পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর ফিরে পাওযার জন্য দুই দেশের মুখোমুখি হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু ভরত একসঙ্গে পাকিস্তান ও চিনের মুখোমুখি হতে সমস্যা অনেক। বাকি দেশগুলির সহযোগিতার প্রশ্নও রয়েছে।
বর্তমানে পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর নিয়ে প্রবল আলোচনা হচ্ছে। দেশের স্বারাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেছেন, পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর ফিরেয়ে আনা হবে। একই সুরে কথা বলছেন দেশের সেনা প্রধানরা। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর কি ফিরিয়ে নেওয়া সম্ভব? এশিয়ানেট নিউজের এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে সেই বিষয়টি নিজের মতামত জানাতের অবসরপ্রাপ্ত এয়ার ভাইস মার্শাল বিকে মুরালি। তিনি এই সম্পর্কে নিজের মতামত আর যুক্তি উপস্থাপন করেছেন।
PoK বা পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের বাস্তবতা
অবসরপ্রাপ্ত এয়ার ভাইস মার্শাল বিকে মুর্তি বলেছেন, তিনি প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বিরোধিতা করছেন না। সরকারের বিরুদ্ধে কোনও অবস্থানও নিচ্ছেন না। কিন্তু পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের সত্যতা জানতে হবে। বর্তমানে PoKকে হিসেবে যে অংশটাকে আমরা চিহ্নিত করি সেটাকে আজাদ হিন্দু কাশ্মীরও বলা হয়। এটি ১৯৪৮ সালে ভারত হারিয়েছিল। এই এলাকা ১৩ হাডার বর্গ কিলোমিটারের বেশি। এর রাজঝানী মুজাফফরবাদ। এই ১৩ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে প্রায় পাঁচ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা ১৯৬৩ সালে পাকিস্তান চিনকে উপহার দিয়েছিল। একে সক্ষম ভ্যালি বা সক্ষম উপত্যকা বলা হয়। এখন আমাদের বুঝতে হবে পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর বলতে কি আগের ১৩ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকাকেই বোঝায়? চিন আর পাকিস্তানের অর্থনৈতিক চুক্তি হয়েছে। যা ট্রান্স কারাকোরাম চুক্তি হিসেবে পরিচিত। আকসাই চিন থেকে ইসলামাবাদ পর্যন্ত হাইওয়ে তৈরি করছে চিন- এই পথেই চিনের বাণিজ্য হয়। তাই পাক অধিকৃত কাশ্মীরের বাস্তবতা নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে।
চিন ও পাকিস্তান উভয়ের কাছ থেকেই কি PoK ফিরিয়ে নেওয়া হবে?
PoK ফিরে পাওয়ার জন্য তাহলে চিন ও পাকিস্তান দুই দেশের মুখোমুখি হতে হবে। তাই আমরা কী এই দুটি দেশের মুখোমুখি হওযার মত যথেষ্ট শক্তিশালী? এই প্রশ্নের উত্তরে প্রাক্তন সেনা কর্তা বলেন, ২০২১ সালের রিপোর্ট অনুসারে চিনে ১১ হাজারের বেশি পিলিসল লিবারেশন আর্মি মোতায়েন রয়েছে PoKতে। ভারতীয় সেনা সেই দিকে অগ্রসর হলেই পাকিস্তানের সেনা বাহিনীর সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হবে। দেশের প্রথম সিডিএস জেনারেল বিপিন রাওয়াতও ২.৫ সাইজের শক্রুর কথা বলেছেন। কথা প্রসঙ্গে তিনি আরও একটি উদাহরণ তুলে ধরেন। বলেন, পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা বাজেট দেশের জিডিপির ৩.৫ শতাংশ। চিনের মোট জিডিপির পাঁচ শতাংশ তাদের প্রতিরক্ষা বাজেট। কিন্তু ভারতের প্রতিরক্ষা বাজেট আমাদের মোট জিডিপির মাত্র এক শতাংশ। আমাদের প্রতিরক্ষা বাজেটের মাত্র ৮ শতাংশ। আর এর বাইরে আমরা কখনই যেতে পারিনি। আমরা সৌন্যদের সুযোগ সুবিধে অস্ত্র, বিমান,দিতে পারব না। তখন যুদ্ধ জয় নিয়েও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, 'এটা শুনতে খুব ভাল লাগে আত্মনির্ভর ভারত। গোটা দেশ আমাদের পাশে রয়েছে। কিন্তু একজন সেন্য যখন যুদ্ধে যায় তার প্রয়োজন অস্ত্র-যন্ত্রপাতি , দর্শন বা জ্ঞান নয়।'
স্বাধীনতার ৭৫ বছর ও PoK
বিকে মুরলিকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল স্বাধীনতার ৬৫ বছর পরেও PoK অধরা ভারতের। এর কারণ কী? আগামী দিনে এর সম্ভাবনা কতটা? এই প্রশ্নের উত্তরে বিকে মুরালি বলেছিলেন, যে আপনি ঠিক বলেছেন। তবি আমি যতদূর বিশ্বাস করি আমরা ১৯৪৮ সালেই PoK ফিরিয়ে নিতাম। তবে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে সেই পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। তবে তারা সেটি উপেক্ষা করেন। তাহলে শুধু মুজাফ্ফরবাদ নয়, আমাদের সেনাবাহিনী গিলগিট বালুচিস্তান পর্যন্ত যেতক যেখানে জনগণ মারাঠিমুখী। কিন্তু তখন তা করা হয়নি। ১৬৬২ সালে আমরা আকসাই চিনকেই চিনের কাছে হস্তান্তর করেছি। এই সমস্যা আমাদের তৈরি। আর ১৯৬৩ সালের পর তো অনেক দেরি হয়ে গেছে।
PoK আজ কি দখল করা যেতে পারে
আমরা আজও কি PoK-র কিছু অংশ ফিরত পেতে পারি? সেনা বাহিনীর কতটা সময় লাগবে?
