পদ্মশ্রীপ্রাপ্ত হরেকালা হাজাব্বাকে একটি ব্যক্তিগত অনুষ্ঠানের জন্য সৌদি আরবে নিয়ে যাচ্ছিল হিদায়া ফাউন্ডেশনের জুবাইল ইউনিট। এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানে তিনি যখন চড়ে বসেছিলেন, তখন পর্যন্তও তিনি জানতেন না যে, তাঁর জন্য অপেক্ষা করছে চোখে জল এনে দেওয়ার মুহূর্ত।
কর্ণাটকের ম্যাঙ্গালুরুতে কমলালেবু বিক্রি করতেন ষাটোর্ধ বৃদ্ধ হরেকালা হাজাব্বা (Harekala Hajabba)। প্রত্যেকদিন তাঁর রোজগার ছিল মোটামুটি দেড়শো টাকা। অর্থের অভাবে নিজের পড়াশোনা এগিয়ে নিয়ে পারেননি। এক বিদেশি পর্যটক যখন তাঁর কাছে এসে কমলালাবুর দাম জিজ্ঞেস করেছিলেন, তখন তাঁর মুখের ইংরেজি ভাষার একটি বর্ণও বুঝতে পারেননি অসহায় বৃদ্ধ। তার পরেই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছিলেন যে, রোজগার যতই হোক, সারা জীবনে অন্যান্য সকল শিশুদের পড়াশোনা করানোর জন্য একটি বিদ্যালয় তিনি নিজে গড়ে দিয়ে যাবেন।
-
মাত্র দেড়শো টাকা যাঁর দৈনন্দিন রোজগার, সেই হরেকালা হাজাব্বা ম্যাঙ্গালোরে স্থাপন করেছেন একটি স্কুল। ২০২১ সালে ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের কাছ থেকে জয় করে নিয়েছেন ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক পুরস্কার – পদ্মশ্রী। সেই হরেকালা হাজাব্বাকে একটি ব্যক্তিগত অনুষ্ঠানের জন্য সৌদি আরবে নিয়ে যাচ্ছিল হিদায়া ফাউন্ডেশনের জুবাইল ইউনিট। বিমান সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইটে তিনি যখন চড়ে বসেছিলেন, তখন পর্যন্তও তিনি জানতে পারেননি যে, তাঁর জন্য অপেক্ষা করছে চোখে জল এনে দেওয়ার মুহূর্ত।
-
তাঁর সিটের কাছে পৌঁছে যান স্বয়ং বিমানের ক্যাপ্টেন শেনয় এসবি। ক্যাপ্টেন নিজে এসে বিমানের সমস্ত যাত্রীদের সঙ্গে হরেকালা হাজাব্বার পরিচয় করিয়ে দেন। তারপর তিনি বলেন, ‘আমরা গর্বিত যে, পদ্মশ্রী প্রাপক হরেকালা হাজাব্বা, যিনি শিক্ষার জন্য নিজের অফুরন্ত সেবা দান করেছেন, তিনি আজ আমাদের বিমানে উপস্থিত রয়েছেন। তিনি অত্যন্ত উদার মনের মানুষ। আমরা আপনাকে পেয়ে ভীষণ আপ্লুত হয়েছি, স্যার।’
তাঁর উদ্দেশ্যে বিমানের কর্মীরা সহ সমস্ত যাত্রীরা হাততালি দিতে থাকেন। জনগণের সামনে এই সম্মান পেয়ে চোখের জল বাঁধ মানে না তাঁর। রুমালে নিজের চোখ ঢেকে নেন পদ্মশ্রী হরেকালা হাজাব্বা। হাত জোর করে সকলের উদ্দেশ্যে নিজের বিনয় প্রকাশ করেন তিনি।