রাষ্ট্রসঙ্ঘে মুখ পোড়াল পাকিস্তান, সন্ত্রাসবাদ ইস্যুতে ইসলামাবাদকে সপাট জবাব নয়াদিল্লির

আনোয়ার উল হক রাষ্ট্রসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৭৮তম অধিবেশনের সাধারণ বিতর্কের সময় কাশ্মীর ইস্যুটি উত্থাপন করেন। এর পরে, রাষ্ট্রসঙ্ঘে ভারতের স্থায়ী মিশনের প্রথম সচিব, পেটাল গেহলট, ইউএনজিএ-তে ভারতের পক্ষে কড়া জবাব দেন।

Parna Sengupta | Published : Sep 23, 2023 8:16 AM IST

ভারতের কাছে ফের সপাটে চড় খেল পাকিস্তান। পাকিস্তানের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার উল হক কাকার রাষ্ট্রসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদে ভারতের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করতে গিয়েই ধাক্কা খেলেন। বলাই বাহুল্য পাকিস্তানের বক্তব্যের কড়া নিন্দা করেছে ভারত। ভারত কাশ্মীর ইস্যুতে একটি উপযুক্ত জবাব দিয়েছে, বলেছে যে পাকিস্তান বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনকে আশ্রয় ও সুরক্ষা দেয়, তাদের প্রযুক্তিগত কৌশল দিয়ে সাহায্য করে। যে দেশ ২৬/১১ মুম্বই হামলার অপরাধীদের বিরুদ্ধে বিশ্বাসযোগ্য ব্যবস্থা নেয় না, তাদের কোনওভাবেই বিশ্বাস করা যায় না।

আনোয়ার উল হক রাষ্ট্রসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৭৮তম অধিবেশনের সাধারণ বিতর্কের সময় কাশ্মীর ইস্যুটি উত্থাপন করেন। এর পরে, রাষ্ট্রসঙ্ঘে ভারতের স্থায়ী মিশনের প্রথম সচিব, পেটাল গেহলট, ইউএনজিএ-তে ভারতের পক্ষে কড়া জবাব দেন।

স্থায়ী মিশনের প্রথম সচিব পেটাল গেহলট বলেন, 'পাকিস্তান বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক আন্তর্জাতিকভাবে নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী সংগঠন এবং সন্ত্রাসীদের আশ্রয় ও সুরক্ষা দিয়েছে। আমরা পাকিস্তানের কাছে দাবি জানাই যে মুম্বইয়ের সন্ত্রাসী হামলার অপরাধীদের বিরুদ্ধে বিশ্বাসযোগ্য ব্যবস্থা নেওয়া উচিত, যাদের ভুক্তভোগীরা ১৫ বছর পরেও ন্যায়বিচারের জন্য অপেক্ষা করছে।

তিনি বলেন, 'দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য পাকিস্তানকে তিন স্তরে পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রথমত, আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাস বন্ধ করুন এবং অবিলম্বে সন্ত্রাসবাদের এই পরিকাঠামো তৈরি করা আটকান। দ্বিতীয়ত, বেআইনিভাবে ও জোর করা দখল করা ভারতীয় এলাকা খালি করে দিন এবং তৃতীয়ত, পাকিস্তানে সংখ্যালঘুদের মানবাধিকারের ক্রমাগত গুরুতর লঙ্ঘন বন্ধ করুন।

পাকিস্তানের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী কাকার বলেছিলেন, পাকিস্তান ভারতসহ তার সব প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ ও ফলপ্রসূ সম্পর্ক চায়। তিনি বলেছিলেন যে কাশ্মীর পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে শান্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

ভারত তার উত্তরে জানিয়েছে যে জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তিনি বলেন, 'জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের বিষয়গুলি সম্পূর্ণরূপে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। পাকিস্তানের আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মন্তব্য করার অধিকার নেই।

তরুণ ভারতীয় রাষ্ট্রদূত বলেন যে পাকিস্তান, বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ মানবাধিকারের রেকর্ডের দেশ হিসাবে পরিচিত। বিশেষ করে সংখ্যালঘু এবং মহিলাদের অধিকারের ক্ষেত্রে, বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের দিকে আঙুল তোলার চেয়ে নিজেদের দেশের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সামলালে বেশি কাজ হবে।

ভারত বলেছে যে পাকিস্তান রাষ্ট্রসঙ্ঘের প্ল্যাটফর্মের অপব্যবহার করে ভারতের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন ও বিদ্বেষপূর্ণ প্রচার চালাতে অভ্যস্ত অপরাধী হয়ে উঠেছে। গেহলট বলেন যে রাষ্ট্রসঙ্ঘের সদস্য রাষ্ট্র এবং অন্যান্য বহুজাতিক সংস্থাগুলি ভালভাবে জানে যে পাকিস্তান "তার দুর্বল মানবাধিকার রেকর্ড থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগ সরানোর জন্য এটি করে।"

পাকিস্তানে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে একাধিক হিংসার ঘটনার ঘটেছে। সেইসব উদাহরণ তুলে ধরে গেহলট বলেন ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে দেশের ফয়সালাবাদ জেলার জরানওয়ালায় সংখ্যালঘু খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বড় আকারের বর্বরতার ঘটনা ঘটে। সেই সময় ১৯টি গির্জা এবং ৮৯ জন খ্রিস্টান নিহত হয়েছিল। তিনি আরও বলেন, 'আহমাদিয়া মুসলমানদের সঙ্গেও একই ধরনের আচরণ করা হয়েছিল এবং তাদের ধর্মীয় স্থানগুলো ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। পাকিস্তানের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মহিলাদের, বিশেষ করে হিন্দু, শিখ এবং খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের অবস্থা করুণ।

পাকিস্তানের মানবাধিকার কমিশনের প্রকাশিত সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতি বছর পাকিস্তানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের আনুমানিক হাজারের বেশি মহিলা অপহরণ, জোরপূর্বক ধর্মান্তরকরণ এবং জোরপূর্বক বিবাহের শিকার হন।

Share this article
click me!