বিকে মুরালি এই প্রশ্নের উত্তরে বলেন, পরিসংখ্যনের দিক থেকে চিন আর পাকিস্তান দুই দেশের সামনে আমরা ততটা সমক্ষ নই। আমি আপনাকে একটি উদাহরণ দিই, ১৯৭১ সালে ইন্দিরা গান্ধী জেনারেল মানেক শকে ডেকে বলেছিবেন পূর্ব পাকিস্তানের যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। তখন জানারেল মানেক শ বলেছিলেন, না ম্যাডাম, আমরা এখনও যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত নই। কোন জেনারেল এটা বলার সাহস করবে না। কিন্তু মানেক শ করেছিলেন। এরপরই তিনি প্রথম যুদ্ধের প্রস্তুতি নেন। বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীকে প্রশিক্ষিত করেন। তারপরই তা সম্ভব হয়েছে। ইন্দিরা গান্ধী রাশিয়ার সাহয্য চেয়েছিলেন। রাশিয়া সমস্ত সামরিক সরঞ্জাম ভারতে পাঠিয়ে দেয়। বর্তমান পরিস্থিতি আমরা যুদ্ধে যাই তাহলে বিশ্বের কোন দেশ আমাদের সাহায্য করবে? আমি বলব যে কোনও দেশই আমাদের সাহয্য করবে না। তাই কোনও পদক্ষেপ করার আগে নিজেদের পুরোপুরি প্রস্তুত করতে হবে।
স্বাধীনতার পরেও সন্ত্রাস প্রসঙ্গে
এই প্রসঙ্গে বিকে মুরালি বলেন, আমরা PoK ফিরেয়েনি বা নানি- সন্ত্রাসবাদের আশঙ্কা থেকেই যাবে। আমি বলব, আগের থেকে এটি ১০ গুণ বেড়েছে। আপনার মনে আছে তালিবানরা যখন কাবুল দখল করেছিল তখন জেল থেকে ৪০০০ বন্দিকে মুক্তি দিয়েছিল। এরা আল কায়দা, আইএস, তেহরিক তালিবান- যারা ভারত বিরোধী প্রচারের জন্য পরিচিত। এদের অধিকাংশই বর্তমানে পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে রয়েছে। গাজওয়া -ই-হিন্দ ঘোষণা করেছে। তাদের দাবি আগামী কয়েক বছরের মধ্যে তারা ভারতকে মুসলিম রাষ্ট্রে পরিণত করবে। শুধু তাই নয় চলতি বছর জানুয়ারি থেকে নভেম্বর ড্রোন পাঠান হয়েছে শতাধিকবার।
পাকিস্তান অধিকৃত চিন নিয়ে বিশ্বের অবস্থান
এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিকে মুরালি বলেন, পিওকে-র দখল নিতে গেলে শুধুমাত্র রাষ্ট্রসংঘ নয় বিশ্বের অধিকাংশ দেশের সমর্থন প্রয়োজন। তবে রাশিয়া - ইউক্রেন যুদ্ধে আমরা যেভাবে রাশিয়াকে সমর্থন করছি তাতে এটা স্পষ্ট যে পিওকে নিয়ে আমেরিকা, জার্মানি বা ব্রিটেনের মত দেশগুলি আমাদের পাশে থাকবে না। রাষ্ট্রসংঘও সমর্থন করবে না। প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলিও সমর্থন করবে না।
বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বলতে গিয়ে প্রাক্তন সেনা কর্তা বলেন, আমাদের পরিষ্কারভাবে বোধা উচিৎ যে আমাদের সামর্থ্য, শক্তি, কৌশল - এমন নয় এ আমরা নিজেরাই কোনও দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করি। হ্যা অন্য কোনও দেশ আমাদের আক্রমণ করলে আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে তার মোকাবিলা করতে পারি। প্রতিশোধ নিতে পারি।
সরকারের জন্য বার্তা
আমাদের সেনা বাহিনীর সামর্থ্য আরও বাড়ান উচিত। স্বনির্ভর ভারত প্রকল্পের ফলাফল আরও ১০ বছর পরে পাওয়া যাবে। প্রতিবেশী দেশগুলির তুলনায় প্রতিরক্ষা বাজেট বাড়ান উচিত। আগে নিরাপত্তার দিকে জোর দিয়ে তারপর উন্নয়নের দিকে জোর দিতে হবে। আমরা যদি নিরাপদেই না থাকি তাহলে উন্নয়ন কিসের জন্য। সরকারের জিডিপির তিন শতাংশ প্রতিরক্ষা বাজেট থাকা উচিত। যুদ্ধের মত পরিস্থিতির জন্য সর্বদা তৈরি থাকতে হবে।
আরও পড়ুনঃ
'মোদীকে খুন করার জন্য প্রস্তুত হতে হবে', কংগ্রেস নেতার মন্তব্যে জোর বিতর্ক- দাবি গ্রেফতারের
CAG অফিসে আক্রান্ত আরটিআই অ্যাক্টিভিস্ট বিশ্বনাথ গোস্বামী, ২ দিন পরে অভিযোগ গ্রহণ পুলিশের