না, ধারণা সঠিক ছিল না।
কিন্তু সেই সংঘর্ষ যে মাওবাদীরা তিনদিন ধরে চালাবে, এমনটা হয়ত আঁচই করতে পারেনি বাহিনী।অভিযানের প্রথম বাধা ছিল দুর্গম এলাকা। এরপর দ্বিতীয় বাধা হয়ে ওঠে রসদ। দেড় দিনের মতো রসদ নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু মাওবাদীদের বিরুদ্ধে সংঘর্ষ যত দীর্ঘ হয়েছে, রসদ যেন ততই কমেছে। একটা সময় তৃষ্ণার্ত এবং ক্ষুধার্ত অবস্থাতেই লড়াই চালাতে হয় নিরাপত্তাবাহিনীর জওয়ানদের। তবে এই কঠিন পরিস্থিতিতেও হাল ছাড়েনি তারা। বরং, আরও সুচারুভাবে এবং সুকৌশলে মাওবাদীদের কোণঠাসা করে তারা।
ওড়িশা এবং ছত্তিশগড়ের সীমানায় গরিয়াবন্দে ঠিক কীভাবে মাওবাদীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়, তা এক সংবাদমাধ্যমকে বর্ণনা দিয়েছেন রায়পুরের ইনস্পেক্টর জেনারেল (আইজি) অমরেশ মিশ্র। গত মঙ্গলবার গরিয়াবন্দে যৌথবাহিনীর অভিযানে ১৬ জন মাওবাদী নিহত হয়েছে। সেই অভিযান কতটা দুঃসাহসিক এবং ঝুঁকিপূর্ণ ছিল এবং তা সত্ত্বেও কীভাবে পরিকল্পনামাফিক ও পুরো প্রস্তুতি নিয়ে মাওবাদীদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়া হয়েছিল, সেই বিবরণই দিয়েছেন আইজি।
তিনি জানিয়েছেন, ‘‘রবিবার রাতে গোয়েন্দা সূত্রে খবর আসে কুলহাড়িঘাটে ওড়িশা এবং ছত্তিশগড়ের ক্যাডারের ২৫-৩০ জন মাওবাদীর একটি দল জড়ো হয়েছে। এমনকি, সেই দলে শীর্ষ নেতৃত্বরাও রয়েছেন। এমন কয়েকজন নেতা রয়েছেন, যাদের মাথার দাম প্রায় কয়েক কোটি টাকা। কীভাবে টাকা তোলা হবে, কোথায় কোথায় নিরাপদে আশ্রয় নেওয়া যাবে এবং পঞ্চায়েত নির্বাচন, ইত্যাদি নিয়ে আলোচনার জন্য গরিয়াবন্দের জঙ্গলে হাজির হয় মাওবাদীরা।
আইজি বলেন, তিনটি পর্বে এই অভিযানকে ভাগ করা হয়েছিল। পরিকল্পনা, কৌশল এবং নজরদারি। ই-৩০, কোবরা ২০৭, সিআরপিএফের ৬৫, ২১১ ব্যাটেলিয়ন এবং ওড়িশার স্পেশ্যাল অপারেশন গ্রুপ (এসওজি) একসঙ্গে এই অভিযান শুরু করে। কুলহাড়িঘাটে পাহাড়ি এলাকায় অভিযানে যেতেই শুরু হয়ে যায় সংঘর্ষ। মাওবাদীরা বাহিনীর গতিবিধি জানার জন্য ড্রোন ব্যবহার করছিলেন। কিন্তু সেই ড্রোনের নজরদারি এড়িয়ে মাওবাদীদের দিকে এগোতে শুরু করে নিরাপত্তাবাহিনী। তিনদিক থেকে মাওবাদীদের দলটিকে কার্যত, ঘিরে ফেলে যৌথবাহিনী।
স্বাভাবিকভাবেই মাওবাদীদের পালানোর সব পথ আটকে দেয় ওড়িশার এসওজি। অন্যদিকে, ছত্তিশগড়ের নিরাপত্তাবাহিনী বাকি বিষয়গুলিতে নজরদারি চালাচ্ছিল। আইজি জানিয়েছেন, কুলহাড়িঘাট মূলত একটি আদিবাসী প্রভাবিত এলাকা। ৭৫ কিলোমিটার জুড়ে পাহাড় আর জঙ্গলে ঘেরা সাতটি গ্রাম নিয়ে গড়ে উঠেছে এই এলাকা।
এটি ‘নো-নেটওয়ার্ক জ়োন’। ১৫০০ মানুষ থাকেন এই কুলহাড়িঘাটে। সাতটি গ্রামের মধ্যে চারটি গ্রাম আবার পাহাড়ের উপরের দিকে। যা অত্যন্ত দুর্গম। এই এলাকাকেই নিজেদের গড় বানায় ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশ এবং ছত্তিশগড়ের মাওবাদীরা। পাহাড়, ঘন জঙ্গল এবং দুর্গম পথকে ঢাল করে চলপতির মতো মাওবাদী শীর্ষনেতাদের অবাধ বিচরণ ছিল এই এলাকা।
আর গ্রামবাসীরা খুব একটা লোকালয়ে আসেন না। সপ্তাহে একবার রেশন সংগ্রহ করে নিয়ে যান। ফলে, প্রায় বিচ্ছিন্ন কুলহাড়িঘাটের এই সাত গ্রাম, বিশেষ করে পাহাড়ের উপরের চারটি গ্রামকে নিজেদের ডেরা বানিয়ে তুলেছিলেন মাওবাদীরা। এই অভিযানে মাওবাদীদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য চলপতি-সহ ১৬ মাওবাদী নিহত হয়েছেন। চলপতির মাথার দাম ছিল এক কোটি টাকা। এছাড়াও আরও কয়েকজন শীর্ষনেতা ছিলেন ওই দলে, যাদের কয়েক জনের একসঙ্গে মাথার দাম পাঁচকোটি টাকা।
পুলিশ দাবি করেছে, ১৬ জন নয়, আরও বেশি মাওবাদীর মৃত্যু হয়েছে এই অভিযানে। তাদের দেহ নিজেদের সঙ্গে নিয়ে পালিয়েছেন মাওবাদীরা।
আরও খবরের আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।