
Issue Seven Sisters: কী অবস্থা বাংলাদেশের (Bangladesh)! নিজের দেশে শিল্প আনতেও 'বন্ধু' চিনের কাছে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে হচ্ছে ভারতকে। সম্প্রতি চিন সফরে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মহম্মদ ইউনুস (Muhammad Yunus)। সেখানেই তিনি চিনের কাছে বাংলাদেশে বিনিয়োগের প্রস্তাব দেন। পাশাপাশি তুলে ধরেন সেদেশে বিনিয়োগের সুবিধে। আর সেখানেই তিনি ব্যবহার করেন ভারতের উত্তর-পূর্বের সাত রাজ্যের ভৌগলিক অবস্থাকে। উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলি সেভেন সিস্টার্স নামে পরিচিত।
ইউনুসের মন্তব্যঃ
চিন সফরে ইউনুস বলেছেন, ভারতের সেভেন সিস্টার্স সংলগ্ন বাংলাদেশ এলাকায় বিনিয়োগ করতে। স্থলবেষ্টিত এই এলাকা। সমুদ্র পথ নেই। সেখানে সমুদ্রে একমাত্র আধিপত্য রয়েছে বাংলাদেশের। নাম না করেই ইউনুস চট্টগ্রাম বন্দরের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশকে ব্যবহার করে এই এলাকায় বাণিজ্যিক আধিপত্য বাড়াতে। তিনি বলেছেন, 'ভারতের সাতটি রাজ্য, পূর্বাঞ্চলীয় অংশ, যাকে সেভেন সিস্টার্স বলা হয়, তারা ভারতের একটি স্থলবেষ্টিত অঞ্চল। তাদের সমুদ্রে পৌঁছানোর কোনো উপায় নেই। আমরাই এই অঞ্চলে সমুদ্রের একমাত্র অভিভাবক।'
সেভেন,সিস্টার্স হল- অরুণাচলপ্রদেশ, অসম, মেঘালয়, মণিপুর, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড। তাঁর কথায় এই রাজ্যগুলি সমুদ্র থেকে দূরে অবস্থিত। এই রাজ্যগুলির সঙ্গে ভারতের সড়পথে যোগাযোগের একমাত্র রাস্তা হল শিলিগুড়ি করিডোর। ২২ কিলোমিটার রাস্তাই যোগ করে রেখেছে। সেটিকে বলা হয় 'চিকেনস নেক'। দেখতে অনেকটা মুরগির গলার হাড়ের মত। উত্তরপূর্বের রাজ্যগুলি বিশেষ করে অরুণাচলের ওপর দীর্ঘ দিন ধরেই নজর রয়েছে চিনের। বছর কয়েক আগেও অরুণাচলের কাছাকাছি লালফৌজের আনাগোনা বেড়েছিল। যদিও এখনও এই এলাকায় সক্রিয় চিনের লাল ফৌজ। তাই বাংলাদেশের মহম্মদ ইউনুসের মন্তব্য কিছুটা হলেও অস্বস্তি বাড়িয়েছে ভারতের।
ভারতের সঙ্গে চিন প্রায় প্রায় ৩৪৮৮ কিলমিটার। জম্মু ও কাশ্মীর, হিমাচলপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, সিকিম ও অরুণাচলপ্রদেশ রাজ্যের মধ্যে দিয়ে গেছে চিন সীমান্ত। চিনের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলও ভারতীয় সামীন্ত স্পর্শ করেছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতীয় সীমান্ত ৪.০৯৬ কিলোমিটার। আর সেই কারণেই চিনকে যদি বাংলাদেশ কৌশলগত কারণে ব্যবহার করে তাতে সমস্যা বাড়তে পারে ভারতের।
যদিও বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান বলেছেন, এই এলাকায় সমুদ্রে শুধুমাত্র বাংলাদেশের আধিপত্য রয়েছে সেকথা কিন্তু ঠিক নয়। কারণ বাংলাদেশের প্রতিবেশী পশ্চিমবঙ্গ। যার লাগোয়া বঙ্গোপসাগর। বিশাখাপত্তনমেই রয়েছে ভারতীয় নৌসেনার ঘাঁটি। পাশাপাশি বিমান বাহিনীর ঘাঁটি রয়েছে শিলিগুড়ি, তেজপুর, মণিপুরে। তাই ড্রাগন সেনা যদি সীমান্তে সমস্যা তৈরি করতে চায় তাহলে পাল্টা জবাব দিতে বেশি সময় নেবে না।
তবে মহম্মদ ইউনুসের মন্তব্যের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলি।
অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্ম
বাংলাদেশের মহম্মদ ইউনুসের মন্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন, হিমন্ত বিশ্বশর্মা। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় বলেছেন, ইউনুসের মন্তব্য আপত্তিকর। ভারতের কৌশলগত চিকনস নেক করিডোরের প্রসঙ্গও তিনি তোলেন। বলেন,এই অঞ্চলটি ভারতের সঙ্গে উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির যোগাযোগ বজায় রেখেছে। ইউনুসের নিন্দার পাশাপাশি তিনি এই অঞ্চলের নিরাপত্তা আরও জোরদার করার ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি চিকেনস নেক বাদ দিয়ে সড়ক ও রেল যোগাযোগ জোরদার করার ওপর জোর দিয়েছেন।
মণিপুরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং
মণিপুরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং-ও ইউনুসের মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করছেন। তিনি বলেছেন, এজাতীয় বেপরোয়া মন্তব্যের গুরুতর পরিণতি হতে পারে। তিনি আরও বলেন, ভারতের ঐক্য ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা নিয়ে কেউ এজাতীয় দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করেন। একটি দেশের আঞ্চলিক অখণ্ডতা নিয়ে কেউ মন্তব্য করতে পারে না।
প্রদ্যোত মাণিক্য, ত্রিপুরা
তিপ্রা মোথা পার্টির প্রধান প্রদ্যোত মাণিত্য বাংলাদেশের প্রধানের মন্তব্যের তীব্র প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ভারতের সরাসরি সমুদ্রে প্রবেশাধিকার পাওয়ার জন্য বাংলাদেশকে ভেঙে ফেলতে পারে। ১৯৪৭ সালে চট্টোগ্রাম বন্দরের ওপর ভারতের নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দেওয়ার ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তেরও সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, 'চট্টগ্রামের পার্বত্য অঞ্চলে সর্বদা আদিবাসী উপজাতিরা বাস করত যারা ১৯৪৭ সাল থেকে সর্বদা ভারতের অংশ হতে চেয়েছিল'।