বর্ষশেষের দিনে ভারত হারালো এক কিংবদন্তিকে
চলে গেলেন কর্ণেল নরেন্দ্র 'বুল' কুমার
তাঁর জন্যই সিয়াচেনকে সুরক্ষিত করতে পরেছিল ভারত
শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী
বর্ষশেষের দিন ভারত হারালো এক কিংবদন্তিকে। চলে গেলেন 'বুল কুমার' নামেই বেশি পরিচিত কর্ণেল নরেন্দ্র কুমার। ১৯৮৪ সালে তিনিই প্রথম সিয়াচেন হিমবাহের আশেপাশে পাকিস্তানি তৎপরতা লক্ষ্য করেছিলেন। তাঁর জন্যই ভারত কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই স্থানটি অধিকারে রাখতে পেরেছিল। বৃহস্পতিবার, নয়াদিল্লিতে সেনাবাহিনীর রিসার্চ অ্যান্ড রেফারাল হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর প্রয়াণে শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
টুইট করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, 'এক অপূরণীয় ক্ষতি! কর্নেল নরেন্দ্র 'বুল' কুমার (অবসরপ্রাপ্ত) অসাধারণ সাহস ও পরিশ্রমের মাধ্যমে দেশের সেবা করেছেন। পর্বতের সঙ্গে তাঁর বিশেষ বন্ধন স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তাঁর পরিবার ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি সমবেদনা। ওম শান্তি'।
ভারতীয় মিলিটারি অ্যাকাডেমির প্রাক্তন ছাত্র, কর্নেল নরেন্দ্র বুল কুমার ছিলেন দেশের অন্যতম সেরা পর্বতারোহী। এক জার্মান অভিযাত্রী তাঁকে উত্তর কাশ্মীরের একটি মার্কিন মানচিত্র দেখিয়েছিলেন। সেই মানচিত্র দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন কর্নেল। কগারণ, ভারতের প্রত্যাশার থেকে অনেকটাই পূর্বে ছিল নিয়ন্ত্রণরেখা। এরপর ১৯৭০ এর দশকের শেষ এবং ১৯৮০-র দশকের শুরুর দিকে একধিকবার সিয়াচেন হিমবাহ অঞ্চলে অভিযান পরিচালনা করেছিলেন কর্নেল নরেন্দ্র কুমার।
মূলত তাঁর এই সকল অভিযানের ফলেই সিয়াচেন হিমবাহ দখলের পাক পরিকল্পনা সম্পর্কে প্রাথমিক তথ্য পেয়েছিল ভারতীয় বাহিনী। সেই তথ্যের ভিত্তিতেই ভারতীয় সেনাবাহিনী এরপর 'অপারেশন মেঘদূত' পরিচালনা করেছিল। রক্ষা পেয়েছিল সুউচ্চ সিয়াচেন হিমবাহ অঞ্চল। প্রথম প্লাটুন নিয়ে সিয়াচেনে পৌঁছেছিলেন ক্যাপ্টেন সঞ্জয় কুলকার্নি। কর্নেল বুল কুমারের মৃত্যুর পর তিনি জানিয়েছেন, কর্নেল নরেন্দ্র কুমার ছিলেন 'সিয়াচেনের পরিত্রাতা। তিনি প্রথম ওই অঞ্চলে পাক আগ্রাসন লক্ষ্য করেছিলেন, বাকিটা ছিল ইতিহাস।
দেসের সুরক্ষায় তাঁর অবদানের জন্য কর্নেল বুল কুমার কির্তি চক্র, পদ্মশ্রী, অর্জুন পুরষ্কার এবং ম্যাকগ্রিগোর পদক-সহ বহু সম্মান পেয়েছিলেন। প্রথম ভারতীয় হিসাবে নন্দাদেবী চূড়ায় আরোহণ করেছিলেন তিনি। ১৯৬৫ সালে তিনি মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছিলেন। এছাড়া আল্পসের পর্বতের সর্বোচ্চ চূড়া মাউন্ট ব্লাঁ এবং পরে মাউন্ট কাঞ্চনজঙ্ঘা-ও জয় করেছিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর এই কর্নেল। পাহাড়ে ফ্রস্টবাইটের কারণে পায়ের চারটি আঙুল নষ্ট হয়ে গিয়েছিল তাঁর। তারপরও, ১৯৮১ সালে, ভারতের অ্যান্টার্কটিকা টাস্ক ফোর্সের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসাবে দুর্দান্ত ভূমিকা পালন করেছিলেন তিনি। আর তাঁর 'বুল' ডাকনাম? সেটা এসেছিল তাঁর নিরলসভাবে কাজ করার দক্ষতার জন্য।