টুইটারের প্রাক্তন সিইও জ্যাক ডোরসে-র বয়ান ঘিরে ছড়িয়েছে চাঞ্চল্য। ডোরসে দাবি করেছেন, ভারত সরকার একটা সময় তাঁকে হুমকি দিয়েছিল যে টুইটার ইন্ডিয়াতে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার। এই বয়ান নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া সামনে এসেছে।
জ্যাক ডোরসে একটা আস্ত মিথ্যেবাদী। এই ভাষাতেই টুইটারের প্রাক্তন সিইও-কে বিশেষিত করলেন কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রী রাজীব চন্দ্রশেখর। তিনি আরও জানিয়ে বলেছেন, ডোরসের মন্তব্য উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে ভারতের ভাবমূর্তিকে কালিমালিপ্ত করা এবং এটা এটা টুইটারের ইতিহাসে একটা জঘন্যতম বিষয় হিসাবে থেকে গেল। রাজীব চন্দ্রশেখর তাঁর বয়ানে আরও জানিয়েছেন যে আজ পর্যন্ত কেউ বলতে পারবে না যে টুইটারের কাউকে জেলে পাঠানো হয়েছে বা টুইটারের উপরে নিষেধাজ্ঞা বলবৎ করার মতো কোনও বিবেচনা হয়েছে।
টুইটারের প্রাক্তন সিইও জ্যাক ডোরসে-র বয়ানে ক্ষিপ্ত কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আরও জানিয়ে বলেছেন যে, আমাদের একটার উদ্দেশ্য ছিল যে ভারতীয় আইন-কে টুইটারের কর্মপদ্ধতিতে বলবৎ করা। তিনি বয়ানে আরও উল্লেখ করেছেন যে, জ্যাক ডোরসে-র নেতৃত্বে টুইটার কোনওভাবেই ভারতীয় আইনকে মেনে চলেনি। তারা ছিল লাগাতার আইন-লঙ্ঘনকারী একটি সংস্থা। ২০২০ থেকে ২০২২-এর জুন পর্যন্ত টুইটার লাগাতার ভারতীয় আইনকে লঙ্ঘন করে তাদের মাইক্রো ব্লগিং সাইট দিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আক্রমণ শানিয়েছিল। একমাত্র ২০২২ সালের জুন মাসের পর থেকে টুইটার ভারতীয় আইন মেনে কাজ করতে শুরু করে।
রাজীব চন্দ্রশেখর তাঁর বয়ানে আরও জানিয়েছেন যে, ডোরসে নেতৃত্বে টুইটার কখনও মনেই করেনি যে ভারত একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র এবং তার নিজস্ব আইন-শৃঙ্খলা রয়েছে। আর সেই আইন-শৃঙ্খলা মেনে চলতে প্রত্যেকে বাধ্য। উল্টে ডোরসেরা এমন একটা ভাব দেখিয়েছিলেন যেন ভারতীয় আইন নিয়ে ছেলেখেলা করা যায়।
এই প্রসঙ্গেই রাজীব চন্দ্রশেখর উল্লেখ করেছেন ২০২১ সালে দেশে হওয়া কৃষক আন্দোলনের। তিনি অভিযোগ করেছেন যে এই সময় টুইটারের এই আন্দোলনকে প্রতিরোধ করা নিয়ে একাধিক ফেক নিউজ বা মিথ্যা খবর প্রচার হয়েছিল টুইটারে। বহুবার বলা হয়েছিল যে কৃষক আন্দোলন প্রতিরোধ করতে নাকি গণহত্যা করা হচ্ছে। আসলে এ সবই ছিল ফেক নিউজ, যা প্রচার হয়েছিল টুইটারের প্ল্যাটফর্মে।
রাজীব চন্দ্রশেখর তাঁর বয়ানে আরও জানিয়েছেন যে, ভারত সরকার যে কোনও ধরনের ভুয়ো খবর বা ফেক নিউজ-এর প্রচারকে বিরত করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। কারণ, এই ধরনের ভুয়ো খবরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে আগামী দিনে আরও বড় সমস্যা এবং আইন-শৃঙ্খলা জনিত সমস্যা তৈরির হওয়ার আশঙ্কা ছিল। দেশ ভাগের সময় যে পরিস্থিতি ছিল টুইটার এই সময় তেমনই একটা পরিস্থিতির জন্ম দিয়েছিল বলেও মন্তব্য করেছেন রাজীব চন্দ্রশেখর। আসলে জ্যাকের নেতৃত্বে থাকা টুইটার কোনওভাবেই ভুয়ো খবরের উপরে ব্যবস্থা নেওয়া বা টুইটারের প্ল্যাটফর্মে এগুলির প্রচারকে বিরত করতে চায়নি। অথচ আমেরিকায় এই টুইটার সরকারের চাপে পড়ে ভুয়ো খবর প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছিল এবং ভবিষ্যতে যাতে এমন খবর প্রচার না হয় তারও ব্যবস্থা নিয়েছিল। কিন্তু, এদের সমস্যা শুধুমাত্র ভারতের মতো দেশের জন্য।
১২ জুন একটি ইউটিউব চ্যানেলকে সাক্ষাৎকার দেন টুইটারের প্রাক্তন সিইও জ্যাক ডোরসে। সেখানেই তাঁকে যে প্রশ্ন করা হয় তারমধ্যে একটি প্রশ্ন ছিল যে কোনও বিদেশি রাষ্ট্র তাকে কোনওভাবে কখনও চাপ দিয়েছিল কি না? এর জবাব দিতে গিয়েই জ্যাক ডোরসে বলেন, যে ভারত সরকার একটা সময় তাঁকে কড়া হুমকি দিয়েছিল শুধু নয়, টুইটার ইন্ডিয়া-কে বন্ধ করে দেওয়ারও হুঁশিয়ারি দিয়েছিল। জ্যাক ডোরসে এই মন্তব্যের পর থেকে আন্তর্জাতিক স্তরে বিতর্ক শুরু হয়েছে। অনেকেই জ্যাক ডোরসে মন্তব্যকে হাতিয়ার করে মোদী সরকারকে তোপ দেগেছেন। পাল্টা অবশ্য প্রতিক্রিয়া দিয়ে জ্যাক ডোরসেকে একটা মিথ্যেবাদী বলে অভিহিত করেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজীব চন্দ্রশেখর। এমনকী, জ্যাক ডোরসের বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় তোপ দেগেছেন মোদী পন্থীরাও।
আরও পড়ুন-
CoWIN পোর্টাল থেকে ব্যবহারকারীদের গোপন তথ্য ফাঁস? কেন্দ্রের অবস্থান স্পষ্ট করলেন মন্ত্রী রাজীব চন্দ্রশেখর
ফোন নম্বর ছাড়াই করা যাবে কল, সোশ্যাল দুনিয়ায় নতুন ব্যবস্থা নিয়ে এল টুইটার
ফের গোলযোগের শিকার হল টুইটার, বিশ্ব জুড়ে থমকে গেলেন হাজার হাজার ব্যবহারকারী