উত্তরপ্রদেশে বিধানসভা নির্বাচনের আগে সেখানে শক্তি বাড়ানোর চেষ্টা করছে তৃণমূল কংগ্রেস। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে এক অভূতপূর্ব জয় পাওয়ার পর বিজেপি বিরোধী শক্তিকে আরও শক্তিশালী করতে চাইছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনের আগে সেখানে আরও একটু জমি মজবুতের চেষ্টায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার শিলিগুড়িতে যোগ দিলেন মির্জাপুরের প্রাক্তন কংগ্রেস নেতা রাজেশপতি ত্রিপাঠী। সেই সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন কংগ্রেস প্রদেশ সহ-সভাপতি ললিতেশপতি ত্রিপাঠী। এই যোগদানের সময় সংবাদমাধ্যয়মের সামনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ছটপুজোর পরই তিনি বারাণসী যাবেন। উত্তরপ্রদেশের মাটিতে বিজেপি বিরোধী লড়াইয়ে সেখানকারই ভূমিপূত্ররা নেতৃত্ব দেবেন বলে ঘোষণা করেন মমতা। তিনি আরও জানান যে, এই লড়াইয়ে সেখানকার মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। যারা তৃণমূল কংগ্রেসকে প্রান্তিক দল বলে কটাক্ষ করেন- এদিন তাঁদেরও নিশানা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি সাফ জানান, এমন প্রান্তিক মানুষদের নিয়েই দেশজুড়ে বিজেপি বিরোধী সবচেয়ে বড় শক্তি হিসাবে আত্মপ্রকাশ করবে তৃণমূল কংগ্রেস।
পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে তৃমমূল কংগ্রেসের ঐতিহাসিক জয় পাওয়ার পর থেকেই আসরে নেমেছেন আইপ্যাক কর্ণধার প্রশান্ত কিশোর। তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগকে সামনে রেখে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন প্রদেশের বিজেপি বিরোধী নেতা এবং রাজনৈতিক শক্তিকে এককাট্টা করার চেষ্টা করছেন। এরই ফল হিসাবে ২১ জুলাই শহিদ দিবস দেশজুড়ে পালন করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। এমনকী গুজরাট ও উত্তরপ্রদেশেও ভিডিও কনফারেন্স করে মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের বক্তব্য সম্প্রচার করেছে জাতীয় তৃণমূল কংগ্রেস। ২০২৪-এ দেশে সাধারণ নির্বাচন। তার আগেই নরেন্দ্র মোদী এবং বিজেপি বিরোধী সবচেয়ে বড় মুখ হিসাবে মমতাকে তুলে ধরার চেষ্টা করছে তৃণমূল কংগ্রেস। ২০২৪-এর সাধারণ নির্বাচনের আগে দেশজুড়ে বেশকিছু রাজ্যে বিধানসভা ভোট রয়েছে। যারমধ্যে উল্লেখযোগ্য ২০২২-এ উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচন। বিজেপি বিরোধিতায় উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনকেও একটা মঞ্চ বানাতে চাইছে তৃণমূল কংগ্রেস।
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নির্দেশ, বাংলায় বেশ কয়েকদিন বন্ধ থাকবে ব্যাঙ্ক, রইল তালিকা
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সোমবার ছিলেন উত্তরবঙ্গ সফরে। এরপরই তাঁর গোয়া সফরে যাওয়ার কথা। গোয়ার বিধানসভা নির্বাচনের আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই সফর যথেষ্টই জাতীয় রাজনীতিতে আলোচনায় উঠে এসেছে। ইতিমধ্যেই গোয়ার প্রাক্তন কংগ্রেস মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেস সেখানে প্রাথমিকভাবে সংগঠনও গড়ে নিয়েছে। এমন এক পরিস্থিতিতে উত্তরপ্রদেশের দুই প্রভাবশালী কংগ্রেস নেতার যোদগান তৃণমূল কংগ্রেসকে চাঙ্গা করবে বলেই মনে করছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি এদিন শিলিগুড়িতে সংবাদমাধ্যমের