বিদেশি অভিযাত্রীদের অভিযানে প্রথমে মালবাহক পরে অভিযাত্রী, কিভাবে গালওয়ান উপত্যকার নামকরণ

Published : Jun 19, 2020, 03:36 PM IST
বিদেশি অভিযাত্রীদের অভিযানে প্রথমে মালবাহক পরে অভিযাত্রী, কিভাবে  গালওয়ান উপত্যকার নামকরণ

সংক্ষিপ্ত

চিন-ভারত সংঘর্ষের কারণে গালওয়ান নামটা এখন সবার চেনা  কিন্তু লাদাখের ওই উপত্যকা এবং নদীটির নামকরণ হল কিভাবে?  এক মুসলিম অভিযাত্রী যে প্রথমে ছিল বিদেশি অভিযাত্রীদের মালবাহক  পরবর্তীতে তার নামেই বিদেশি অভিযাত্রী চার্লস মারে উপত্যকার নামকরণ করেন 

সম্প্রতি চিন-ভারত সংঘর্ষের কারণে লাদাখের গালওয়ান উপত্যাকার নামটা এখন সারা দুনিয়ার কাছে খুব পরিচিত।  কিন্তু কিভাবে হল এই নামকরণ? প্রায় ১৫০ বা তার সামান্য কয়েক বছর আগে লাদাখেরই এক পর্বতারোহী ও অভিযাত্রীর নামে উপত্যকার নাম রাখা হয় গালওয়ান। সেই অভিযাত্রীর নাম ছিল গুলাম রসুল গালওয়ান।  
ঔপনিবেশিক আমলে ভৌগোলিক নিদর্শন সেটা পর্বতশৃঙ্গই হোক অথবা উপত্যকা কিংবা গিরিখাত ব্রিটিশ অভিযাত্রীদের নামে নামকরণ করাটাই তখন ছিল দস্তুর। দেশি অভিযাত্রীদের নামে গালওয়ান উপত্যকা ছাড়া আর কোথাও এই সম্মান জুটেছে বলে জানা নেই।
এমনকি উপত্যকার মধ্যে দিয়ে তিরতির করে বয়ে চলা নদীটির নামও গালওয়ান। সেটাই বা হল কিভাবে? কাশ্মীরি ভাষায় ‘গালওয়ান’ শব্দের অর্থ হল ডাকাত। গুলাম রসুল গালওয়ানের পিতামহ কারা গালওয়ান ছিলেন উনিশ শতকের কাশ্মীরে বিখ্যাত এক দস্যু। ধনীর সম্পদ লুটে গরিবের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়ার জন্য তার খ্যাতি ছিল রবিনহুডের মতো। 
কাশ্মীরের মহারাজার শোওয়ার ঘরে ঢুকে পড়ে তার গলাতেও কারা গালওয়ান ছুরি ধরেছিলেন বলে কথিত। পরে রাজার সৈন্যদের পাতা ফাঁদে ধরা পড়েই কারার ফাঁসি হয়। এরপর তাঁর পরিবার লাদাখে পালিয়ে যায়। ইতিমধ্যে সদস্যদের নামের সঙ্গে স্থায়ীভাবে যুক্ত হয়ে যায় গালওয়ান বা ডাকাত শব্দটি।
গুলাম রসুল গালওয়ানের জন্ম লাদাখের রাজধানী লেহ-তে। চরম দারিদ্রের সঙ্গে যুঝতে মাত্র বারো-তেরো বছর বয়স থেকেই সে ব্রিটিশ ও ইউরোপীয় অভিযাত্রীদের অভিযানে পোর্টার বা মালবাহক হিসেবে সামিল হতে শুরু করে।
তবে তার জীবনের মোড় ঘুরে যায় ১৮৯২ সালে চার্লস মারে-র সঙ্গে পামীর ও কাশগার পর্বত অভিমুখে এক অভিযানে বেরিয়ে। তবে দুর্গম অঞ্চলে উঁচু উঁচু পর্বতমালা আর খাড়া গিরিখাতের মাঝখানে পড়ে যায় তারা। শেষ পর্যন্ত মাত্র চোদ্দ গুলাম রসুল সেই জটিল গোলকধাঁধার মধ্যে থেকে বেরোনোর রাস্তা খুঁজে বের করে। 
অভিযাত্রী দলের নেতা চার্লস মারে কিশোর গুলাম রসুলের প্রতি এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে তিনি কলকল করে বয়ে যাওয়া যে জলধারাটির পাশ ঘেঁষে নতুন রাস্তাটির সন্ধান মেলে তার নামকরণই করে ফেলেন গালওয়ান নালা। সেই থেকেই গুলাম রসুল গালওয়ান লাদাখের শুধু ইতিহাস নয়, ভূগোলেরও অংশ হয়ে গেছেন। 
সামান্য মালবাহক ও টাট্টু ঘোড়ার চালক থেকে গুলাম রসুল গালওয়ান একদিন লেহ-তে নিযুক্ত ব্রিটিশ জয়েন্ট কমিশনারের প্রধান সহকারীর পদে উন্নীত হয়েছিলেন। দুর্গম পর্বত অভিযানে বেরিয়ে পড়াটা ছিল তার নেশা।  অর্থকষ্ট মিটে যাওয়ার পরও জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি অসংখ্য অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছেন, পথপ্রদর্শন করেছেন। আর নানা অভিযানের ফাঁকে ফাঁকেই ইংরেজিতে লিখে ফেলেছিলেন নিজের আত্মজীবনী, ‘সার্ভেন্ট অব সাহিবস – আ বুক টু রিড অ্যালাউড’। 


 

PREV
click me!

Recommended Stories

নতুন শ্রম আইনে আপনার বেতনের পরিমাণ খুব বেশি কমবে না,কারণ জানাল মন্ত্রক
যাত্রীদের সমস্যার 'ক্ষতে' ১০০০০ টাকার 'মলম'! IndiGo ভাউচার ঘোষণা করল