মণিপুরের রিমস হাসপাতালে এমডি পড়ুয়া আহেল দিন গুনছেন কবে বাড়ি ফিরতে পারবেন। এশিয়ানেট নিউজ বাংলার যোগাযোগ করেছিল তাঁর সঙ্গে। তিনি জানান এতদিন তাও কিছু দোকান থেকে খাবার আসছিল। রবিবার থেকে সেই দোকানও বন্ধ।
আদিবাসী একতা মার্চের জেরে গোটা মণিপুর জ্বলছে। স্থানীয় বাসিন্দা তো বটেই, বিভিন্ন রাজ্য থেকে সেখানে কর্মসূত্রে থাকা মানুষজনও প্রাণভয়ে পালাচ্ছেন রাজ্য ছেড়ে। ইতিমধ্যেই মণিপুর থেকে ৫৪ জনের মৃত্যুর খবর এসেছে। সেনা ক্যাম্প করে উদ্ধার হওয়া মানুষদের রাখা হয়েছে। সেই সেনা ক্যাম্পেই মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়েছে কলকাতার চিকিৎসক আহেল বন্দ্যোপাধ্যায়।
মণিপুরের রিমস হাসপাতালে এমডি পড়ুয়া আহেল দিন গুনছেন কবে বাড়ি ফিরতে পারবেন। এশিয়ানেট নিউজ বাংলার যোগাযোগ করেছিল তাঁর সঙ্গে। তিনি জানান এতদিন তাও কিছু দোকান থেকে খাবার আসছিল। রবিবার থেকে সেই দোকানও বন্ধ। ফলে রবিবার সকালের খাবার জুটলেও, এরপর থেকে কি হবে কেউ বলতে পারছেন না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের পক্ষ থেকে একটি হেল্পলাইন নম্বর চালু করা হয়েছিল, মণিপুরের প্রবাসী বাঙালিদের জন্য। অথচ আহেল সেই নম্বরে কোনও ভাবেই যোগাযোগ করতে পারেননি। অন্যদিকে, রাজ্য প্রশাসনের তরফে কোনও সাহায্য বা উদ্ধারকাজের খবরও পাচ্ছেন না তিনি।
আহেলের সঙ্গে রয়েছেন নাগাল্যান্ড, রাজস্থান ও তামিলনাড়ুর চিকিৎসক পড়ুয়ারা। তাদের রাজ্য থেকে সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করে উদ্ধারের ব্যবস্থা করা হলেও, বাংলা থেকে সেরকম কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি বলে আহেলের অভিযোগ। সেনা ক্যাম্পে কার্যত নিদ্রাবিহীন রাত কাটছে তাদের। তাদের থাকতে দেওয়া হয়েছে মোরে হাসপাতালের একটি ঘরে। যেখান থেকে মুর্হুমুহু শোনা যাচ্ছে গুলি ও বোমাবাজির আওয়াজ।
এশিয়ানেট নিউজ বাংলাকে আহেল জানালেন তাঁর ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা। তিনি জানা, তাদের হাসপাতালে হামলা হওয়ার আগে কোনও রকমে সেখানে থেকে তাঁদের বের করে দেওয়া হয়। এখন যেখানে তাঁরা আছে, একটা ঘরে ১০ জনকে থাকতে হচ্ছে, সঙ্গে রয়েছে সদ্যোজাত শিশুও। কীভাবে এরপর তাঁরা থাকবেন, সে চিন্তাই আপাতত করছেন আহেলরা।
'আদিবাসী একতা মার্চ'-এর জেরে হিংসা ছড়িয়ে পড়েছে গোটা রাজ্যে। পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার, হিংসা কবলিত এলাকায় গুলি করার নির্দেশ জারি করা হয়েছে। একই সময়ে, এখন উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ে মণিপুরগামী ট্রেনগুলি বন্ধ করে দিয়েছে।
কী হচ্ছে মণিপুরে?
দীর্ঘদিন ধরে মণিপুরের সমতলের বাসিন্দা মেইতেই সম্প্রদায়ের সঙ্গে কুকি এবং নাগা জনগোষ্ঠীর বিরোধ চলছে। তফসিলি উপজাতিদের তালিকাভুক্ত হওয়া মেইতেই সম্প্রদায়ের দীর্ঘদিনের দাবি। সম্প্রতি হাইকোর্ট মেইতেই সম্প্রদায়কে তফসিলি উপজাতিভুক্তর তালিকায় আনা যায় কি না, তা খতিয়ে দেখতে রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে। এর পরেই নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে উত্তর-পূর্বের এই রাজ্য। হাইকোর্টের নির্দেশের প্রতিবাদে বুধবার চূড়াচাঁদপুর জেলার তোরবাঙে ‘অল ট্রাইবাল স্টুডেন্ট ইউনিয়ন মণিপুর’ (এটিএসইউএম) ‘আদিবাসী সংহতি পদযাত্রা’র ডাক দেয়। সেখান থেকেই এই হিংসার সূত্রপাত।