
পকেট পুড়ছে মধ্যবিত্তের। বন্ধ হয়ে যেতে বসেছে আম বাঙালির পছন্দের মাছ বা মাংস রান্না। শুধু মাছ মাংসই বা কেন, হয়ত বন্ধ করে দিতে হবে আমাদের প্রিয় সবজি রান্নাও। কারণ বাঙালির পকেটে ধ্বস নামিয়েছে জিরের দাম। গত এক মাসের মধ্যেই প্রতি কেজিতে প্রায় ২০০ টাকা দাম বেড়েছে জিরের। শুধু তাই নয় মাত্র এক বছরে জিরের দাম বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি।
২০২৩ সালের শুরু থেকেই রেকর্ড দামবৃদ্ধি হয়েছে রান্নাঘরের অত্যন্ত জনপ্রিয় এই মশলার। কলকাতায় জিরের দাম ২০২০ সালে কেজি প্রতি ছিল মাত্র ২০০ টাকা। ২০২২ সালের শেষে সেই দাম ৩০০-এর কাছাকাছি ছিল। ২০২২ সালে অগাস্ট সেপ্টেম্বর মাসে জিরার দাম ছিল মাত্র ২৫০- ২৮০ টাকা। কিন্তু সেই দাম এখন কেজি প্রতি বেড়ে হয়েছে ৮০০- ৯০০ টাকা। যা কিনা সর্বকালীন রেকর্ড দাম।
এদিকে, শুধু গোটা জিরেই নয়, রেকর্ড হারে দাম বৃদ্ধি হয়েছে জিরে গুঁড়োরও। ফলে কপালে ভাঁজ পড়েছে গৃহিণীদের। অন্যদিকে জিরে কিনতে গিয়ে কালঘাম ছুটছে বাড়ির কর্তাদের। ক্রমশ বাড়ছে রান্না ঘরের খরচ। সাধ্যের মধ্যে সাধ মেটানো কার্যত মুশকিল হয়ে যাচ্ছে মধ্যবিত্তের।
অনেকের মতে, গোটা দেশের মধ্যে বাংলায় মাত্র ১-২ শতাংশ জিরা চাষ করা হয়। সবচেয়ে বেশি জিরা চাষ করা হয় গুজরাত ও রাজস্থানে। আবার চাষের ক্ষেত্রে জিরা মাত্র বছরে একবারই ফলন হয়। কিন্তু এবারে আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনার দরুণ জিরা চাষ ব্যাহত হয়েছে।দেশের মোট উৎপাদিত জিরের প্রায় ৫৮ শতাংশ হয় গুজরাতে। রাজস্থানে হয় প্রায় ৪২ শতাংশ। সেই জায়গায় বাংলায় মাত্র ১.৫০ শতাংশ জিরে উৎপাদিত হয়। স্বাভাবিকভাবেই রাজ্যের চাহিদা মেটাতে ভিন রাজ্য থেকে তা আমদানি করতে হয়। এ বছর আবহাওয়া খারাপের কারণে উৎপাদন কম হয়েছে। তাছাড়া সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রচুর জিরে রপ্তানি হওয়ায় ভারতে দাম বাড়ছে এই মশলার। জিরে গুঁড়ো ছাড়াও হলুদ গুঁড়ো, ধনে গুঁড়ো, কালোজিরে সহ সব মশলার দাম বেড়েছে।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী দেশে জিরার উৎপাদন লাগাতার ভাবে বেড়েই চলেছে। ২০১৯-২০ সালে দেশে জিরা উৎপাদিত হয়েছিল ৯.১২ লক্ষ টন। যা কিনা ২০২০-২১ সালে কমে দাঁড়ায় ৭.৯৫ লক্ষ টন। ২০২১-২২ সালে তা আরও কমে হয় ৭.২৫ লক্ষ টন। আশঙ্কা করা হচ্ছে ২০২২-২৩ সালে এই পরিমাণ আরও নামবে।