ভারতীয় সেনাবাহিনীর এই জয় এত সহজ ছিল না। কার্গিল যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগেও পাকিস্তানি সৈন্যরা এখানকার উঁচু পাহাড়ে লুকিয়ে ছিল। সৈন্যরা এখানে দখল করে তাদের আস্তানায় পরিণত করেছিল।
সময়টা ২৬ জুলাই ১৯৯৯, টাইগার হিলে বিজয়ের পতাকা উড়েছিল। ঐতিহাসিক এই দিনে ভারতীয় সশস্ত্র সেনাবাহিনী শত্রুদের যোগ্য জবাব দিয়েছিল। কারগিল বিজয় দিবস সেই বীরদের স্মরণ করার জন্য উদযাপিত হয়, যাদের ছাড়া এই জয়লাভ সম্ভব ছিল না। ভারতীয় সেনাবাহিনীর এই জয় এত সহজ ছিল না। কার্গিল যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগেও পাকিস্তানি সৈন্যরা এখানকার উঁচু পাহাড়ে লুকিয়ে ছিল। সৈন্যরা এখানে দখল করে তাদের আস্তানায় পরিণত করেছিল।
১৯৯৯ সালের ৪ মে, পাকিস্তানের ১২ জন সৈন্য আজম পোস্টে প্রবেশ করে এবং এখান থেকে ভারতীয় সৈন্যদের আক্রমণ করার কৌশল তৈরি করেছিল। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাস একজন ভারতীয় মেষ পালক যুবক ওদের দেখে ফেলে। এদিকে পাকিস্তানি সেনাদের লুকিয়ে থাকার খবর পেয়ে সেই যুবক ভারতীয় সেনাদের সতর্ক করে দেন। এই ঘটনা অবধি কেউ জানত না যে এই সব ঐতিহাসিক কারগিল যুদ্ধে পরিণত হতে চলেছে। রাখালের কাছ থেকে পাওয়া খবরের ভিত্তিতে, ভারতীয় সেনাবাহিনী সতর্ক হয়ে যায় এবং কিছু সৈন্যকে ওই স্থানে পাঠানো হয়। পাকিস্তানি অনুপ্রবেকারীরা পাহাড়ের দিকে অগ্রসর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভারতীয় সৈন্যরা বিভিন্ন দিক ও চূড়া থেকে আক্রমণ শুরু করে। এই ঘটনার পর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর উদ্দেশ্য জানা যায়। এভাবেই শুরু হয় অপারেশন বিজয়।
এই ঘটনার খবর পাওয়া মাত্রই সতর্ক হয়ে যায় ভারতীয় সেনাবাহিনী। তৎকালীন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জর্জ ফার্নান্দেজ তার রাশিয়া সফর বাতিল করেন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে মোকাবেলা করার জন্য আক্রমণের কৌশল তৈরি করা হয় এবং শুরু হয় অপারেশন বিজয় পাকিস্তান আগে থেকেই যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত ছিল। তাড়া প্রতিটা পাহাড় দখল করে এমন একটি কৌশল অবলম্বন করেছিলেন, যার কারণে ভারতীয় সৈন্যদের প্রচুর অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। এর জবাব দিতে ভারতীয় সেনারা পাহাড়ে উঠার জন্য রাতের সময় বেছে নেয়। এই পদক্ষেপের কারণে, ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রাথমিক পর্যায়ে অনেক ক্ষতিও হয়। তবে ভারতীয় সেনাবাহিনীর এই পদক্ষেপ বাজি উল্টে দেয়।
যুদ্ধে, তিনটি ভারতীয় সেনাবাহিনী তাদের নিজ নিজ কৌশলের মাধ্যমে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পরিকল্পনা নস্যাৎ করার সমস্ত চেষ্টা করেছিল। বিমান বাহিনী তার Mirage-2000 এবং MiG-29 এর সাহায্যে পাকিস্তানী সৈন্যদের উপর বোমাবর্ষণ শুরু করে, কিন্তু এই সময়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে দুইজন ভারতীয় যোদ্ধা নিহত হয় এবং বিমানটিও বিধ্বস্ত হয়। অপারেশন তালওয়ার চালিয়ে নৌবাহিনী যুদ্ধের জন্য পণ্য ও জ্বালানি পাঠানোর কারণে পাকিস্তানের বেশিরভাগ বন্দরের রাস্তা বন্ধ করে দেয়। এই যুদ্ধের সবচেয়ে বড় টার্নিং পয়েন্ট আসে যখন বোফর্স বন্দুককে যুদ্ধের অংশ করা হয়। তাদেরকে যুদ্ধক্ষেত্রে নিক্ষেপ করা হয়। বোফর্স আক্রমণের জন্য, ৩ জন সাহসী সেনা অফিসার এবং ৬৯ জন সৈনিককে নির্বাচিত করা হয়েছিল। কারা এই কৌশল তৈরি করে এই যুদ্ধকে শেষ পর্যন্ত নিয়ে এসেছে।
এই সময়টা ছিল যখন আকাশ থেকে বিমান বাহিনী এবং রণক্ষেত্র থেকে বোফর্স আর্টিলারি আক্রমণ পাকিস্তানকে যুদ্ধক্ষেত্র ছেড়ে যেতে বাধ্য করেছিল। ভারতীয় সেনাবাহিনীর এই পদক্ষেপের সামনে পাকিস্তানি সেনাদের ছুটে যেতে দেখা যায়। তাদের পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। দীর্ঘ দিনের যুদ্ধের পর, ভারত ২৬ জুলাই ১৯৯৯ সালে কার্গিলের শেষ পাহারটি দখল করে। এই দিনটিকে বিজয় দিবস হিসেবে পালন করা হয়।