লুবনা শাহীনও তাঁর বাবা ও মায়ের দেখানো পথেই হাঁটার জন্য দৃঢ়় প্রতিজ্ঞ। তাঁর বন্ধু, আত্মীয় পরিজনরা ধর্মের কথা বলে মৃত্যুর পরে দেহ ও অঙ্গা দান থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তিনি নিজের জেদে অনড়।
মুসলিমদের মধ্যে ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে দেহ ও অঙ্গদান এখনও বেশ কম। কিন্তু অমসের আফতাব আহমেদ ও তাঁর স্ত্রী মুসফিকা সুলতানা এই বিষয়ে একটি উদাহরণ স্থাপন করেছেন। এই মুসলিম দম্পতি চিকিৎসা বিজ্ঞআনে গবষণা ও পড়াশুনার জন্য নিজেদের দেহ দান করেছিলেন। শুধুমাত্র পড়ুয়াদের সুবিধে আর উন্নতির জন্যই তাঁরা সমাজের মূল স্রোতের বিরুদ্ধে গিয়ে পদক্ষেপ করেছিলানে।
মৃত দম্পতির মেয়ে লুবনা শাহীনও তাঁর বাবা ও মায়ের দেখানো পথেই হাঁটার জন্য দৃঢ়় প্রতিজ্ঞ। তাঁর বন্ধু, আত্মীয় পরিজনরা ধর্মের কথা বলে মৃত্যুর পরে দেহ ও অঙ্গা দান থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু আওয়াজ দ্যা ভয়েসের প্রতিবেদন অনুযায়ী লুবনা শাহীন বাবা মায়ের পথেই হাঁটছেন। তিনি জানিয়েছেন,তিনি অত্যন্ত সৌভাগ্যবান যে তিনি একটি প্রগতিশীল মুসলিম পরিবারে বেড়ে উঠেছেন যেখানে তার বোন এবং নিজেকে প্রশ্ন করা শেখানো হয়েছিল। তিনি বলেন, ধর্মীয় মৌলবাদ বা ধর্মীয় মতবাদের চর্চা করা হয়নি, যদিও আমাদের সংস্কৃতিকে কিছু উপায়ে ইসলাম দ্বারা সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।
লুবনা শাহিন জানিয়েছেন তাঁর বাবা ও মা দুজনেরই ছোট-বড় যেকোনও ভাবে মানুষের সেবা করার চেষ্টা করেগেছেন। সেবাই ছিল তাঁদের জীবনের মূল ধর্ম। আর সেই কারণে দুজনেই মৃত্যুর পর দেহ ও চোখ দান করে গিয়েছিলেন। তাঁরা দুজনেই ক্যান্সারের রোগী ছিলেন। কিন্তু এই রোগ যদি না হত তাহলে তাহলে তাদের অঙ্গ ও শরীর অনেক মানুষের জীবন ফিরিয়ে দিতে পারত বলেও জানিয়েছেন তিনি।
লুবনা আরও বলেন , 'আমি যখন কলেজে ছিলাম, আমি একটি রক্তদান শিবিরের জন্য সাইন আপ করেছিলাম এবং যখন আমি আমার বাবা-মাকে এটি সম্পর্কে বলেছিলাম, তখন তারা আমাকে আবার এটি করতে উত্সাহিত করেছিলেন৷ যদিও আমি এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে অঙ্গ বা শরীর দান করার জন্য সাইন আপ করিনি৷ , আমি শীঘ্রই এটি করার পরিকল্পনা করছি'। মুসলিম সমাজের সদস্য হলেও শাহিন ও তাঁর বড় বোন নিনন শেনাজ চিকিৎসা ও গবেষণার জন্য নিজেদের অঙ্গ ও দেহ দানের অঙ্গিকার করেছেন। গুয়াহাটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কিন্তু সেই সময় তাঁদের বাবা ও মায়ের দেহদান করা মোটেই সহজ হয়নি।
