সাপ, এই সরিসৃপ প্রাণীর নাম শুনলে শিঁরদাড়ায় ঠান্ডা বাতাস বয়ে যায়ন না এমন মানুষের সংখ্যা নগন্য। সাপ বিষধর হোক বা বিষহীন তাকে দেখলেই ভয়ের উদ্রেক হতে বাধ্য। বর্তমানে এদেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি নিয়ে সবাই চিন্তিত। প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। এর মাঝেই এল একটি রিপোর্ট, যা কপালে চিন্তার ভাজ আর বাড়িয়ে দিয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে এদেশে সাপের কামড়ে মৃত্যু বেড়েই চলেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে গোটা বিশ্বে সাপের কামড়ে মৃত্যু কমিয়ে আনা। কিন্তু সেখানে দেখা যাচ্ছে বিগত ৯ বছরে ভারতে কমার বদলে সাপের কামড়ে মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। দু'হাজার সাল থেকে হিসেবে ধরলে, বিগত ২০ বছরে ভারতে শুধু ১২ লক্ষ মানুষ মারা গিয়েছেন সাপের কামড়ে। সম্প্রতিক এক রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে সর্পদংশনে ভারতে বার্ষিক মৃত্যু হয় গড়ে ৫৮ হাজার মানুষের। ২০১১ সালের রিপোর্টে বছরে ৪৬ হাজার মৃত্যুর কারণ হিসাবে সাপের কামড়কে উল্লেখ করা হয়েছিল। দেখা যাচ্ছে ৯ বছরে সেই সংখ্যাটা বার্ষিক ১২ হাজার বৃদ্ধি পেয়েছে।
এদেশে সর্পদংশনে মৃত্যুর অর্ধেকই ঘটে বর্ষার সময়। আর এই মৃত্যুর ৭০ শতাংশই দেখা যায় দেশের ৮টি রাজ্যে। যার মধ্যে রয়েছে বিহার, ঝাড়খণ্ড, মধ্যপ্রদেশ, ওডিশা, উত্তরপ্রদেশ, অন্ধ্রপ্রদেশ, রাজস্থান ও গুজরাত। গত দু-দশক ধরে এই রাজ্যগুলির গ্রামীণ এলাকায় মোট মৃত্যুর অর্ধেকই কিন্তু ঘটেছে এই বর্ষার মরশুমে।
আরও পড়ুন: দেশে করোনায় মৃতের ৫৩ শতাংশই ষাটোর্দ্ধ, কেন্দ্র বলছে বিশ্বের মধ্যে পরিস্থিতি সবচেয়ে ভাল
গবেষণায় দেখা গিয়েছে, সাপের কামড়ে মৃতের প্রায় অর্ধেকের বয়স ৩০ থেকে ৬৯এর মধ্যে। মোট সংখ্যার এক চতুর্থাংশ আবার শিশু।ভারতে সর্পদংশনে বেশির ভাগ মানুষ মারা যায় কোবরা (ভারতীয় গোখরা) , রাসেলস ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া এবংকমন ক্রেট বা কালাচ প্রজাতির সাপের কামড়ে। বাদবাকি মৃত্যুর ঘটনা ঘটে অন্যান্য অন্তত ১২টি বিভিন্ন প্রজাতির সাপের কামড়ে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাপের কামড়ে যেখানে মৃত্যু হয় সেইসব এলাকায় দ্রুত চিকিৎসা সেবা পাওয়া না যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
বর্ষাকালে জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটে এদেশে। এই সময় সাপ বাইরে বেরিয়ে আসে বেশি। আর সাপ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কামড় দেয় পায়ে। ই-লাইফ নামের একটি জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণাটি চালিয়েছিলেন ভারতীয় ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা যৌথভাবে। ভারতে অসময়ে মৃত্যুর ওপর চালানো মিলিয়ন ডেথ টাডি নামে বিশাল এক সার্ভে থেকেও তথ্য নেয়া হয়েছে এই গবেষণার কাজে। গবেষকরা বলছেন সর্পদংশনে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছেন গ্রামের কৃষক সম্প্রদায়ের মানুষ। কারণ তারা বর্ষার মরশুমে খেতের কাজে জমিতে বেশিরভাগ সময় কাটান, সর্পদংশনের ঝুঁকিতে থাকে সবচেয়ে বেশি।