সেনাপ্রধান থেকে রাষ্ট্রপতি, তারপর মৃত্যুদণ্ড, মুশারফের মতো বর্ণময় রাজনীতিক পাওয়া কঠিন
দেশদ্রোহের দায়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হল পাকিস্তানের প্রাক্তন সেনাপ্রধান তথা প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি পারভেজ মুশারফকে। ১৯৯৯ সালে সেনা অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা দখল করেছিলেন তিনি। তারপরের নয় বছর তিনিই ছিলেন শাসনে। তাঁর আমলে মুক্ত অর্থনৈতিক নীতিতে পাকিস্তানের অর্থনীতি দারুণ সম্বৃদ্ধ হয়েছিল। ৭৬ বছরের প্রাক্তন পাক প্রেসিডেন্টের জীবন কিন্তু বিভিন্ন উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে গিয়েছে। একনজরে দেখে নেওয়া যাক তাঁর বর্ণময় জীবনের নানা রঙ -
দিল্লি থেকে করাচি - পারভেজ মুশারফের জন্ম হয়েছিল ১৯৪৩ সালে ব্রিটিশ ভারতের দিল্লি-তে। দেশভাগের পরপরি তাঁর পরিবার দিল্লি থেকে গিয়ে আশ্রয় নেয় পাকিস্তানের করাচি শহরে। তাঁর বাবা ছিলেন একজন কুটনীতিক।
তরতরিয়ে উত্থান - ১৯৬৪ সালে পাক সেনাবাহিনীর অফিসার কর্পস-এ যোগ দেন তিনি। ১৯৬৫ ও ১৯৭১ - ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের দুটি যুদ্ধে তিনি সক্রিয় অংশ নিয়েছিলেন। সেনাবাহিনীতে মসৃণভাবে উত্থান ঘটে তাঁর। ১৯৯৮ সালে তৎকালীন পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ তাঁকে পাক সেনা প্রধান হিসেবে নিযুক্ত করেন।
সেনাপ্রধান থেকে রাষ্ট্রপতি - ১৯৯৯ সালে শরিফের সঙ্গে মুশারফের সুসম্পর্কে ফাটল ধরে। শরিফ সেনাপ্রধান পদ থেকে মুশারফ-কে সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু, মুশারফ সেনাকে কাজে লাগিয়ে যাবতীয় সরকারি প্রতিষ্ঠান দখল করে জরুরী অবস্থা জারি করেন। নিজেকে পাকিস্তানের চিফ এক্সিকিউটিভ বা বকলমে রাষ্ট্রপতির পদে বসান তিনি।
হয় তুমি আমাদের সঙ্গে, নইলে বিরুদ্ধে - ২০০১ সালে আফগানিস্তানে নার্কিন বাহিনীর আল কায়দা বিরোধী অভিযানে তিনি আমেরিকার পক্ষ নেন। জানিয়েছিলেন মার্কিন স্টেট সেক্রেটারি কলিন পাওয়েল তাঁকে ফোন করে বলেছিলেন 'হয় তুমি আমাদের সঙ্গে, নইলে বিরুদ্ধে'। এরপরি আফগান তালিবানদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে তিনি পাক মাটি খুলে দিয়েছিলেন মার্কিন ও নেটো বাহিনীর জন্য।
নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি - ২০০২ সালে তিনি দেশে সাধারণ নির্বাচন আয়োজন করেন। পিএমএল-কিউ নামে রাজনৈতিক দল গঠন করে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ভোটে দাঁড়ান তিনি। ভোট কতটা সঠিকভাবে হয়েছিল তাই নিয়ে সন্দেহ থাকলেও তাঁর দল বিপুল সাফল্য পায়।
দেশদ্রোহ, স্বেচ্ছাবসর, মৃত্যুদণ্ড - ২০০৭ সালে মুশারফ গদি বাঁচানোর জন্য পাকিস্তানে দ্বিতীয়বার জরুরি অবস্থা জারি করেন। যে কারণে তাঁর বিরুদ্ধে দেশদ্রোহের অভিযোগ ওঠে। প্রথমেই তিনি পাক সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ইফতিকার মহম্মদ চৌধরি-কে পদ থেকে সরান। তারপর সংবিধান বাতিল করে একের পর এক রাজনৈতিক নেতাদের আটক করেছিলেন। ২০০৮ সালে পিপিপি দলের সঙ্গে যৌথভাবে নির্বাচনে সাফল্য পেলেও, রাষ্ট্রপতির পদ থেকে বহিষ্কৃত হন। এরপর নতুন রাজনৈতিক দল গড়লেও পর পর দুটি সাধারণ নির্বাচনে ভরাডুবি হয় তাঁর দলের। ২০১৩ সালে নওয়াজ শরিফ ক্ষমতায় ফিরেই তাঁর বিরুদ্ধে দেশদ্রোহের মামলা শুরু করেছিলেন। ২০১৬ সালে রাজনৈতিক ভবিষ্যত আর কিছু অবশিষ্ট নেই বুঝে তিনি দুবাই-এ স্বেচ্ছা নির্বাসনে যান। এখন সেখানেই পাকাপাকি ভাবে থাকেন।