সামনে জানান, রাজেশপতি ত্রিপাঠীর দাদু কমলাপতি ত্রিপাঠী কংগ্রেসের এক বিশিষ্ট নেতা শুধু নন তিনি প্রাক্তন বিধায়ক এবং জাতীয় স্তরের নেতা ছিলেন। ১৯৮৩ সালে কমলাপতি ত্রিপাঠীর সঙ্গে কলকাতায় সাক্ষাৎও হয়েছিল মমতার। এদিন রাজেশপতি ত্রিপাঠীর তৃণমূল যোগদান পর্বে সেই প্রসঙ্গও টেনে আনেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উত্তরপ্রদেশে জাতীয়বাদী আন্দোলনে এবং কংগ্রেসের ভিত মজবুত করা থেকে স্থানীয় মানুষের অধিকার রক্ষার লড়াই-এ ত্রিপাঠী পরিবারের ভূমিকার কথাও স্মরণ করান মমতা। তিনি জানান, যারা তৃণমূল কংগ্রেসকে প্রান্তিক দল বলে কটাক্ষ করেন, তাদেরকে একটাই বার্তা দিতে চান যে রাজেশপতি, ললিতেশপতি-দের মতো প্রান্তিক মানুষদের এককাট্টা করেই তৃণমূল কংগ্রেস বিজেপি-র বিরুদ্ধে লড়াই করবে।
১৫ নয়, রাজ্যে স্কুল খুলবে ১৬ই নভেম্বর থেকে-নয়া ঘোষণা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের
উত্তরপ্রদেশের আরও বহু রাজনৈতিক নেতা তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন বলেও এদিন বলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনকী, বেশকিছু সংগঠন তাঁকে উত্তরপ্রদেশে যাওয়ার জন্যও নানা সময়ে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন বলেও জানান তৃণমূল সুপ্রিমো। রাজেশপতিরাও তাঁকে বারাণসী যাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ দিয়ে রেখেছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। ছটপুজোর পর তিনি উত্তরপ্রদেশে যেতে পারেন বলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন। গোয়া হোক বা উত্তরপ্রদেশ তৃণমূল কংগ্রেস যে বিজেপি বিরোধী লড়াইয়ে এই সব রাজ্যে ভূমিপুত্রদেরই সামনে রাখবে সে কথাও এদিন পরিস্কার করে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি এদিন বিজেপি-র সঙ্গে সঙ্গে কংগ্রেসকেও কটাক্ষ করতে ছাড়েননি মমতা। তিনি অভিযোগ করেন, আজ কংগ্রেস রাজনৈতিকভাবে বিজেপি বিরোধিতায় ব্যর্থ হয়েছে বলেই তৃণমূল কংগ্রেসকে সামনে এগিয়ে আসতে হয়েছে। সুতরাং, কংগ্রেস যখন বিজেপি-কে তখত থেকে সরাতে পারেনি তখন উচিত এই কাজে তৃণমূল কংগ্রেসকে সহযোগিতা করা।
ত্রিপুরায় নোটার থেকেও কম ভোট পাবে তৃণমূল, চ্যালেঞ্জ ছুঁড়লেন শুভেন্দু অধিকারী
বিজেপি-র শাসনকালে উত্তরপ্রদেশে শাসনের নৈরাজ্য তৈরি হয়েছে বলেও এদিন ফের একবার তোপ দেগেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হাথরস থেকে লাখিমপুর- কোনও ইস্যুতেই এদিন বিজেপি-কে বিঁধতে ছাড়েননি মমতা। কংগ্রেসের থেকে তৃণমূল কংগ্রেস আগে উত্তরপ্রদেশের অসহায় মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে বলেও এদিন দাবি করেন তিনি। এদিকে, তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিয়ে রাজেশপতি ত্রিপাঠী জানান, কংগ্রেস মানুষের ভরসা অর্জনে ব্যর্থ। আগে কংগ্রেস সমস্ত জায়গায় ছেয়ে ছিল। কিন্তু বিজেপি বিরোধিতায় এবং অসহায়দের পাশে সেভাবে দাঁড়াতে পারেনি কংগ্রেস। সেই তুলনায় যেভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপি-কে চ্যালে়ঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন এবং জয় পেয়েছেন তাতে বিক্ষুদ্ধ কংগ্রেসরী ভরসা পাচ্ছেন। জায়গায় জায়গায় বিক্ষুদ্ধে কংগ্রেসীরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বিজেপি বিরোধী লড়াইয়ে সামিল হতে চাইছেন বলেও জানান রাজেশপতি।