বিবিসির তৈরি তথ্যচিত্র নিয়ে উত্তাল ডেএনইউ ক্যাম্পাস। ক্যাম্পাসে বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট বন্ধ। তারপরেও তথ্যচিত্রের প্রদর্শন। বাম ও ডানপন্থী পড়য়াদের মধ্যে সংঘর্ষ।
জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞা আমন্য করেই ক্যাম্পাসে চলছি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে নিয়ে বিবিসর তৈরি তথ্যচিত্র India: The Modi Question (ইন্ডিয়া: দ্যা মোদী কোয়েশ্চেন) স্ক্রিনিং। এই স্ক্রিনিং বন্ধ করার জন্য স্টুডেন্ট ইউনিয়নের অফিসে ইন্টারনেট আর বিদ্যুৎ পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। ক্যাম্পাস ব্ল্যাকআউট হয়ে যায়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের বামপন্থী ছাত্রদের তাতেও দমানো যায়নি। তারা নিজেদের ফোন থেকেই তথ্যচিত্র দেখতে শুরু করে। এই অবস্থায় তাদের ওপর পাথার ছোঁড়া হয় বলে অভিযোগ। পরে বাম ও ডানপন্থী ছাত্রদের সংঘর্ষে উত্তাল হয়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অসম্মতি সত্ত্বেই তথ্যচিত্রটি স্ক্রিনিং শুরু হওয়ার কথা ছিল রাত ৯ টার সময়। যদিও আগে থেকেই বিশ্ববিদ্য়ালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল তথ্যচিত্রটি যদি সম্প্রচার করা হয় তাহলে তারা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে। কিন্তু তারপরেই স্ক্রিনিং-র সবরকম প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল বাম ছাত্র সংগঠন। তবে এই তথ্যচিত্রটির অনলাইন শেয়ারিং-এর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হ.য়েছে।
কিন্তু শিক্ষার্থীরা জোর দিয়েছিলেন যে স্ক্রিনিং বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও নিয়ম লঙ্ঘন করবে না। এটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি নষ্ট করবে না। কিন্তু সন্ধ্যে থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় চত্ত্বরে ব্ল্যাক আউট হয়ে যায়। তখন পড়ুয়ারা ক্যাম্পাসেই একটি ক্যাফেটোরিয়ায় নিজেদের সেলফোন আর ল্যাপটপ থেকে তথ্যচিত্রটি দেখতে শুরু করে। কিন্তু সেই সময় ক্যাফেটোরিয়া সংলগ্ন একটি ঝোপ থেকে পড়ুয়াদের লক্ষ্য করে পাথর ছোঁড়া হয় বলে অভিযোগ। বামপন্থী ছাত্রদের অভিযোগ তাদের দিকে লক্ষ্য করে ইঁট ছোঁড়া হয়।
এরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা একটি প্রতিবাদ মিছিল করে। তারা বিজেপি এবিভিপি ও রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘরে প্রতিবাদে স্লোগান দেয়। বাম সমর্থিত স্টুডেন্ট ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ার সভাপতি ঐশী ঘোষ ক্যাম্পাসে ব্ল্যাকাউটের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে দায়ী করেন। তিনি বলেন প্রশাসন গণতন্ত্রের কণ্ঠো রোধ করছে। সেই জন্যই ক্যাম্পাসে ইন্টারনেট বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। তারা যে QR কোর্ড ব্যবহার করে মোবাইল ফোনের সাহায্য তথ্যচিত্র দেখেছেন তাও জানিয়েছেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও মন্তব্য করেনি।
সম্প্রতি এই তথ্যচিত্র নিয়ে এই দেশেও তীব্র জটিলতা তৈরি হয়েছে। আগেই কেন্দ্রীয় সরকার বিবিসির এই তথ্যচিত্রের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাক্সেসের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। টুইটার ও ইউটিউেবর লিঙ্কগুলিকে ব্লক করার নির্দেশ দিয়েছে। বিদেশ মন্ত্রক এই তথ্যচিত্রকে বিভ্রান্তিকর, প্রোপাগান্ডা ছড়ানোর বিষয়বস্ত হিসেবে চিহ্নিত করেছে। পাশাপাশি এই তথ্যচিত্রে ঔপনিবেশিক মতাদর্শ প্রতিফলিত করা হয়েছে বলেও দাবি করা হয়েছে। যদিও বিবিসির পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি জারি করে বলা হয়েছে যথেষ্ট গবেষণা করেই এই তথ্যচিত্র তৈরি করা হয়েছে। এডিটোরিয়াল বিষয়বস্তুর ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলেই আসল তথ্য তুলে ধরার হয়েছে।
কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার এই তথ্যচিত্র নিয়ে তীব্র আপত্তি জানিয়েছে। কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেস সরকারি নিষেধাজ্ঞা নিয়ে সমালোচনায় সরব হলেও কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেসের মত বিরোধী দলগুলি সেন্সরশিপের জন্য মোদী সরকারের সমালোচনা করলেও দেশের প্রায় ৩০২ জন বিদগ্ধ মানুষ বিবিসির তথ্যচিত্রের প্রতিবাদ জানিয়েছে চিঠি লিখেছেন। সেখানে দাবি করা হয়েছে এই তথ্যচিত্রের মাধ্যেমে দেশের নেতার ভাবমূর্তি খুন্ন করার চেষ্টা করা হয়েছে। চিঠিতে সই করেছেন রাজস্থান হাইকোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি অনিল দেও সিং, প্রাক্তন স্বরাষ্ট্র সচিব এল সি গয়াল, প্রাক্তন বিদেশ সচিব শশাঙ্ক। এছাড়াও প্রাক্তন RAW প্রধান সঞ্জীব ত্রিপাঠি এবং প্রাক্তন NIA ডিরেক্টর যোগেশ চন্দর মোদি বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন৷