স্পাইনাল মাসকিউলার অ্যাট্রোফি নামে এক বিরল স্নায়বিক রোগ
সেই জিনগত রোগেই ভুগছিল দেড় বছরের শিশুটি
সাহায্যের আবেদন করেছিল একই রোগে আক্রান্ত দিদি
এশিয়ানেট নিউজের খবরের জেরে দুদিনে ঘটে গেল মিরাকল
কেরলের কান্নুর জেলার ছোট্ট গ্রাম মত্তুল। সেই প্রান্তিক গ্রামেই এক বিরল জেনেটিক রোগে ভুগছিল দেড় বছরের ছোট্ট শিশু মহম্মদ। তীব্র ব্যথা তার নিত্যসঙ্গী। তার চিকিৎসার একটি ওষুধ ছিল, তবে তা সেই দরিদ্র পরিবারের ধরা-ছোঁওয়ার বাইরে ছিল। সেই শিশুটির শারীরিক অবস্থার কথা জানিয়ে খবর করেছিল এশিয়ানেট নিউজ। আর সেই খবরের জেরে, মাত্র ২ দিনে মিরাকল ঘটালো কেরলবাসী!
এশিয়ানেট নিউজের প্রতিনিধিকে মহম্মদের বাবা রফিক জানিয়েছিলেন, তাঁর ছেলে 'স্পাইনাল মাসকিউলার অ্যাট্রোফি' নামে এক বিরল স্নায়বিক রোগে ভুগছে। এই জিনগত রোগে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র, পারিপার্শ্বিক স্নায়ুতন্ত্র এবং স্বেচ্ছাসেবী পেশী আন্দোলন (করোটির পেশী) ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে যে অসহ্য ব্যথা হয়, তা সহ্য করা দেড় বছরের শিশুটির খুবই কষ্টের। তাই, প্রায় সবসময়ই চিৎকার করে কাঁদতে থাকে মহম্মদ।
জানা গিয়েছিল, যন্ত্রণার উপসম হতে পারে একমাত্র জোলজেনস্মা নামে একটি ওষুধে। এটাই মহম্মদের ব্যাধিটির জন্য সবচেয়ে কার্যকর ওষুধ। তবে একে রোগটি বিরল। তার উপর এই ওষুধটি এই রোগের একমাত্র ওষুধ। তাই, এর বাজারদর অনেকটাই বেশি, প্রায় ১৮ কোটি টাকা। যা, রফিকদের মতো গ্রামীণ, অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকা পরিবারের পক্ষে কেনা সম্ভব ছিল না। তাই, সন্তান কাঁদতে থাকলে তাকে লজেন্স দিয়ে ভোলানোর চেষ্টা করতেন রফিক। কিন্তু তাতে তো আর ব্যথা কমে না।
মহম্মদের অবশ্য এক দিদিও রয়েছে, আফ্রা। তার বয়স এখন ১৪। আর একেবারে ছোটর থেকেই সে হুইলচেয়ারে বন্দি। কারণ, সেই একই রোগ। ভাইয়ের মতো দিদিও স্পাইনাল মাসকিউলার অ্যাট্রোফি-তেই আক্রান্ত। অন্যের সাহায্য ছাড়া, সে এমনকী, হুইল চেয়ার ঠেলেও চলাফেরা করতে অক্ষম। এশিয়ানেট নিউজের প্রতিনিধিকে আফ্রা, সজল নয়নে বলেছিল, সে যে রোগে বছরের পর বছর ধরে ভুগছে, তার ভাইও সেই একই ভাবে ভুগুক, তা সে চায় না। সে চায় না তার ভাই-ও তার মতোই কষ্ট পাক। ভাইয়ের জন্য সাহায্যের আবেদন করেছিস সে।
ছোট আফ্রার এই শব্দগুলি এশিযানেট নিউজের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল কেরল জুড়ে। আর সেই ১৪ বছরের অসুস্থ কিশোরীর কাতর আবেদনে সাড়া দিয়ে বন্যার জলের মতো সাহায্য আসতে শুরু করেছিল। প্রথম জিনই ৬ কোটি টাকা উঠেছিল। তার পরের দিন সকালে তহবিল বেড়ে দাঁড়ায় ১৪ কোটি-তে! বাকি চার কোটি টাকা জোগাড় হয়ে যায় ঠিক ৬ ঘন্টার মধ্যে। তাই, মহম্মদের চিকিৎসা করাও সম্ভব হচ্ছে।