জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির কাছে সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ থেকে শুরু হয়ে কলুটোলা, বউবাজার, চাঁদনি চক, ডোরিনা ক্রসিং, রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ হয়ে রেডরোড পৌঁছয় ইউনেস্কোর প্রতি ধন্যবাদজ্ঞাপনের পদযাত্রা। আর তার জেরেই শহরে পুজোর আগেই পুজোর আমেজ।
ইউনেস্কোর ‘ইনট্যাঞ্জিবল কালচারাল হেরিটেজ অব হিউম্যানিটি’র তালিকায় ওঠায়, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে সারা রাজ্য জুড়ে করা হল মহামিছিল। মুখ্যমন্ত্রীর কথা ধরে কার্যত বৃহস্পতিবার থেকেই পুজো শুরু হল শহরে।
একাধিক সংবর্ধনায় ভূষিত করা হল UNESCO-র প্রতিনিধিদের। এদিন মোহনবাগান এবং ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের প্রতিনিধিরাও সম্বর্ধনা জানান UNESCO-র প্রতিনিধিদের। এদিন মুখ্যমন্ত্রী একটি দুর্গা মূর্তি তুলে দিলেন UNESCO-র প্রতিনিধিদের হাতে সঙ্গে দিলেন কবিগুরু'র লেখা বই।
এদিন দ্রুত পায়ে পথ হাঁটতে হাঁটতে এক জায়গায় থমকে যান মমতা। তাঁর নজর কাড়ে মহম্মদ আলি পার্কের জ্যান্ত দুর্গা। এক মহিলা দুর্গার বেশে অভিবাদন জানাতে হাজির ছিলেন রাস্তার ধারে। তাঁকে দেখে থমকে যান মমতা। হাত নেড়ে প্রতি অভিবাদন জানান তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর সৌজন্যে সবাই মুগ্ধ।
এদিন, ইউনেস্কোর প্রতিনিধি, বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়-সহ বিশিষ্ট জনেদের নিয়ে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন হয় রেড রোডে। ঢাকের বোলে, শঙ্খধ্বনিতে, ছৌ ও মুখোশ নাচে মেতে ওঠেন সকলে।
বাংলার দুর্গাপুজোকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেস্কোর। সেই জন্য ধন্যবাদ জানান ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি সংস্থার প্রতিনিধিদের তিনি এই রাজ্য, বিশেষ করে কলকাতার পুজো মণ্ডপগুলি ঘুরে দেখার আহ্বান জানান। পাশাপাশি অসম ও ত্রিপুরার দুর্গাপুজোর কথাও তুলে ধরেন মমতা।
এদিন শোভাযাত্রা শুরু হয় চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউতে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির সামনে থেকে। দুপুর ২টো নাগাদ জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির কাছে সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ থেকে শুরু হয়ে কলুটোলা, বউবাজার, চাঁদনি চক, ডোরিনা ক্রসিং, রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ হয়ে পদযাত্রা পৌঁছয় রেড রোডে।
শহরের বেশ কয়েকটি পুজো কমিটি নানা থিমের সুজজ্জিত রেপ্লিকা প্রতিমা নিয়ে আসেন। নানা রং, বৈচিত্রের দেখা মেলে মিছিলে। কোথাও রঙিন মুখোশ, কোথাও ফানুশ, কোথাও আবার লাল পাড় সাদা শাড়িতে শঙ্খ হাতে মহিলাদের ঢল নামে। সব মিলিয়ে উৎসবের নানা রঙে মেতে ওঠে শহর কলকাতা।
এদিনের অনুষ্ঠানে ইউনেস্কোর প্রতিনিধিদের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন বিবিসিআই-এর সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। আর ছিলেন কলকাতার সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোশ্যাল সায়েন্সের অধিকর্তা তপতী গুহ ঠাকুরতা। তাঁকেই বিশেষ সম্মান প্রদান করেন মুখ্যমন্ত্রী। কার্যত তাঁর উদ্যোগেই এই সম্মান পেয়েছে বাংলার দুর্গাপুজো।
গত বছরের ডিসেম্বরে প্যারিসে আন্তঃসরকার কমিটির ১৬ তম অধিবেশনে 'কলকাতা দুর্গা পূজা' আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত হয়েছিল। আর এই স্বীকৃতিকে রাষ্ট্রীয় হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চান বাংলায় পর্যটনের ব্যবসা বাড়ুক।
বিশ্বের পাঁচটি দেশের কার্নিভাল ইতিমধ্যেই বিশ্ব বিখ্যাত। ঐতিহ্যের খেতাব পাওয়ার পর এই দুর্গাপূজা কার্নিভালে পর্যটনের একই ঢেউ আসুক, এই বিষয়ে আশাবাদী মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী।