রাগ কমাতে চান, এই ব্যায়ামগুলি করলে মন থাকবে ফুরফুরে
শরীরের যে কোনও রোগ নিরাময় করতে সাহায্য করে ব্যায়াম। এর জুরি মেলা ভার। এমনকী, শরীরের পাশাপাশি মানসিকভাবেও আপনাকে ভালো থাকতে সাহায্য করে ব্যায়াম। নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে মন ও শরীর দুটোই ফুরফুরে থাকে। তবে অনেকেই হয়তো জানেন না যে এই ব্যায়ামের মাধ্যমে অনেক সময় রাগকেও কমিয়ে ফেলা যায় সম্ভব হয়। ব্যায়ামের মাধ্যমে রাগকেও বশ করতে পারবেন আপনি। কীভাবে করবেন তা দেখে নিন।
রাগ করেন না এমন মানুষ পৃথিবীতে পাওয়া খুবই কঠিন। রাগ সবার মধ্যেই দেখা যায়। পার্থক্য একটাই কারও রাগ একটু বেশি আর কারও একটু কম। অনেকে আবার কথায় কথায় রেগে যান। যে কোনও ছোটোখাটো বিষয়কেও বড় করে দেখেন তাঁরা। আর এইভাবে রাগ করে আখেরে নিজের ক্ষতি করে ফেলেন কেউ কেউ। অতিরিক্ত রাগের কারণে অনেক সময় মৃত্যুও পর্যন্ত হতে পারে। তাই রাগকে নিজের বশে রাখার জন্য ব্যায়াম খুবই প্রয়োজনীয়।
সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরই ব্যায়াম করতে পারেন। কারণ সকালে একটা দিনের শুরু হয়। আর সেই সময় ব্যায়াম করলে আপনার মনও পজিটিভ এনার্জিতে ভরে উঠবে। ব্যায়াম করার পর দিনের যাবতীয় কাজ শুরু করুন। এতে ক্লান্তিও খুব লাগবে। তবে যদি সকালে সময় না পান তাহলে বিকেলে করতে পারেন। তবে অবশ্যই ভর্তি পেটে একেবারেই ব্যায়াম করবেন না।
তবে ধরুন অফিসে বসের উপর খুব রাগ হয়েছে। কি করবেন কিছুই ভেবে পাচ্ছেন না। চাকরি ছেড়ে দিতে ইচ্ছে করছে। সেই সময় বাথরুমে যান। এরপর জোরে জোরে শ্বাস নিন। রাগ কমানোর জন্য এটা খুব কার্যকরী একটি ব্যায়াম। এর কোনও তুলনাই হয় না। এই ব্যায়াম করার জন্য একটা শান্ত জায়গায় বসুন। একটা হাত রাখুন আপনার পেটের উপর, তারপর চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস নিন। আর শ্বাস নেওয়াটা অনুভব করুন। শ্বাস ছাড়ার সময় ধীরে ধীরে ছাড়ুন। দেখবেন মন শান্ত হবেই। তেমন হলে অফিস থেকে বেরিয়ে কাছে কোথাও গিয়ে এই কাজ করতে পারেন।
রাগ খুব বেশি হলে শুয়ে পড়ুন। এরপর চোখ বন্ধ করে পুরো শরীর টানটান করে ধরে রাখুন কিছুক্ষণ তারপর ছেড়ে দিন। এরপর পা দুটি একসঙ্গে একবার টান করে রাখুন আবার ছেড়ে দিন। এভাবে বেশ কিছুক্ষণ করুন। তার সঙ্গে শ্বাস নিতে ভুলবেন না। আর সেই সময় নিজের শরীর আর মনের উপর ফোকাস করুন। দেখবেন রাগ যে কখন গলে জল হয়ে গিয়েছে তা টেরই পাবেন না।
স্কুল পাশ করার পর থেকে আর কখনও স্কিপিং করেননি। তবে জানেন কি আপনার রাগ কমাতে সাহায্য করবে স্কিপিং। রোগ সকালে উঠে স্কিপিং করুন। এটা খুব বেশি সময় লাগে না। তাই স্কিপিং করে দিন করুন। এতে দেখবেন আপনার শরীরের সঙ্গে মনও ফুরফুরে থাকবে। তবে স্কিপিং করতে যদি কোনও সমস্যা হয় তাহলে ট্রেডমিল, সাইকেল চালানো বা জগিং করতে পারেন। তাহলেও মন ভালো থাকবে।
বক্সিং রাগ কমানোর খুব ভালো একটা ব্যায়াম। তেমন হলে আপনার ঘরের মধ্যে একটা পাঞ্চিং ব্যাগ ঝুলিয়ে রাখুন। যখনই রাগ হবে তখনই বক্সিং গ্লাভস পরে তাতে পাঞ্চ করুন। দেখবেন আপনার রাগও ওই পাঞ্চের মাধ্যমে ধীরে ধীরে গলে যাবে।
খুব রাগ হলে জোরে জোরে হাঁটতে পারেন। ধরুন আপনার খুব রাগ হয়েছে। কিন্তু, অফিস থেকে বের হওয়া এই মুহূর্তে সম্ভব নয়। তেমন হলে বাথরুমে গিয়ে বেশ কিছুক্ষণ জোরে হাঁটুন। যদি কেউ কিছু বলে গুরুত্ব দেবেন না। এতে দেখবেন ধীরে ধীরে আপনার মন শান্ত হয়ে যাবে। আর রাগও থাকবে না। আসলে হাঁটার ফলে আমাদের শরীরের স্ট্রেস হরমোনের নিঃসরণ কম হয়। যা মনকে শান্ত রাখতে সাহায্য করে।
যদি মনে হয় যে ছোটোখাটো বিষয়তে রেগে যাচ্ছেন তাহলে কোনও একটা খেলায় যোগ দিন। এমন খেলা যেখানে একটা গ্রুপের সঙ্গে আপনাকে খেলতে হবে। তার মধ্যে ক্রিকেট, ভলিবল, বাস্কেটবল, বেসবল অন্যতম। এই খেলাগুলিতে আপনাকে সবাইকে নিয়ে চলতে হবে। ফলে আপনার মনে মিলিয়ে মিশিয়ে চলার ক্ষমতাও বেড়ে যাবে। এমনকী, বাড়বে সহ্য ক্ষমতাও। তখন আর ছোটো বিষয় রাগ করবেন না আপনি।
ব্যায়াম আপনার মন, শরীর এবং আত্মাকে শুদ্ধ করে। মনকে শান্ত রাখতে সাহায্য করে। আর মন যদি শান্ত থাকে তাহলে রাগ অনেকটাই আপনার বশে চলে আসবে। তখন ছোটোখাটো সমস্যাগুলিকে তুচ্ছ বলে মনে হবে। এছাড়া মন যদি একবার শান্ত হয় তাহলে সমস্যা যত বড়ই হোক না কেন আপনি মাথা ঠান্ডা করে ঠিক তার মধ্যে থেকে সমাধান খুঁজে বেরিয়ে আসতে পারবেন।
আর খুব কাছের মানুষের উপর যদি রাগ হয়ে তাহলে তা মনের মধ্যে না রেখে উগরে দিন। আপনার খারাপ লাগার কথা তাকে জানান। প্রয়োজনে তার সঙ্গে ঝগড়া করুন। দেখবেন রাগ ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে গিয়েছে।