স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে এশিয়ানেট নিউজ এবং কেরালা এনসিসি ক্যাডারের যৌথ উদ্যোগে সফর শুরু করেছে বজ্র জয়ন্তী যাত্রা। প্রায় আড়াই মাসের এই সফরনামায় দিল্লি পৌঁছানোর আগে বাসে করে বিভিন্ন স্থান ভ্রমণ করবে টিম বজ্র জয়ন্তী। রোজ-ই দলটি কোনও না কোনও নতুন স্থান এবং প্রতিষ্ঠানে যাচ্ছে, যেখান থেকে তাঁরা ভারতের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং উন্নতির সোপানের এক সম্যক ধারণা আহরণ করছে।
দাক্ষিণাত্যের শিক্ষা এবং সংস্কৃতির এক অন্যতম ধারক ও বাহক কেরালা কালামণ্ডলম। এমন প্রতিষ্ঠান যে ভারতের সামগ্রিকি শিক্ষা এবং সংস্কৃতির পরিচয়কে আরও শক্তিশালী করেছে তাতে কোনও সন্দেহ নেই। এমনই এক স্থানে এবার পৌঁছল বজ্র জয়ন্তী যাত্রা। দিনভরের এই সফরনামা টিম বজ্র জয়ন্তী যাত্রার সদস্যরা আহরণ করল এক অনন্য অভিজ্ঞতা। যা তাঁদের সামনে তুলে ধরল কেরালা কলামণ্ডলম স্থাপনের তাৎপর্য এবং ঐতিহ্য বহনের ইতিহাসকেও। কীভাবে কেরলের সামগ্রিক শিল্পকলার প্রদর্শনে কলামণ্ডলম হয়ে উঠেছে এক অনন্য প্রতিষ্ঠান সেই কাহিনি যেন উন্মুক্ত হল টিম বজ্র জয়ন্তী যাত্রার সামনে।
৭৫ সদস্যের বজ্র জয়ন্তী যাত্রার দলটি কালামণ্ডলমের ত্রিসূর জেলার চেরুথিরুথি-তে পৌঁছয়। কালামণ্ডলমের প্রবেশদ্বারে দলটিকে স্বাগত জানান রেজিস্ট্রার। সেখানে কালামণ্ডলম তৈরির ইতিহাসকে অবগত করার পর দলটি ক্যাম্পাসের মধ্যে বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করে। কালামাণ্ডলম স্থাপন করেছিলেন ভাল্লাথোল নারায়ণ মেনন। সালটা ছিল ১৯২৭। ভাল্লাথোলের সঙ্গে এই কর্মযজ্ঞে সামিল হয়েছিলেন মুকুন্দ রাজা নামে আরও এক ব্যক্তি। ব্রিটিশ শাসনের নিয়ম-নীতির নির্দেশে প্রায় অবলুপ্ত হতে বসেছিল কেরলের তিন ঐতিহ্যশালী নৃত্যকলা কথাকলি, কুড়িয়াট্টম এবং মোহিনিয়াট্টম। ভাল্লাথোলের উদ্যোগে আবার প্রাণ পায় এই নৃত্যকলা। জন্ম নেয় কেরালা কালামণ্ডলম। ১৯৩৬ সালে তৈরি হয় কেরালা কালামণ্ডলমের বাড়ি। যা বর্তমানে ত্রিসূর জেলার চেরুথিরুথি-তে। এর জন্য জমি দিয়েছিলেন কোচি-র মহারাজা।
টিম বজ্র জয়ন্তী যাত্রা ভাল্লাথোল মেমোরিাল পরিদর্শন করে। এই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের মধ্যেই রয়েছে নীলা ক্যাম্পাস। যার নামকরণ হয়েছে ভারতপুজা নদীর থেকে। এই ভারতপুজা নদীর তিরেই খোলা আকাশের নিচে নৃত্যশৈলীর শিক্ষা আহরণ করে থাকেন ছাত্র-ছাত্রীরা।
এছাড়াও টিম বজ্র জয়ন্তী যাত্রার সামনে একাধিক নৃত্যশৈলী পারফর্ম করে দেখায় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে নৃত্যশৈলীর পরিচায়ককে সামনে রেখে তৈরি হয়েছে একাধিক অডিটোরিয়াম। সেই সব অডিটোরিয়াম বা থিয়েটার হলগুলিও ঘুরে দেখানো হয় টিম বজ্র জয়ন্তী যাত্রাকে।
এই সফরনামায় আগোগাড়া উপস্থিত ছিলেন কেরালার এনসিসি-র অতিরিক্ত ডাইরেক্টর জেনারেল মেজর জেনারেল অলোক বেরি। কথাকলি নৃত্যশৈলীতে এক কিংবদন্তির তকমা পাওয়া এমপিএস নামপুথিরি এই বিশেষ নৃত্যকলা নিয়ে বজ্র জয়ন্তী যাত্রার সঙ্গে তাঁর অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেন। তাঁর কথাতেই উঠে আসে কেরালা কলামণ্ডলম তৈরির ইতিহাস এবং জাতীয়বাদী ভাল্লাথোল মেননের কথা।
টিম বজ্র জয়ন্তীর সামনে এদিন যে নৃত্যশৈলীগুলি কেরালা কালামণ্ডলমের ছাত্র-ছাত্রীরা উপস্থাপন করে তারমধ্যে ছিল কথাকলি, মোহিনিয়াট্টম, ভারতনাট্যম এবং কুচুপুদি।
৭৫ তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বজ্র জয়ন্তী যাত্রার উদ্যোগ। মোট ৭৫ জন এনসিসি ক্যাডার এই যাত্রায় অংশগ্রহণ করেছে। ১৫ অগাস্ট লাল কেল্লায় স্বাধীনতা দিবস উদযাপনে অংশ নেবে এরা। এর আগে বজ্র জয়ন্তী যাত্রা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত ছুঁয়ে যাবে। প্রত্যক্ষ করবে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসকে। এশিয়ানেট নিউজ এবং কেরালা এনসিসি ক্যাডেট-এর যৌথ উদ্যোগে মঙ্গলবার শুরু হয়েছে বজ্র জয়ন্তী যাত্রা। তিরুঅনন্তপুরমে কেরলের রাজ্যপাল আরিফ মহম্মদ খান জাতীয় পতাকা হাতে তুলে নিয়ে এই যাত্রার সূচনা করেন। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এশিয়ানেট নিউজ মিডিয়া অ্যান্ড এন্টারটেনমেন্ট প্রাইভেট লিমিটেডের এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যান রাজেশ কালরা। বজ্র জয়ন্তী যাত্রায় অংশ নেওয়া এনসিসি ক্যাডারদের তিনি শুভেচ্ছা জানান এবং সেই সঙ্গে বলেন এই যাত্রার মধ্যে দিয়ে তারা মহামূল্যবান অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করবে যা অন্যদের মধ্যেও এক অনুপ্রেরণা তৈরি করবে।
ভিডিও নিউজ- ইসরোর অন্দরমহলে টিম বজ্র জয়ন্তী যাত্রা, উঠে এল মহাকাশ গবেষণা নিয়ে হাজারো তথ্য
ভিডিও নিউজ- স্বাধীনতার ৭৫ বর্ষ, যাত্রা শুরু করল বজ্র জয়ন্তী যাত্রা, উদ্যোগে এশিয়ানেট নিউজ ও এনসিসি ক্যাডার