বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মিছিল চলাকালীন হরিয়ানার নুহ-তে একটি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় বজরং দলের সদস্য মনু মানেসারের ভূমিকা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সোমবার হিন্দু মুসলমান দ্বন্দ্বে জ্বলে উঠল হরিয়ানার নুহ জেলা। এই জেলায় বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সদস্যরা একটি মিছিল বের করেছিলেন সোমবার। ওইদিন কোনও বিপক্ষ দলের পক্ষ থেকে ওই মিছিলে হামলা করা হয়। একের পর এক গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। প্রাণ সংশয়ে স্থানীয় একটি মন্দিরে ঢুকে আশ্রয় নেন হিন্দু পরিষদের মানুষরা। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া বহু ভিডিওতে দাবি করা হয় যে, মুসলমান সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকেই এই হামলার ঘটনা ঘটেছে। যদিও, সেই ভিডিওর সত্যতা যাচাই করা হয়নি, তবে, গোটা এলাকা জুড়ে সোমবার থেকে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন (Hindu Muslim Riots)। এই গোটা ঘটনায় একটি নাম বারবার উঠে আসছে তদন্তকারীদের তালিকায়, তিনি হলেন, বজরং দলের স্থানীয় সদস্য মনু মানেসার।
নিজেকে গরু-’মাতা’ প্রেমী এবং সনাতন হিন্দু ধর্মীয় বলে দাবি করা মনু মানেসার বহুবার আগ্নেয়াস্ত্র সহ নিজের ছবি বা ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করেছেন। সেইরকমই একটি ভিডিও বার্তায় তিনি বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সমর্থকদের সোমবার মেওয়াতে ব্রিজ মণ্ডল জলাভিষেক যাত্রা নামে একটি ধর্মীয় যাত্রায় সামিল হওয়ার আহ্বান জানান। এই মিছিল চলাকালীনই হামলা হয়, যে ঘটনায় প্রায় ১৫ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে অনেক পুলিশ কর্মীও রয়েছেন। দাঙ্গা আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় পুরো এলাকা জুড়ে বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন রয়েছে। স্কুল-কলেজ সহ সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। কিন্তু, আসল কথা হল, দাঙ্গা যখন লাগল, তখন দেখা গেল যে, পুরো মিছিলের মধ্যে মনু মানেসার কোথাও নেই!
ফেব্রুয়ারি মাসে হরিয়ানার ভিওয়ানি জেলায় ২ জন মুসলমান মানুষের রক্তাক্ত ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ খুঁজে পাওয়া যায়, যাঁদেরকে খুন করার পেছনে মনু মানেসারের নাম সর্বাগ্রে উঠে এসেছিল। সূত্রের খবর, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের শীর্ষ নেতারাই নাকি মনুকে সোমবারের মিছিলে যেতে বারণ করেছিলেন, কারণ, তাঁদের আশঙ্কা ছিল, মনু মানেসার মিছিলে থাকলে ব্যাপক অশান্তি হতে পারে।
কে এই মনু মানেসার?
১> চলতি বছরেই টুইটারে বিখ্যাত হয়েছিল একটি হ্যাশট্যাগ। যাতে লেখা ছিল, #অ্যারেস্টমনুমানেসার। ওই সময় রাজস্থানের ভরতপুরে জুনায়েদ এবং নাসির নামে ২ জন মুসলমান যুবক গরু পাচার করছেন, এই সন্দেহ করে তাঁদেরকে অপহরণ করা হয় এবং নৃশংসভাবে মেরে ফেলা হয়। ওই ঘটনাতেই হরিয়ানার বজরং দলের গরুর নজরদারি শাখার প্রধান মনু মানেসার অভিযুক্ত রয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছিল।
২> বজরং দলের সক্রিয় সদস্য মনু ওই সময়ে জুনায়েদ এবং নাসির নামে দুই ভাইকে হত্যা করার অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন।
৩> রিপোর্ট অনুযায়ী, মোহিত যাদব নামেও পরিচিত মনু মানেসার। গত পাঁচ বছরে গুরগাঁওয়ে হরিয়ানা সরকার কর্তৃক চালিয়ে যাওয়া গরু সুরক্ষা টাস্ক ফোর্সের এক নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্ব হিসাবে বেশ খ্যাতি অর্জন করেছেন তিনি। গরুর স্বার্থ রক্ষা তাঁর প্রধান কাজ।
৪> শুধু তাইই নয়। ইউটিউবে মনুর একটি চ্যানেল ছিল, যার সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা ছিল ১ লক্ষেরও বেশি। সেই চ্যানেল থেকে গরু বাঁচানো, গরু হত্যা, গরুর হত্যাকারী বা গরু পাচারকারী সম্বন্ধীয় বিভিন্ন ভিডিও প্রকাশ করা হত, যা উপস্থাপন করতেন তিনি নিজেই, তাঁর সঙ্গে আগ্নেয়াস্ত্রও থাকতে দেখা যেত। প্রধানত হিন্দু ধর্মীয় মানুষদের ‘জাগিয়ে তোলা’-ই ছিল তাঁর মূল লক্ষ্য। এতও সাবস্ক্রাইবার থাকার কারণে ইউটিউব কর্তৃপক্ষ ‘সিলভার প্লে’ বাটন দিয়ে তাঁর চ্যানেলের পদোন্নতিও করিয়েছিল। কিন্তু, হরিয়ানায় দাঙ্গা লাগার পর থেকে হঠাৎ দেখা গেছে যে, তাঁর ইউটিউব চ্যানেলটি আর নেই।
এই মনু মানেসার মিছিলে প্রথম থেকেই ছিলেন কিনা, সেই বিষয়ে কেউ নির্দিষ্ট কোনও তথ্য দিতে পারেননি। একটি দল দাবি করছে, মনু সবাইকে আহ্বান জানালেও দলবল নিয়ে নিজে মোটেই ওই শোভাযাত্রায় অংশ নেননি, প্রথম থেকেই তিনি সেদিনের যাত্রায় ছিলেন নে। আরেকটি দলের দাবি, মনু মানেসার মিছিলেই ছিলেন, তাঁর গাড়িতে ‘গো রক্ষক’ লেখা ছিল। উলটো দিকের আক্রমণকারী জনতা তাঁর গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে এবং ওই সময় তিনি নাকি গাড়ির ভেতরেই ছিলেন। যদিও এই দাবির বিষয়ে কোনও সঠিক তথ্য নেই এবং মনু-ও প্রথম থেকেই মিছিলে ছিলেন কিনা, তারও কোনও অকাট্য প্রমাণ নেই।
আরও পড়ুন-
গরুর মাংস নিয়ে যাওয়ার সন্দেহে মানুষদের পিটিয়ে মেরে ফেলা, মুসলমানদের বিরুদ্ধে গো-রক্ষকদের ঘৃণ্য কাণ্ডের বিষয়ে আর্জি শুনতে রাজি সুপ্রিম কোর্ট
বাংলার পঞ্চায়েত ভোটের হিংসা নিয়ে ব্যাপক কটাক্ষ যোগী আদিত্যনাথের, পালটা ‘বুলডোজার বাবা’ আখ্যা দিল তৃণমূল
Thane Crane Accident: হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল বিশাল ক্রেন! মহারাষ্ট্রের থানেতে মর্মান্তিক ঘটনা
Kuber Mantra: সম্পদের দেবতা কুবের-কে তুষ্ট করতে প্রত্যেকদিন জপ করুন এই ১০৮টি মন্ত্র