সেই অভিজ্ঞতার কথাও শেয়ার করেছেন তাঁরা। বলেছেন, 'যেদিন আমার বাবার মরদেহ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, আমাদের একদল লোক ছিল যারা আমাদের বোঝানোর চেষ্টা করেছিল তার লাশ দাফন করাই মুসলিম সমাজে বাধ্যতামূলক। যাইহোক, আমার বাবা এই প্রতিরোধের পূর্বাভাস দিয়েছিলেন এবং তার সিদ্ধান্তের বিষয়ে একটি উইল রেখে গিয়েছিলেন। আমার মায়ের ক্ষেত্রে, তিনি তার পরিবারের কাছ থেকে প্রতিরোধের পূর্বাভাস দেননি এবং কেবল মৌখিকভাবে আমাদের তার ইচ্ছার কথা বলেছিলেন। কিন্তু তারপরও আমাকে সেই মুসলিম পরিবারের বন্ধুদের দূরে রেখেই কাজ করতে হয়েছিল। যদিও তারা আমাকে ফোন করেছিল এবং আমাকে আমার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করার চেষ্টা করেছিল। তারা তাদের চরম বিরক্তি প্রকাশ করে ইঙ্গিত দিয়েছিল যে সে জান্নাতে (জান্নাতে) যাবে না। কিন্তু একই সময়ে, আমরা অন্যান্য মুসলমানদের কাছ থেকেও বার্তা পেয়েছি যারা তাদের কাজের প্রশংসা করেছে'।
মুসফিকা সুলতানার প্রতি শ্রদ্ঝা নিবেদন করেছেন পরিবার ও বন্ধুরা। গুয়াহাটির হাতিগাঁওয়ের মাজার রোডের বাসিন্দা মুসফিকা সুলতানার মৃতদেহ ২০২২ সালে জিএমসিএইচ এর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল। ২০২২ সালের ৮ সেপ্টেম্বর রাতে তিনি নিজের বাড়িতে মারা গিয়েছিলেন। তাঁর চোখ দান করা হয়েছিল শঙ্করদেহ নেত্রালয়ে। মুসফিকা সুলতানার স্বামী আফতাব আহমেদ, একজন আমলা যিনি তার পূর্বে মারা গিয়েছিলেন, তিনিও 2011 সালে একই উদ্দেশ্যে তার দেহ জিএমসিএইচকে দান করেছিলেন।
পবিত্র কুরআন এবং হাদিস (নবী মোহাম্মদের লিপিবদ্ধ শব্দ) অঙ্গদানের বিষয়ে নীরব। যেহেতু অঙ্গ দান এবং প্রতিস্থাপন আধুনিক চিকিৎসার একটি বিস্ময়, 1905 সালে প্রথম সফল কর্নিয়াল ট্রান্সপ্লান্ট এবং 1954 সালে প্রথম জীবন্ত কিডনি প্রতিস্থাপন, এই নীরবতা যুক্তিযুক্ত। ইসলামিক পন্ডিত এবং ধর্মগুরুরা এই বিষয়ে বিতর্ক করেছেন এবং তাদের অধিকাংশই মনে করেন যে অঙ্গ দান একটি মহান দাতব্য কাজ এবং ইসলামের নীতি দ্বারা সমর্থিত।
তিনি আরও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী অঙ্গদান ও দেহদান করার জন্য দেশবাসীকে আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু এই সময় এই বিষয়ে আরও ব্যাপক প্রচার অভিযান প্রয়োজন রয়েছে। তাতে দূর হবে অনেক সামাজিক বাধা। দেহ বা অঙ্গ দানে এগিয়ে আসবে সাধারণ মানুষও। এটাই জরুরি বলে তিনি মনে করেন।
আরও পড়ুনঃ
PM Visit In USA: প্রধানমন্ত্রী মোদীর মার্কিন সফর বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ, এটাই প্রথম মোদীর রাষ্ট্রীয় সফর
ভোট ঘিরে কেন বারবার রক্তাক্ত হচ্ছে বাংলার মাটি? বাম আমলের সন্ত্রাসের ছায়া বর্তমান তৃণমূল জমানাতেও
RAW প্রধান হচ্ছেন রবি সিনহা, প্রযুক্তিতে তুখড় IPS অফিসারের সামনে একাধিক কঠিন চ্যালেঞ্জ