দোল বা হোলি রঙের উৎসব
কিন্তু বলিউড সিনেমার দৌলতে দোলে চুড়ান্ত হয়রানির শিকার হতে হয় মহিলাদের
এবার আবার তাতে লেগেছে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের ছোঁয়া
সোশ্যাল মিডিয়ায় খোলাখুলি দোলের দিন মুসলিম মহিলাদের হেনস্থা করার আহ্বান জানানো হচ্ছে
দোল বা হোলি রঙের উৎসব। বলা হয় হোলিকা দহনের মাধ্যমে দুষ্টের দমনের পর রঙের উৎসব শুরু হয়। কিন্তু মহিলাদের জন্য এই উৎসব বরাবরই ছিল অস্বস্তিকর। দোল যেন মহিলাদের বিনা সম্মতিতে হেনস্থা করার লাইসেন্স দেয় দুর্বৃত্তদের। এবার তার সঙ্গে আবার জুড়ে গিয়েছে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের রঙ-ও। 'বুরা না মানো হোলি হ্যায়' স্লোগানের আড়ালে সেই বিদ্বেষ ছড়ানোর প্রস্তুতি চলছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
সম্প্রতি একটি টিকটক ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে এক ব্যক্তি এক বোরখা পরিহিতা মহিলার পিছনে ধাওয়া করে গিয়ে তাঁর বোরখা তুলে তাঁর মুখে রঙ মাখাচ্ছে। সঙ্গে হিন্দি ভাষায় লেখা রয়েছে, 'চাহে নকাব পেহেন কে নিকলো ভাইজান-কে সাথ, রগর কে রঙ লাগেগা সুনো মোহতারমা সিধি বাত'। অর্থাৎ ভাইয়ের সঙ্গে বোরখা পরেও বাইরে বের হলেও ঘষে ঘষে রঙ দেওয়া হবে। বোরখা, মোহতারমা, ভাইজান-এর মতো শব্দগুলি ব্যবহারের উদ্দেশ্য কী তা সহজেই বোঝা যায়।
এই নারীবিরোধী এবং ধর্মান্ধ ভিডিওই শেষ নয়, সোশ্যাল মিডিয়ায় বহু অ্যাকাউন্ট থেকেই দোল খেলার অছিলায় মুসলিম মহিলাদের শ্লীলতাহানির আহ্বান জানানো হয়েছে। একটি টুইটার হ্যান্ডেল থেকে যেমন লেখা হয়েছে 'সালমা আজা খোপচা মাই, গুলাল তোহার খাতির লাই, খুদ উতরোগি বোরখা ইয়া খিঞ্চ কে বোরখা হাম ভিগা দে তেরি চোলি (সালমা, কোণে এস, আমি তোমার জন্য রঙ এনেছি, নিজে বোরখা সরাবে নাকি টেনে নামিয়ে তোমার ব্লাউজ ভিজিয়ে দেব)'। বাবু স্যাফ্রন নামে আরেকটি অ্যাকাউন্টের পোস্টের বয়ান, 'ইস হোলি, ভিগা দো হর বুরখে ওয়ালে কি চোলি (এই হোলিতে, প্রত্যেক বোরখা-পরা মহিলাদের ব্লাউজ ভিজিয়ে দাও)"।
আরও পড়ুন - 'কাটা নাক ঢাকতে পরত সুর্পণখা', আজব রামকথার যুক্তিতে উঠল বোরখা নিষিদ্ধের দাবি
আরও পড়ুন - দোলের রঙেই ফুটে উঠল ভালবাসার আসল রং, ফাঁস হল ভিকি-ক্যাটের হোলি পার্টি
আরও পড়ুন - করোনা আতঙ্কের মধ্যেই মথুরা মেতেছে উৎসবে, গোকুলে পালিত হচ্ছে 'ছাদি হোলি', দেখুন ভিডিও
গত সপ্তাহেই টানা চারদিন ধরে সাম্প্রদায়িক হিংসার আগুনে জ্বলেছে দিল্লি। এখন পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হলেও গোটা দেশেই মানুষে মানুষে অবিশ্বাসের বাতাবরণ তৈরি হয়েছে। বলিউড সিনেমার দৌলতে দোলের দিনটি ভারতীয় মহিলাদের হেনস্থা হওয়ার বিষয়টি ছিলই। কিন্তু এবার তাতে যেভাবে সাম্প্রদায়িক রং চড়ানো হচ্ছে তাতে দোল-কে কেন্দ্র করে ফের দেশে অশান্তি হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। এইসব নারী ও ধর্ম বিদ্বেষী উস্কানিমূলক পোস্ট যারা করছে, তাদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেবে সরকার? সেটাই এখন দেখার।