'প্রাসঙ্গিকতা হারিয়েছে হিজাব', একান্ত সাক্ষাতকারে বিস্ফোরক কেরলের রাজ্যপাল আরিফ মহম্মদ খান

কর্নাটকের হিজাব বিতর্কে (Hijab Controversy) মুখ খুলে বিতর্কে কেরলের (Kerala) রাজ্যপাল আরিফ মহম্মদ খান (Arif Mohammad Khan)। এশিয়ানেট নিউজকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাতকারে বললেন হিজাবের প্রাসঙ্গিকতাই আর নেই।
 

Web Desk - ANB | Published : Feb 14, 2022 6:06 PM IST / Updated: Feb 14 2022, 11:46 PM IST

কর্নাটকের হিজাব বিতর্কে (Hijab Controversy) মুখ খুলে ফের বিতর্কে জড়িয়েছেন, কেরলের (Kerala) রাজ্যপাল আরিফ মহম্মদ খান (Arif Mohammad Khan)। তিনি সাফ জানিয়েছেন, হিজাব ইসলামের জন্য আবশ্যকীয় নয়। তিনি বলেন, এটা তাাঁর মত নয়, কোরানেই বলা হয়েছে ইসলামের ৫টি মূল স্তম্ভ রয়েছে, যেগুলি আবশ্যকীয়। তার কোনওটিই হিজাব পরা নয়। এশিয়ানেট নিউজকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাতকারে কী বললেন তিনি? 

প্রশ্ন: অধিকাংশ মুসলিম মহিলাই হিজাব পরেন। আপনি কি মনে করেন, হিজাব নিয়ে অপনার মন্তব্য ভুল ছিল? 

আরিফ: হিজাব কথাটা কোরানের (Holy Quran) ৭টি সুরায় রয়েছে। মুসলিম আইন যে সময় শুরু হয়েছিল, সেই সময় তারা মহিলাদের সঙ্গে জড়িত সমস্ত পরিধানকেই হিজাব বলত। সত্য কথা হল, কোরানে মুসলিম মহিলাদের পরিধানের ক্ষেত্রে হিজাব কথাটা ব্যবহার করা হয়নি। কোরানে বলা হয়েছে 'খিমার'। আরবিক অভিধান অনুযায়ী খিমার কথাটির অর্থ হল ওড়না। একটি কাপড়ের টুকরো, যা মহিলারা পরেন। কোরানে বলা হয়েছে, শিমারকে জিলবাবের উপরে রাখতে হবে। জিলবাবের অর্থ অনেকে করেন স্তন। কিন্তু, আসলে জিলবাব বলতে মহিলাদের ঊর্ধাঙ্গের কাপড়ের কথা বলা হয়েছে।  

আরও পড়ুন - 'প্রাসঙ্গিকতা হারিয়েছে হিজাব', একান্ত সাক্ষাতকারে বিস্ফোরক কেরলের রাজ্যপাল আরিফ মহম্মদ খান

আরও পড়ুন - হিজাব প্রথা পিছিয়ে দিচ্ছে মুসলিম মহিলাদের, মুখ খুললেন কেরলের রাজ্যপাল

আরও পড়ুন - লক্ষ্য অভিন্ন দেওয়ানি বিধি - শুরু হল স্বাক্ষর সংগ্রহ, পিটিশন দিচ্ছে স্যাফ্রন থিঙ্ক ট্যাঙ্ক

এখানে আরও একটা বিষয় রয়েছে। সেই সময়ে প্রায় সব সমাজই দুই ভাগে বিভক্ত ছিল। একটা অংশ ছিল স্বাধীন, অন্য অংশ ছিল ক্রীতদাস। আজ গোটা পৃথিবীর কোথাও দাসপ্রথা নেই। রাষ্ট্র সংঘের মানবাধিকার ঘোষণাপত্র অনুযায়ী প্রত্যেকের মৌলিক অধিকার আছে। প্রত্যেকে বর্তমানে স্বাধীন মানুষ, তাই কোরান যে সময়ে দাঁড়িয়ে এই কথা বলেছিল, সেই প্রাসঙ্গিকতাই আর নেই। 

প্রশ্ন: পবিত্র কোরান সম্পর্কে আপনার উপলব্ধির উপর ভিত্তি করেই আপনি বিবৃতি দিয়ে থাকেন। প্রায়শই বিভিন্ন মুসলিম সংগঠন সেগুলির বিরোধিতা করে, সমালোচনা করে। কীকরে তারা সেই একই গ্রন্থের উপর ভিত্তি করে আপনার বিরোধিতা করে? 

