লকডাউন পরবর্তী ভারতকে চলতে হবে 'ত্রিপিল-টি' নীতিতে, বলল মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়

লকডাউনের কারণে ভারতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা কম
ভারতে রীতিমত সফল লকডাউন
জানিয়েছে আমেরিকার মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়
লকডাউনে পরবর্তী কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিৎ
 

Asianet News Bangla | Published : May 23, 2020 8:03 AM IST

লকডাউনের কারেণে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ অনেকটাই কম ছড়িয়েছিল ভারতে। কিন্তু লকডাউন শিথিল হওযার সঙ্গে সঙ্গেই বাড়তে শুরু করেছে আক্রান্তের সংখ্যা। গত ২২মে নতুন করে আরও ৬ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। আর ২৩ মে নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা ৬.৬৫৪ জন। দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১ লক্ষ ২৫ হাজার ১০১ জন। মৃত্যু হয়েছে ৩, ৭২০ জনের। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে মৃতের সংখ্যা ১৩৮ জন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণা পত্র বলছে লকডাউনের কারণেই ভারত করোনা আক্রান্তের সংখ্যা সীমিত রাখতে পরেছিল। কিন্তু এবার কী হবে? ধীরে ধীরে শিথিল করা হচ্ছে লকডাউনের নিয়ম। আর তাতেই দেখা যাচ্ছে ক্রমশই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। কারণ মে মাসের প্রথম দিকেও নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা দিনে ৩ হাজারের বেশি ছিল না। তাই অনেকেই মনে করছেন লকডাউন জারি থাকলেও দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে থাকবে। 

 এই অবস্থা দাঁড়িয়ে মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব পাব্লিক হেল্থ বলছে ভারতে করোনা ভাইরাসের রিপ্রোডাকশান রেট যেখানে ২৪ মে লকডাউনের আগে ছিল ৩.৩৬ সেখানে প্রথম  লকডাউনের পরে অর্থাৎ ১৪ এপ্রিল সেই কিছুটা কমে গিয়ে হয়েছিল ১.৭১। পরবর্তীকালে তা আরও কমে গিয়ে হয়েছে ১.৪৬ ও ১.২৭। এই হিসেব থেকে পরিষ্কার লকডাউনের কারণেই আটকে দেওয়া গেছে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণকে। কিন্তু এখনও রিপ্রোডাকশান রেট একের বেশি রয়েছে। যা নিয়েই চিন্তিত বিশেষজ্ঞরা।

অন্যদিকে ইন্ডিয়ান স্ট্যাস্টিক্যাল ইনস্টিটিউট জানিয়েছে, লকডাউনের কারণেই করোনাভাইরাসের সংক্রমণের হাত থেকে ২০ লক্ষ মানুষকে সংক্রমিত হওয়ার হাত থেকে বাঁচান গেছে। একই সঙ্গে আটকে দেওয়া হেছে ৫৪ হাজার মানুষের মৃত্যু। কিন্তু করোনাভাইরাসের রিপ্রোডাকশান রেল এখনও একেকটি রাজ্যে ১এর পর থাকা উদ্বেগ বড়ছে। কারণ ধীরে ধীরে শিথিল হচ্ছে লকডাউনের নিয়ম। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে মিশিগান বিশ্বিবিদ্যালয়ের স্কুল অব পাব্লিক হেল্থের অধ্যাপক ভ্রমর মুখোপাধ্যায় বলেন 'ত্রিপিল-টি' এই পদ্ধতি অবলম্বন করেই করোনা মোকাবিলায় ভারতে আগামী দিনে এগেয়ে যেতে হবে। 

কী এই   'ত্রিপিল-টি' ? ট্রিপিল টি হল টেস্ট, ট্রেস আর ট্রিট। অর্থাৎ পরীক্ষা, অনুসন্ধান আর চিকিৎসা। তাঁর মতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে এলোমোলো ও দ্রুত পরীক্ষা খুবই জরুরী। তাঁর মতে আমরা আগামী ২ সপ্তাহের মধ্যে ৪০ মিলিয়ন পরীক্ষা করা কখনই সম্ভব নয়। কিন্তু আক্রান্তদের চিহ্নিত করা ও তাঁরা কার কার সংস্পর্শে এসেছেন  তা চিহ্নিত করা যেতেই পারে।মহামারী বিশেষজ্ঞ এই বিজ্ঞানীর মতে দেশের মানুষকে রক্ষা করার পাশাপাশি দেশের আর্থনীতি বাঁচিয়ে রাখাও অত্যন্ত জরুরী।  তিনি রাজ্যগুলি থেকে প্রাপ্ত রিপ্রোডাকশন রেট অব ভাইরাসের তথ্য তুলে ধরে দেখিয়েছেন প্রথম স্থানে রয়েছে ওড়িশা। বেশ কয়েকটি রাজ্যকে এখনও পর্যবেক্ষণ করা জরুরি বলেও জানিয়েছেন তিনি। তাঁর মতে জনস্বাস্থ্য বিষয়টিতে সরকার ও স্থানীয় বাসিন্দারা একে ওপরের সঙ্গে যুক্ত। কারণ এখানে সরকার যেমন নিজের ইমেজ তৈরির জন্য  তথ্য গোপন করতে পারবে না। পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দারাও আক্রান্ত হলে লক্ষণ গোপন করতে পারবে না। জনস্বাস্থ্য গড়ে তুলতে তাই জনগণও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই ক্ষেত্রে করল রোল মডেল হতে পারে। আগামী দিনে বাকি রাজ্যগুলিও কেরলকে দৃষ্টান্ত হিসেবে গ্রহণ করে এগিয়ে যাতে পারে। 


কিন্তু লকডাউনের কারণে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারগুলি ব্যাপক হারে আর্থিত ক্ষতিক মুখোমুখি হচ্ছে। গত এপ্রিলের হিসেব অনুযায়ী এককটি রাজ্যে রাজস্ব আদায় না হওয়ায়  প্রায় ৯৭,০০০ কোটি টাকা ক্ষতি গুণেছে। সুতরাং এই পর্যায়ে দাঁড়িয়ে লকডাউন চালিয়ে যাওয়ার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। কারণ কোনও দেশই দীর্ঘকালীন লকডাউনের পথে হাঁটতে পারে না। তাই ট্রি টি নীতিকেই আগামী দিনে পাথেয় করা জরুরি। 

Share this article
click me!