সন্দীপ মজুমদার, হাওড়াঃ শ্বশুরবাড়ির লোকেরা লুকিয়ে নাবালিকা মেয়ের বিয়ে দিচ্ছে বলে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দায়ের করার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই বয়ান পাল্টে ফেললেন এক নাবালিকার বাবা। এদিকে পূর্ব মেদিনীপুরের কোলাঘাটের বাসিন্দা ওই ব্যক্তির অভিযোগের ভিত্তিতে হাওড়া জেলা সমাজ কল্যাণ আধিকারিক থেকে শুরু করে জেলা প্রশাসনের কর্তারা ওই নাবালিকার বিয়ে রুখতে শনি ও রবিবার দু'দিন ধরে বিস্তর ছোটাছুটি করলেন।
ঘটনাটি ঘটেছে বাগনান থানার কল্যাণপুর সিঁদরিপাড়ায়। বাগনান-১ বিডিও সত্যজিৎ বিশ্বাস জানান,শনিবার কোলাঘাটের বাসিন্দা এক ব্যক্তি প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন যে, বাগনানের কল্যাণপুরে তাঁর শ্বশুরবাড়িতে তাঁর ১৭ বছরের নাবালিকা মেয়ে থাকে। শ্বশুরবাড়ির লোকেরা তাঁকে কিছু না জানিয়ে তাঁর কন্যার বিয়ের ব্যবস্থা করেছে। হাওড়া জেলা সমাজ কল্যাণ আধিকারিক বিষয়টি জানতে পেরে সত্যজিৎবাবুকে জানান।
সেইমতো শনিবারই পুলিশ ও ব্লকের আধিকারিকরা কল্যাণপুরে ওই নাবালিকার মামার বাড়িতে গিয়ে এই বিয়ে বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। তখন পাত্রীপক্ষ বিয়ে বন্ধ রাখার লিখিত প্রতিশ্রুতিও দেয়। তবুও বিডিও সত্যজিৎবাবু এলাকার অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের ওই পরিবারের উপরে নজর রাখতে বলেন। রবিবার সকালে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন যে পূর্ব মেদিনীপুরের নিমতৌড়ি থেকে তিনটি গাড়িতে করে বর পক্ষের লোকেরা ওই নাবালিকার মামার বাড়িতে এসেছেন। সত্যজিৎবাবু তৎক্ষনাৎ বাগনান থানার পুলিশ সহ তাঁর ব্লকের কন্যাশ্রী আধিকারিক সাহাবুল মুন্সিকে ঘটনাস্থলে পাঠান।
খবর পেয়ে হাওড়া চাইল্ড লাইনের কর্মীরাও ঘটনাস্থলে পৌঁছান। পুলিশ পাত্র ও পাত্রী উভয় পক্ষকেই থানায় নিয়ে এলে পাত্রপক্ষ জানায় তাঁরা বিয়ে করতে নয়, পাকা দেখার জন্য এসেছেন। অথচ তাঁদের সঙ্গে বিয়ের তত্ত্ব ছিল বলে চাইল্ড লাইনের কর্মীরা জানিয়েছেন। তাঁরা বলেন উভয় পক্ষই বুঝতে পারেনি যে বিষয়টা এতোটা দূর পর্যন্ত গড়াবে। তাঁরা ভেবেছিলেন প্রশাসনের কাছে মুচলেকা দিয়ে দেওয়ার পর প্রশাসন এই বিষয়ে আর নাক গলাবে না। তাই চুপিচুপি বিয়ের আয়োজন করা হয়েছিল। চাইল্ড লাইনের কর্মীদের দাবি অস্বীকার করে আগের অভিযোগ থেকে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে ওই নাবালিকার বাবা জানান বিষয়টা বুঝতে তাঁরই ভুল হয়েছিল। এখানে কোনও বিয়ের আয়োজন করা হয়নি। এই ভুল তথ্য দেওয়ার জন্য তিনি ক্ষমা প্রার্থী। মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে অভিযোগকারী তাঁর বয়ান সম্পূর্ণ পাল্টে ফেলায় স্বভাবতই হতবাক প্রশাসনিক কর্তারা।