সিএএ বিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের পর থেকে উত্তপ্ত হয়ে পড়েছিল উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন জায়গা। এরপরই এই বিক্ষোভ দমন করতে কঠোর পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করেছিল যোগী সরকার। বলা হয়েছিল, এই বিক্ষোভে জড়িত ব্যক্তিদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার কথা হবে।
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনে বিক্ষোভকারীদের ( anti-CAA protestors) থেকে কোটি কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ সংগ্রহ করেছিল উত্তরপ্রদেশ সরকার (UP government)। ক্ষতিপূরণের সেই টাকা শুক্রবার যোগী আদিত্যনাথের (Yogi Adityanath) সরকারকে ফেরাতে নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court)। বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় (D Y Chandrachud) এবং বিচারপতি সূর্য কান্তের (Surya Kant) বেঞ্চে বলে যে রাজ্য সরকার অভিযুক্ত প্রতিবাদকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা কোটি কোটি টাকার পুরোটাই ফেরত দিতে হবে। পাশাপাশি রাজ্য সরকারকে উত্তরপ্রদেশ রিকভারি অফ ড্যামেজেস টু পাবলিক অ্যান্ড প্রাইভেট প্রপার্টি আইনের (Uttar Pradesh Recovery of Damages to Public and Private Property Act) অধীনে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার স্বাধীনতা দিয়েছে আদালত।
সিএএ বিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের পর থেকে উত্তপ্ত হয়ে পড়েছিল উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন জায়গা। এরপরই এই বিক্ষোভ দমন করতে কঠোর পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করেছিল যোগী সরকার। বলা হয়েছিল, এই বিক্ষোভে জড়িত ব্যক্তিদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার কথা হবে। এমনকী, বিক্ষোভকারীদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার উদ্দেশ্যে নোটিশও পাঠিয়েছিল রাজ্য সরকার। ট্রাইব্যুনালের প্রধান পদে থাকা অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বিভিন্ন জেলায় সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে ক্ষতি পুনরুদ্ধারের জন্য ২৭৪টি নোটিশ জারি করেছিলেন। আর লখনউতে বিক্ষোভকারীদের জন্য ৯৫টি নোটিশ জারি করা হয়েছিল। এরপরই এই প্রক্রিয়া বন্ধের আবেদন জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন পরভেজ আরিফ টিটু নামের এক ব্যক্তি। টিটু তাঁর আবেদনে বলেছিলেন, মুসলিম নাম দেখেই এলোমেলোভাবে সম্পত্তি বাজেয়াপ্তকরণের নোটিশ পাঠাচ্ছে যোগী সরকার। উদাহরণ হিসেবে তিনি দেখান ছয় বছর আগে মৃত্যু হওয়া এক ৯৪ বছরের বৃদ্ধকেও নোটিশ পাঠানো হয়েছে। ৯০-ঊর্ধ্ব ব্যক্তিদের-সহ বেশ কয়েকজন এমন ব্যক্তিকেও এই নোটিশ পাঠানো হয়েছে, যাঁরা বয়সের কারণেই হিংসাত্মক প্রতিবাদে সামিল হতে পারবেন না। এরপর সেই মামলার শুনানির সময় সুপ্রিম কোর্টে ধমক খায় সরকার। তারপর সেই সবই নোটিশ প্রত্যাহার করে নেওয়া হয় সরকারের তরফে।
আরও পড়ুন- 'বন্ধ করুন নাহলে আমরা করব', সিএএ বিক্ষোভ নিয়ে শীর্ষ আদালতে জোর ধাক্কা যোগী সরকারের
১১ ফেব্রুয়ারি এই মামলার শুনানির সময় বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় এবং বিচারপতি সূর্যকান্তের বেঞ্চ বলেছিল, অভিযুক্তদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে উত্তরপ্রদেশ সরকার নিজেই অভিযোগকারী, ন্যায়নির্ণায়ক এবং শাস্তিদায়ক হিসেবে আচরণ করেছে। তাই এই সব আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য রাজ্য সরকারকে ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় দিয়েছিল আদালত। সেই মতো আজ এই মামলার শুনানি হয়। তখনই আদালতের তরফে জানানো হয়, রাজ্য সরকার ক্ষতিপূরণ হিসেবে যে টাকা সংগ্রহ করেছে তার পুরোটাই ফেরত দিতে হবে।
আরও পড়ুন - সিএএ-বিরোধী আন্দোলনের পিছনে কি আইএস, কাশ্মীরি দম্পতি গ্রেফতারে উঠছে গুরুতর প্রশ্ন
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের শেষ ও ২০২০ সালের শুরুর দিকে সিএএ বিরোধী আন্দোলনে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল বহু জায়গা। তাতে সরকারে সম্পত্তি নষ্ট করা হয়েছিল প্রচুর পরিমাণে। এই আবহে ২০১১ সালে এলাহাবাদ হাইকোর্টের একটি রায়ের উপর ভিত্তি করে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ পুনরুদ্ধার করতে সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার নোটিশ পাঠিয়েছিল উত্তরপ্রদেশ সরকার। এদিকে ২০০৯ সালেই এই বিষয়ে শীর্ষ আদালতের নির্দেশ রয়েছে যে একজন বিচারপতিই এই ক্ষতির পরিমাণ সহ অন্যান্য বিষয় খতিয়ে দেখবেন। যদিও উত্তরপ্রদেশের ক্ষেত্রে সে সব কিছুই মানা হয়নি। তারপরই নিয়ম ভাঙার কথা বলে সরকারকে ধমক দিয়ে ওই প্রক্রিয়া বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিল শীর্ষ আদালত।
আরও পড়ুন- আহমেদাবাদ ধারাবাহিক বিস্ফোরণ মামলায় ৩৮ জনকে ফাঁসির নির্দেশ, ১১ জনের যাবজ্জীবন