সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে শুক্রবারই সম্ভবত শপথগ্রহণ বিএস ইয়েদুরাপ্পা সরকারের। তাঁর নেতৃত্বেই ফের একবার বিজেপি দাক্ষিণাত্যের এই রাজ্যে সরকার তৈরি করতে চলেছে। এবার মুখ্যমন্ত্রী হলে ৪ বার এই পদে বসবেন ইয়েদুরাপ্পা। মঙ্গলবার আস্থাভোটে এইচ ডি কুমারস্বামী সরকারের পতন হওয়ার পর বিজেপি-র সরকার গড়াটা এই রাজ্যে নিশ্চিত হয়ে যায়। মঙ্গলবার রাতে বেঙ্গালুরুর রামাদা হোটেলে বিশেষ বৈঠকে বসেছিল বিজেপি-র পরিষদীয় দল। সেখানেই একপ্রকার প্রায় ঠিকই হয়ে গিয়েছে যে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে বিএস ইয়েদুরাপ্পাই ফের তখতে বসবেন। হোটেলের ভিতরে যখন বিজেপি নেতারা বৈঠক করছিলেন, ঠিক তখন-ই বাইরে আনন্দে আতসবাজী ফাটিয়ে উল্লাস জ্ঞাপন করেন বিজেপি-র কর্মী ও সমর্থকরা।
সরকার গঠনের দাবি জানাতে বুধবার রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করছেন ইয়েদুরাপ্পা। বিজেপি সূত্রে খবর, রাজ্যপালের সঙ্গে বৈঠক সেরে দিল্লি উড়ে যেতে পারেন তিনি। সেখানে সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহের সঙ্গে তাঁর দেখা করার কথা। যদিও, মঙ্গলবার রাতেই অমিত শাহ-র প্রশংসা করে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন ইয়েদুরাপ্পা। সমস্ত দিক ঠিক থাকলে শুক্রবারই কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করছেন বর্ষীয়াণ এই বিজেপি নেতা। বুধবারই কর্ণাটকে পা রাখতে চলেছে বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকেরা। দফতর বণ্টনের মত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলি তাদেরকে সামনে রেখেই করা হবে। অপরপ্রান্তে প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও দলের রাশ হাতছাড়া করতে নারাজ জেডিএস নেতা তথা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী দেবেগৌড়া। বুধবারই তিনি তাঁর বাসভবনে দলীয় বিধায়কদের সঙ্গে মিলিত হবেন বলে জানা গিয়েছে । মনে করা হচ্ছে আগামিদিনে রাজ্য রাজনীতিতে জেডিএসের ভূমিকা কি হবে তারই একটি রূপরেখা এই বৈঠক থেকে উঠে আসতে পারে।
মঙ্গলবার রাত্রেই রাজ্যপাল বাজুভাই ভালার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে মুখ্যমন্ত্রী পদে ইস্তফা দেন এইচ ডি কুমারস্বামী। এদিকে, বুধবার সকাল থেকেই তৎপরতা শুরু হয়ে যায় গেরুয়া শিবিরের। ইয়েদুরাপ্পার বাসভবনের বাইরে উচ্ছ্বাসে মাতেন বিজেপি কর্মী সমর্থকেরা। একে অপরকে মিষ্টিমুখ করান তাঁরা। কুমারস্বামীর সরকারের পতন ঘটলেও এখনও ইয়েদুরাপ্পার সামনে সমস্ত পথ মসৃণ নয় বলেই মনে করা হচ্ছে। আগামী কিছুদিনের মধ্যেই বিজেপিকে বিধানসভায় নিজেদের গরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে হবে। ২২৪ সদস্য বিশিষ্ট কর্ণাটক বিধানসভায় ম্যাজিক ফিগার ১১৩ ।এই মুহূর্তে বিজেপির হাতে রয়েছে ১০৫ জন বিধায়ক। ফলত সরকার টিকিয়ে রাখতে গেলে ইয়েদুরাপ্পাকে আরও ৮ জন বিধায়কের সমর্থন জোগাড় করতে হবে। সেক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবেন পদত্যাগী বিধায়কেরা। কংগ্রেস এবং জেডিএস প্রথম থেকেই অভিযোগ করে এসেছে বিজেপি অর্থ এবং ক্ষমতার প্রলোভন দেখিয়ে তাদের বিধায়কদের দিয়ে পদত্যাগপত্র জমা করিয়েছে। এখন যদি সত্যিই পদত্যাগী বিধায়কেরা বিজেপিকে সমর্থন করেন, তাহলে তা কংগ্রেস এবং জেডিএসের অভিযোগকেই মান্যতা দেবে। অন্যদিকে তাঁরা যদি নিজেদের পদত্যাগ করার সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন, তাহলে যতদিন না সেই আসনগুলিতে নতুন করে নির্বাচন হচ্ছে, কর্ণাটকে সংখ্যালঘু সরকার চালাতে হবে ইয়েদুরাপ্পাকে। কর্ণাটকের জোট সরকারের পতনের কয়েক ঘণ্টা পরেই একটি টুইট বার্তায় রাহুল গান্ধী জানিয়েছেন কিছু ক্ষমতালোভী মানুষের চক্রান্তে পতন ঘটল তাদের সরকারের। একই সঙ্গে গণতন্ত্র, জনমত এবং সততারও অপমৃত্যু ঘটেছে বলে তিনি দাবি করেন । এর ফলে তিনি মনে করেন পরাজিত হয়েছেন কর্ণাটকের সাধারণ মানুষ।