ব্যাটারিতে বিস্ফোরণ ঘটেছিল।
সুতরাং, ভাইরাল ভিডিওটিতে যে বিস্ফোরণ ঘটতে দেখা যাচ্ছে সেটি ব্যাটারি চালিত স্কুটারে ঘটেনি। স্কুটারটি ব্যাটারি চালিতও ছিল না। বিস্ফোরণ ঘটেছিল, স্কুটারে রাখা আতশবাজিতে। কাজেই ভাইরাল পোস্টে করা দাবিটি ভ্রান্ত, ভুয়ো। ইলেক্ট্রিক স্কুটারের ব্যাটারিতে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে, এমন ভয় পাওয়ার মতো কোনও ঘটনা ঘটেনি।