আরিফ: আমার তাদের ধন্যবাদ দেওয়া উচিত। আমি জানি না, আমার কী বলা উচিত। তারা কোরানের একটি সুরাও বলতে পারবে না। ওরা শুধু বলে, আমরা কোরানের ভিত্তিতে বলছি, কিন্তু তাদের মুখে আমি কখনও কোরানের কোনও সুরা শুনিনি। আমি ১৯৮৬ সাল থেকে এটা দেখে আসছি। সেই শাহাবানো মামলার সময় থেকে। বস্তুত, ওরা আমার ভাবমূর্তি এতটাই খারাপ করে দিয়েছিল, যে কেউ আমার কথা শুনতেই চাইত না। 

কীভাবে অবস্থাটা বদলাতে শুরু করল? মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্য থেকেই প্রশ্ন ওঠা শুরু হল, তোমরা বল  আরিফ খান ইসলামের বিরুদ্ধে কথা বলে। কিন্তু তিনি সবসময় কোরান উদ্ধৃত করেন। তোমরা তো কখনও কোরানের সুরা বল না। আমি রাজনৈতিক বিতর্কে ঢুকতে চাই না। সেটা আমার কাজ নয়। তবে, তারা শুধু কোরনের নাম নেয়। যদি ওরা কোরানের সুরা থেকে বলে, তবে আমি ওদের কখনই চ্যালেঞ্জ করব না। বরং, তাদের কাছে গিয়ে আমি যা বলেছি, তার জন্য ক্ষমা চাইব। আমায় শিক্ষিত করার জন্য, তাদের ধন্যবাদ দেব। 

প্রশ্ন: কেন্দ্রীয় সরকারের প্রায় সব অনুষ্ঠানেই হিন্দু আচার দেখা যায়। আমরা অনেকসময়ই দেখি, সাংবিধানিক পদে থাকা ব্যক্তিরা প্রকাশ্যে গেরুয়া বস্ত্র পরছেন। আমাদের প্রধানমন্ত্রী অযোধ্যার রামমন্দির নির্মাণের ভূমিপূজন অনুষ্ঠানের হোতা ছিলেন। আপনি কি মনে করেন, এই ঘটনাগুলি স্বাভাবিক? 

আরিফ: হ্যাঁ নিশ্চয়ই। এই ক্ষেত্রেও আমি কোরানের একটি সুরার কথা বলব। এটি একটি ঘটনার বিষয়ে, যার কথা বাইবেলেও বলা আছে। সেই সোনার কাপের কাহিনি। যখন মোজেস তাঁর শিষ্যদের আত্মত্যাগের কথা বলেছিল। তারা জিজ্ঞেস করেছিল, কাপটির রঙ কী হবে। কোরান অনুযায়ী, রঙটি হবে গেরুয়া। যে রঙটি চোখের জন্য সবথেকে আরামপ্রদ। আপনাদের জন্য গেরুয়া রঙ মানেই তার ধর্মীয় অর্থ রয়েছে। আমার জন্য গেরুয়া রঙ মানে যে রঙটা চোখে আরাম দেয়। একজন ভারতীয় হিসাবে গেরুয়া মানে, ত্যাগ। অনেকে কিছু না জেনেশুনেই বলে, আমাদের জাতীয় পতাকা তিন রঙের। গেরুয়া হল হিন্দুদের জন্য, সবুজ মুসলমান, আর সাদাটা অন্যান্য ধর্মের। ভারতীয় সংস্কৃতিতে গেরুয়া রঙের অর্থ আত্মত্যাগ। অপরে জন্য বাঁচা, নিজের জন্য নয়। সাদা রঙের অর্থ শান্তি। সবুজ রঙ মোটেই মুসলিমদের বোঝায় না। এই রঙের অর্থ সম্বৃদ্ধি। 

Share this article
click me!