অভুক্ত ভারত। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে গোটা বিশ্বের নিরিখে ভারতের স্থান নেমে গিয়েছে বাংলাদেশ, পাকিস্তানের মতো দেশের নীচে। সদ্য প্রকাশিত বিশ্ব ক্ষুদা সূচকের নিরিখে গোটা বিশ্বের ১১৭টি দেশের মধ্যে ১০২ নম্বরে রয়েছে ভারত। ২০১৪ সালে মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার সময় ৭৭টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান ছিল ৫৫।
ভারতের বৃদ্ধির হার কমতে চলেছে বলে ইতিমধ্যেই পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাঙ্ক। দেশের অর্থনীতি নিয়ে আশার কথা শোনাতে পারেনি বিশ্বের প্রথমসারির মূল্যায়ন সংস্থাগুলিও। এসবকে অবশ্য আমল দিচ্ছেন না প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং তাঁর মন্ত্রীরা। এই পরিস্থিতিতে বিশ্ব ক্ষুদা সূচকে ভারতের স্থান পাকিস্তান, বাংলাদেশের মতো রাষ্ট্রের নীচে চলে যাওয়াটা মোদী সরকারের কাছে অবশ্যই নতুন অস্বস্তি।
২০১৪ সালের ফলের তুলনায় ভারত ভাল করেছে নাকি খারাপ, তা নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়। কারণ যে যে মানদণ্ডে এই মূল্যায়ন করা হয়, গতবারের তুলনায় এবার তা অনেকটাই বদলে গিয়েছে। মোট দেশের সংখ্যাও বেড়েছে। তা সত্ত্বেও এ বার ভারত যে ফলাফল করেছে, তাতে বিভিন্ন মহল থেকেই সমালোচনা শুরু হয়েছে।
নতুন এই তালিকা অনুযায়ী, শ্রীলঙ্কা (৬৬), বাংলাদেশ (৮৮) এবং পাকিস্তান (৯৪)-এর পরে রয়েছে ভারতের (১০২) স্থান। ওয়েল্টহাঙ্গারহিলফে অ্যান্ড কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইড নামে যে সংস্থা এই রিপোর্ট তৈরি করেছে, তাদের মতে বিশ্বের যে পয়তাল্লিশটি দেশে অভুক্ত থাকার সমস্যা সবথেকে বেশি, তাদের মধ্যে অন্যতম ভারত।
রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, ভারতে জন্মানো ছয় থেকে তেইশ মাস বয়সি মাত্র ৯.৬ শতাংশ শিশু ন্যূনতম সুষম আহার পায়। ২০১৫- ১৬ সালের হিসেব অনুযায়ী, দেশের ৯০ শতাংশ বাড়িতে উন্নত পানীয় জলের ব্যবস্থা থাকলেও ৩৯ শতাংশ বাড়িতে ঠিকঠাক নিকাশী ব্যবস্থা ছিল না।'
গত ২ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দাবি করেছিলেন, উন্মুক্ত শৌচকর্ম মুক্ত হয়েছে গোটা দেশ। কিন্তু সদ্য প্রকাশিত এই রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য আদতে ঠিক নয়। এখনও দেশের অনেক জায়গাতেই মানুষ উন্মুক্ত শৌচকর্মের অভ্যাস ছাড়তে পারেননি। যার কুপ্রভাবব পড়ছে দেশের জনগণের স্বাস্থ্যের উপরে। বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশুরা।
খিদে মেটানোর নিরিখে ভারতের ছবিটা হতাশাজনক হলেও এই ক্ষেত্রে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় বাংলাদেশ এবং নেপালের কাজ বিশেষ প্রশংসিত হয়েছে। বিশেষত স্থিতিশীল অর্থনৈতিক বৃদ্ধি এবং তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যেভাবে ক্ষুদা নিবারণে সাফল্য পেড়েছে বাংলাদেশ, তার বিশেষ উল্লেথ রয়েছে রিপোর্টে। বাংলাদেশ এবং নেপাল যেভাবে শিশুদের পুষ্টিকর আহার জোগানোয় ইতিবাচক পদক্ষেপ করেছে, তারও প্রশংসা করা হয়েছে রিপোর্টে।