সুরজিৎ সেনগুপ্তের প্রয়াণে (Footballer Surajit Sengupta Passes Away) ভেঙে পড়লেন প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় (Prasun Banerjee)। একসময় এক স্কুটারে করে এসে দুই বন্ধুর একজন যেতেন মোহনবাগান (Mohun Bagan) তাঁবুতে, আরেকজন ইস্টবেঙ্গলে (East Bengal)।
'আমরা ছিলাম দুই ভাই। আমাকে ও গোপাল বলে ডাকত। ভাবতেই পারছি না ও নেই।' ময়দান অন্ধকার করে চলে গিয়েছেন সুরজিৎ সেনগুপ্ত (Footballer Surajit Sengupta Passes Away), খবর পেয়ে এই কথা বলতে বলতেই গলা ধরে এসেছিল প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Prasun Banerjee)। তৃণমূল কংগ্রেসের (TMC) হয়ে নির্বাচনী প্রচারের জন্য গোয়ায় (Goa) ছিলেন তিনি। সেই সময়ই করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন সুরজিৎ। পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়ের (PK Banerjee) পারলৌকিক ক্রিয়াকর্মের সময় দেখা হয়েছিল তাঁদের দুজনের। আর দেখা হয়নি, হবেও না। বন্ধুর প্রাণহীন মুখটা তিনি দেখতে পারবেন না, এমনটাই বলেছেন প্রসূন।
এদিন সুরজিৎ সেনগুপ্তের প্রয়াণের পর প্রসূন জানিয়েছেন, গোয়া থেকে বন্ধুর অসুস্থতার খবর পেয়ে তিনি রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের (Arup Bishwas) কাছ থেকে খবর নিয়েছিলেন। অরূপ তাঁকে জানিয়েছিলেন ভালই আছেন সুরজিৎ সেনগুপ্ত। আরও অনেকেই বলেছেন, ধীরে ধীরে সুস্থ হচ্ছেন। তারপর, এদিন তাঁর মাত্র ৭০ বছর বয়সে চলে যাওয়াটা, মেনে নিতে পারছেন না প্রসূন। তাঁর আক্ষেপ, 'এত কম বয়সে যদি সুরজিতের মতো ফুটবলার, তাঁর মতো মানুষকে চলে যেতে হয়, তবে আমরা কী চিকিৎসা শিখলাম'?
সুরজিতের প্রয়াণে প্রসূন বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের মনে পড়ে গিয়েছে ১৯৭৮ সালের কথা। ১৯৭৪ সালে, যে বছর মোহনবাগান (Mohun Bagan) ছেড়ে ইস্টবেঙ্গলে (East Bengal) পাড়ি দিয়েছিলেন সুরজিৎ, সেই বছরই সবুজ মেরুন জার্সিতে খেলা শুরু করেছিলেন প্রসূন। তার ৪ বছর পর, ১৯৭৮ সালে প্রসূন বন্দ্যোপাধ্য়ায় হয়েছিলেন মোহনবাগান অধিনায়ক, সুরজিৎ সেনগুপ্ত ইস্টবেঙ্গলের। দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দলের অধিনায়ক হয়েও কিন্তু তাঁদের বন্ধুত্বে চিড় ধরেনি। প্রসূন জানিয়েছেন, একই স্কুটারে করে ময়দানে আসতেন দুজনে। তারপর একজন যেতেন সবুজ-মেরুন তাঁবুতে, আরেকজন লাল-হলুদে।
প্রসূনের মতে সুরজিৎ সেনগুপ্তর প্রকৃত মূল্যায়ন হয়নি। ভারতে ফুটবলাররা তাঁদের প্রাপ্য সম্মান পান না। নাহলে সুরজিৎ যে মাপের ফুটবলার ছিলেন, তাঁর অনেক কিছু পাওয়ার ছিল। ফুটবলার সুরজিতের কথা বলতে গিয়ে তাঁর মনে পড়েছে কোরিয়াতে (South Korea) প্রেসিডেন্টস কাপ খেলতে যাওয়ার কথা। শুরুতেই আউটসাইড ডজ করে একটি বিশ্বমানের গোল করেছিলেন সুরজিৎ সেনগুপ্ত। একসঙ্গে বাংলা কিংবা ভারতের হয়ে খেলার সময়, সুরজিৎ সবসময়ই প্রসূনকে গোপাল বলেই সম্বোধন করতেন।
শুধু বড় ফুটবলার নয়, প্রসূন বন্দ্যোপাধ্য়ায় উল্লেখ করেছেন সুরজিৎ সেনগুপ্তের বিরাট মনেরও, তাঁর মানুষকে ভালবাসার অফুরান ক্ষমতার। প্রসূন বলেছেন, মানুষের জন্য কাজ করতে সবসময় এগিয়ে আসতেন তাঁর বন্ধু। কেউ সমস্যায় পড়লেই বাড়িয়ে দিতেন সাহায্যের হাত। এমনকী, প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথমবার সাংসদ হওয়ার পর, সুরজিৎ ফোন করে তাঁকে বলেছিলেন, 'গোপালবাবু, এমপি হয়েছ। এবার ভাল করে কাজ করতে হবে, সবাইকে নিয়ে করতে হবে। আমি একদিন যাব।' একই সঙ্গে তাঁর মনে পড়ে গিয়েছে বন্ধুর চমৎকার গান গাওয়ার দক্ষতার কথাও।