'যুদ্ধের হুমকি' দেওয়ায় চিনের মুখোশ খুলেছিলেন বাজপেয়ী, রাষ্ট্রদূতের অফিসে নিয়ে গিয়েছিলেন ৮০০ ভেড়া

চিনা রাষ্ট্রদূতের অফিসে ৮০০ ভেড়া
নিয়ে গিয়েছিলেন অটলবিহারী বাজপেয়ী
চিনা অভিযোগের জবাব দিতে 

সালটি ছিল ১৯৬৫। তখনও চিন ভারত যুদ্ধের ক্ষত অব্যাহত ভারতের মজ্জায় মজ্জায়। কারণ তার তিন বছর আগেই চিনা সেনার অগ্রাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল ভারত। তিন বছর কাটতে না কাটতেই আবারও ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধের হুমকি দিয়ে আসছিল চিন। এখন যেমন বিশ্বের কাছে চিন একটা বড় চ্য়ালেঞ্জ কয়েক দশক আগেই তেমনই ছিল। আন্তর্জাতিক ও দেশীয় রাজনীতিতে চিন কী করবে বা কী করতে পারে তা বিশ্বের কোনও দেশই প্রথম থেকে আঁচ করতে পারেনা। কিন্তু সেই সময় চিনের শীর্ষ নেতৃত্বকে রীতিমত মুখের ওপর জবাব দিয়েছিলেন উদীয়মান  রাজনীতিবিদ অটলবিহারী বাজপেয়ী। 


যুদ্ধের কারণ হিসেবে ভারতের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি অভিযোগ তুলেছিল চিন। যার মধ্যে একটি অভিযোগ হল, ভারতীয় সেনারা নাকি চিনের ৮০০টি ভেড়া আর ৫৯টি ইয়াক চুরি করেছে। কূটনৈতিক চালে বাজিমাত করার পাশাপাশি সামরিক দিকেই সক্রিয়া বজায় রেখেছিল চিন।  বেশ কয়েকটি সীমান্তবর্তী এলাকায় অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালাচ্ছিল লাল ফৌজ। তাই নানান কূটনৈতিক জালে ভারতে ব্যস্ত রাখতেই একাধিক অজুহাত খাড়া করেছিল। অন্যদিকে সেইসময় ভারত আবার, পাক সীমান্তে পাক হানাদের রুখতে ব্যস্ত  ছিল । কিন্তু শত ব্যস্ততার মধ্যেও ভারত চিনের তোলা অভিযোগগুলি হাস্যকর বলে মন্তব্য করেছিল। 

Latest Videos

কিন্তু চিনের তোলা এই অভিযোগের জবাব দিতে বদ্ধ পরিকর হয়ে আসরে নামেন সেই সময়ের তরুণ রাজনীতিবিদ অটলবিহারী বাজপেয়ী। তখন তাঁর বয়স হবে ৪২। রাজ্যসভার সাংসদও ছিলেন বাজপেয়ী। তিনি সেপ্টেম্বর মাসে ৮০০টি ভেড়ার নিয়ে সরাসরি হাজির হয়ে গিয়েছিলেন দিল্লিতে চিনের রাষ্ট্রদূতের অফিসে। আর প্রত্যেকটি ভেড়ার গলায় ঝোলানো ছিল একটি প্ল্যাকার্ড। যেখানে লেখা ছিল, 'আমাকে খাও কিন্তু বিশ্বকে রক্ষা কর' । বাজপেয়ীর এই কাণ্ডকারখানায় রীতিমত অবাক হয়েছিলেন তৎকালীন চিনা রাষ্ট্রদূতের অফিসের কর্মীরা। উল্টে চিনও জানিয়েছিল বিষয়টি খুবই আপমানজনক। তাঁদের অভিযোগ ছিল তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রীর সমর্থনেই এই কাজ করেছেন বাজপেয়ী। সরকারের সমর্থন না থাকলে এই  পদক্ষেপ গ্রহণ করা সম্ভব নয় বলেই বিবৃতি দিয়ে জানান হয়েছিল। 

কিন্তু তৎকালীন দিল্লিবাসীও অটলবিহারী বাজপেয়ীকে পুরোপুরি সমর্থন জানিয়েছিলেন। কয়েকজন নাগরিকও এই মিছিলে সামিল হয়েছিলেন। তাঁরা দাবি করেছিলেন এই বিক্ষোভ মিছিলের সঙ্গে ভারত সরকারের কোনও যোগাযোগ নেই। এটি স্বতঃস্ফূর্ত ও শান্তিপূর্ণ মিছিল। চিনের দেওয়া হুঁশিয়ারির বিরুদ্ধে দিল্লিবাসীর প্রতিক্রিয়া বা প্রতিবাদ। পাশাপাশি তাঁরা ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধের হুমকি দেওয়া বন্ধ করার পক্ষেও সওয়াল করেছিলেন। 

স্মৃতি বিস্মৃত এই কাহিনী জানতে পারা গেছে প্রবাল দাশগুপ্তর নতুন বই 'ওয়ারশেড ১৯৭৬'-এ। এই বইতে বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে ১৯৬৫ সালে দুই দেশের কূটনীতি। 


চিনের ভেড়া আর ইয়ার্ক চুরির অভিযোগের কেন্দ্র হল তিব্বত। তাদের অভিযোগ ছিল চার তিব্বতী বাসিন্দাকে ভারত অপহরণ করেছে। কিন্তু ভারতের দাবি ছিল তাঁরা শরনার্থী। যেসময় দেশে ফিরতে চাইবে সেই সময়ই তাঁদের সম্মানের সঙ্গে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু পালিয়ে আসা ২ তিব্বতী মহিলার অভিযোগ ছিল চিনা সেনা তাঁদের ওপর নির্মম অত্যাচার করেছে। ভারত সেই সময় স্পষ্ট করে জানিয়েছেন ইয়র্ক সম্পর্কে কিছুই জানা নেই। কিন্তু ২ চিনা মেশপালক ভারতের শরনার্থী। তাদের সঙ্গে পয়েছে ভেড়ার দল। তাঁরা যদি ফেরত যেতে চান তাহলে তাদেরও ফেরত পাঠান হবে। 

কূটনৈতিক আলোচনার পাশাপাশি বাজপেয়ীর এই চাল চিনকে যে কিছুটা হলে সমস্যা ফেলেছিল তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সেইসময়ে সোশ্যাল মিডিয়া না থাকলেও বাজপেয়ীর এই কার্যকলাপ দীর্ঘদিন ধরেই রাজনীতি ও রাজনীতির বাইরে আলোচনার বিষয়ে ছিল। 



 

Share this article
click me!

Latest Videos

Malda-র রাস্তায় সেফ ড্রাইভ সেফ লাইফ কর্মসূচি! সচেতনার বার্তা র‍্যালির মাধ্যমে
RG Kar Case Update Today : চাইলেন না চরম শাস্তি! মোক্ষম চাল দিলো অভয়ার পরিবার | Calcutta High Court
এবার আগুনের গ্রাসে অন্য এলাকা! পুড়ছে স্যান দিয়েগো কাউন্টির একাধিক অংশ San Diego fire | Wildfires
Suvendu on Kartik Maharaj : কেন পদ্মশ্রী পাচ্ছেন কার্তিক মহারাজ? খোলসা করে সবটাই বললেন শুভেন্দু
Suvendu on Trump : ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশংসায় পঞ্চমুখ শুভেন্দু অধিকারী, কারন জানলে অবাক হবেন