পরিবেশ নিয়ে সচেতনতার বার্তা দিয়ে আসছেন সত্যেন দাস। পেশায় রিকসা চালক। আর সেই রিকসা নিয়ে তিনি একের পর এক দূরত্ব অবিশ্বাস্যভাবে অতিক্রম করে গিয়েছেন। রিকসা নিয়ে কোনও দিন দার্জিলিং-এ যাননি, এবার সেই স্বপ্ন পূরণ করতে অভিযান শুরু করছেন তিনি।
কতটা পথ পেরলো পথিক হওয়া যায়! এ এক গভীর জিজ্ঞাসা। যে জিজ্ঞাসা বব ডিলানের তৈরি করা আওয়াজ থেকে বেরিয়ে বাংলার বুকে কবীর সুমনের তৈরি করা সুরেও কথিত হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে যারা এইভাবে পথে পথে বেরিয়ে পথিক হিসাবে নিজেকে সমার্থক করে তোলেন তাঁদের গল্প কয় জন জানেন! এমন এক পথিক সত্যেন দাস। পেশায় রিকসা চালক। কিন্তু ছোট্ট রিকসাটা নিয়েও যে পথিক বনে যাওয়া যায় তা আজ প্রমাণ করে দিয়েছেন সত্যেন। সমাজের আর্থিকভাবে পিছিয়ে থাকা মানুষও যে তাঁর অদম্য ইচ্ছাশক্তিকে এক অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলতে পারে তা তিনি বিশ্বের সামনে উদাহরণ হিসাবে খাড়া করে দিয়েছেন। আর এহেন সত্যেন এবার পাড়ি জমাচ্ছেন দার্জিলিং-এর উদ্দেশে। সঙ্গী সেই রিকসা। ছোট্ট এই ত্রিচক্রযানের প্যাডেলে পা ঘোরাতে ঘোরাতেই তিনি পৌঁছবেন টাইগার হিলে। যাতায়াত মিলে ৩০ দিনের যাত্রার আপাতত হিসাব দিয়েছেন সত্যেন। শনিবার নাকতলা গীতাজ্ঞলি মেট্রো স্টেশনের রিকসাস্ট্যান্ড থেকে অভিযান শুরু হবে সত্যেন দাসের।
কলকাতার এক ছোট্ট শহরতলির ভেঙে যাওয়া ছাদের ফাঁক দিয়ে যখন চাঁদটা উঁকি মারতো তখন যেন এক মনবাউলে ভর করত সত্যেন। মনের কোণায় খেলে বেড়াত স্বপ্ন। আর এক লক্ষে পৌঁছানোর এক তিতিক্ষা। সামাজিক বাধা, আর্থিক দৈন্যতা কোনও কিছুতেই বাঁধ মানতো না মন। আর এভাবেই একদিন মন ফকিরা হয়ে তিনি সাইকেল নিয়ে চলে গিয়েছিলেন দার্জিলিং-এ। কলকাতা থেকে যাত্রা শুরু করে ৫ দিনে পৌঁছেছিলেন কার্শিয়াং। সালটা ছিল ১৯৯১। সত্যেন তখন এক দামাল তরুণ।
সত্যেনের যাত্রা শুরু হচ্ছে ১১ জুন। প্রথম দিনে দমদমে রাত্রিবাস। এরপরের দিন আস্তে আস্তে এগোবে তাঁর রিকসা। ১৫ দিনের মধ্যে দার্জিলিং-এ পৌঁছানোর লক্ষমাত্রা নিয়েছেন তিনি। এবারের অভিযানেও পরিবেশ রক্ষা এবং বিশ্ব উষ্ণায়ণের বার্তা দেবেন সত্যেন। তাঁর মতে যেভাবে উষ্ণায়ণের মাত্রা বাড়ছে তাতে আরও সঙ্কটে পড়তে চলেছে পৃথিবী। এই পৃথিবীকে বাঁচাতে হলে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। বৃক্ষ নিধন বন্ধ হতে হবে। মানুষ যাতে আরও বেশি করে বৃক্ষ রোপণে আগ্রহী হয় তার জন্য সচেতনতা তৈরি করতে হবে।
২০২১ সালের অগাস্টে রিকসা চালিয়ে সিয়াচেনে গিয়েছিলেন সত্যেন দাস। প্রকৃতি বাঁচাতে এবং উষ্ণায়ণ নিয়ে সচেতনতার বার্তা দিতে এই অভিযান করেছিলেন। অগাস্ট মাসে যাত্রা শুরু করে অক্টোবর মাসের শেষে সিয়াচেনে সেনাবাহিনীর বেস ক্যাম্পে পৌঁছেছিলেন সত্যেন। সেখান থেকে আবার রিকসা চালিয়ে ডিসেম্বরের শেষে বাড়ি ফিরেছিলেন তিনি। মাঝে কয়েক মাসের বিশ্রাম এরপর ফের অভিযানে নেমে পড়লেন।
রিকসা চালিয়েই অবিশ্বাস্য সব নজির ছুঁয়েছেন সত্যেন। রিকসায় বউ-বাচ্চাকে চাপিয়ে একটা সময় পুরী গিয়েছিলেন। রিকসা চালিয়েই গিয়েছেন লাদাখ, কাশ্মীর। রিকসা চালিয়েই অতিক্রম করেছেম জোজিলা পাস। এমনকী রাতের অন্ধকারে রিকসা চালাতে গিয়ে জোজিলা পাসের কাছে প্যান্থারের মুখেও পড়েছিলেন। কিন্তু, ভয় পেয়ে থেমে যাননি সত্যেন। তিনি মনে করেন, একজন সাহসী ও ভালো মানুষ এবং সমাজের হিতে কাজ করা মানুষ কখনও শুধুমাত্র পড়াশোনা বা অর্থবল দিয়ে মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেতে পারে না। সব শ্রেণির মানুষই পারে অসম্ভবকে সম্ভব করতে। শুধু এই অবিশ্বাস্যকে বাস্তবায়িত করার মতো জোর মনের মধ্যে থাকা চাই।
আরও পড়ুন- এক পায়ে লাফিয়েই ১ কিলোমিটার দূরের স্কুলে যায় সীমা, বিহার কন্যার ভিডিও অনুপ্রেরণার এক নয়া দিশা
আরও পড়ুন- কন্যাশ্রী ও সবুজসাথীর জন্য কৃতজ্ঞতা, সাইকেলে চেপে মমতার বাড়িতে মালদহের সায়ন্তিকা
আরও পড়ুন- মাধ্যমিকে দ্বিতীয় এবং মেয়েদের মধ্যে প্রথম স্থান পেলেন মালদার কৌশিকী