চিঠি বোমা-য় সবচেয়ে সামনে নাম ছিল গুলাম নবি আজাদের। দলের শীর্ষ নেতার স্থান নিয়ে যে চিঠি সনিয়ার কাছে গিয়েছিল তাতে সর্বাগ্রে নাম ছিল কংগ্রেসের এই বিশিষ্ট নেতার। এছাড়াও সঙ্গে ছিলেন মল্লিকার্জুন খাড়গে থেকে শুরু করে মোতিলাল ভোরা, অম্বিকা সোনি-রাও। শুক্রবার কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটিতে সনিয়া যে অদল-বদল করেছেন তাতে বেশকিছু তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন এসেছে। আর এতে দেখা যাচ্ছে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি-তে সাধারণ সম্পাদকের পদ হারিয়েছেন গুলাম নবি আজাদ, মল্লিকার্জুন খাড়গেরা।
গুলাম নবি এবং খাড়গে-র সঙ্গে পদ হারিয়েছেন অম্বিকা সোনি, লুইজিনহো ফালেইরো এবং মোতিলাল ভোরারাও। চিঠি বোমাতে এঁরাও অন্যতম শরিক ছিলেন। সনিয়া গান্ধীর সই করা একটি চিঠি-তে জানানো হয়েছে, 'দল পুরো হৃদয়ের সঙ্গে এই সব বিদায়ী সাধারণ সম্পাদকদের অবদানকে সম্মান জানাচ্ছে- এঁরা হলেন- গুলাম নবি আজাদ, মল্লিকার্জুন খাড়গে, অম্বিকা সোনি, লুইজিনহো ফালেইরো এবং মোতিলাল ভোরা।'
আরও পড়ুন- টাইটাইনিকের সঙ্গে বর্তমান ভারতের তুলনা, কংগ্রেসের বৈঠকে আবারও সরব রাহুল গান্ধী
সনিয়ার সই করা যে চিঠি প্রকাশ করা হয়েছে, তার সঙ্গে নতুন সিডবলুসি-এর সদস্য এবং সাধারণ সম্পাদকদের তালিকাও প্রকাশ করা হয়েছে। এতে দেখা গিয়েছে, পদ হারালেও গুলাম নবি আজাদ-কে সিডবলুসি-র সদস্য করে রাখা হয়েছে। উল্লেখযোগ্যভাবে চিঠি বোমা-র অন্যতম বড় মুখ জিতিন প্রসাদ-কে সিডবলুসি-র পার্মানেন্ট ইনভাইটি-র পদ দিয়ে রাখা হয়েছে। সেইসঙ্গে জিতিন প্রসাদকে উত্তর প্রদেশের দায়িত্ব থেকেও সরিয়ে দিয়েছেন সনিয়া। তাঁকে দেওয়া হয়েছে বিধানসভা ভোটের সম্মুখে দাঁড়িয়ে থাকা পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্ব। উত্তরপ্রদেশ কংগ্রেসের দায়িত্ব যার ফলে পুরোপুরি এখন প্রিয়ঙ্কা গান্ধী ভঢ়ড়ার কাঁধে। যিনি দায়িত্বপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসাবে উত্তরপ্রদেশে দলের দেখভাল করছেন।
কংগ্রেসের শীর্ষ পদে এই রদবদল এল চিঠি বোমার এক মাসের মাথায়। গুলাম নবি আজাদ-সহ কংগ্রেসের ২৩ শীর্ষস্থানীয় প্রবীণ নেতা সনিয়া গান্ধীকে চিঠি দিয়ে দলের শীর্ষ নেতার পদ নিয়ে সওয়াল করেন। এই চিঠিতে এমন কিছু বিষয়ের অবতারণা করা হয়েছিল যাতে খুশি হননি সনিয়া গান্ধী। কারণ, এই চিঠিতে পরিষ্কারভাবে কংগ্রেসের নেতৃত্বে গান্ধী পরিবারের প্রতি অনাস্থা ফুঁটে উঠেছিল। চিঠি-র প্রেরকরা দলের অভ্যন্তরে শীর্ষনেতার পদ নিয়ে এক নির্বাচন ডাকার পক্ষে সওয়াল করেছিলেন। এমনকী, এমন একজনকে শীর্ষনেতার পদে বসানোর কথা এই চিঠিতে বলা হয়েছিল, যাঁকে সারাক্ষণ চাকুষ করা সম্ভব। এই চিঠি-তে আবার সর্বজনগৃহীত সিদ্ধান্তে গান্ধী পরিবারকে সামিল থাকতে হবে সে কথাও উল্লেখ করা হয়েছিল। দলের অভ্যন্তরে প্রবীণ নেতা-নেত্রীদের এমন সওয়ালে গান্ধী পরিবারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের গন্ধ পেয়েছেন সনিয়া। মাস খানেক সময় নিয়ে তাই তিনি দলের এই হেভিওয়েট নেতা-নেত্রীদের পর্যদুস্ত করার কৌশল তৈরি করছিলেন বলে বিশ্বস্ত সূত্রে দাবি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন- কংগ্রেসে ঘোর কোন্দল, অন্তর্বর্তী সভাপতি থেকে 'আজাদি চাই' আজাদের
চিঠি প্রেরক নেতাদের আরও এক মুখ মুকুল ওয়াসনিক-কে উত্তরপ্রদেশের দায়িত্বে সরিয়েছেন সনিয়া। প্রবীণ এই নেতাকে উত্তরপ্রদেশের অন্যতম দায়িত্বপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের পদ দেওয়া হয়েছে। প্রবীণ এই নেতা উত্তরপ্রদেশে সঙ্কটে থাকা কংগ্রেস দলে কতটা অক্সিজেন জোগাতে পারবেন তা নিয়ে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
মুকুল ওয়াসনিক-কে অবশ্য নিজের কাছাকাছিও রেখেছেন সনিয়া। ফলে উত্তরপ্রদেশে মুকুলের যে পানিশমেন্ট শিফ্টিং হয়েছে এটা বলা যাচ্ছে না। কারণ, সনিয়া গান্ধীকে দলের কাজে সাহায্য করার জন্য একটি অর্গানাইজেশনাল অ্যান্ড অপারেশনাল কমিটি তৈরি করা হয়েছে। এতে ৬ জনকে রাখা হয়েছে। মুকুল ওয়াসনিক ছাড়াও এই কমিটিতে রয়েছেন এ কে অ্যান্টনি, রণদীপ সিং সুরজওয়ালা, আহমেদ প্যাটেল, অম্বিকা সোনি এবং কে সি ভেণুগোপাল।
সনিয়া গান্ধী শীর্ষ নেতৃত্বে যে বদল এনেছেন তাতে সবচেয়ে লাভবান হয়েছেন রণদীপ। কারণ, দলের শীর্ষমুখপাত্রের পদ ধরে রাখার সঙ্গে সঙ্গে তিনি সনিয়ার পরামর্শদাতা স্পেশাল কমিটির অন্যতম মুখ হয়েছেন। এছাড়াও, কর্ণাটকে দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের পদও পেয়েছেন।