লকডাউনে মাত্র দেড়শো টাকায় নিজের শরীর বিক্রি করছে নাবালিকা, যোগী রাজ্য হারিয়ে যাচ্ছে শৈশব

লকডাউনের কাজের কোনও সন্ধান নেই
কাজ করতে যেতে হচ্ছে স্থানীয় পাথর খাদানে
সেখানেই মালিক আর মধ্যস্থতাকারীর শোষণ 

Asianet News Bangla | Published : Jul 8, 2020 9:14 AM IST

উত্তর প্রদেশের রাজধানী লখনউ থেকে ৭০০ কিলোমিটার দূরে চিত্রকূট। বুন্দেলাখণ্ডের এই  এলাকায়  অভাবের তাড়নায় নিজেদের শরীর বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে নাবালিকারা। এলাকার চালচিত্র এমনই যে তারা যদি বাড়ি থেকে অর্থ রোগগারের জন্য না বার হয় তাহলে আর উনান জলবে না। তীব্র অনটনের ছবি ধরা পড়েছে গোটা এলাকা জুড়ে। এলাকার অধিকাংশ বাসিন্দা আদিবাসী সম্প্রদায়ের। 

কাজের জায়গা বলতে এলাকার পরিত্যক্ত খনিগুলি একমাত্র ঠিকানা। অধিকাংশ খনি চলে অবৈধভাবে। সেখানে কাজের জন্য দরবার করতে হয়  মধ্যস্থতাকারীদের কাছে।  সববাধা অতিক্রম করে ১২-১৪ বছরের নাবালিকারা কাজ পেলেও দিনান্তে মেলে না মজুরি। তবে কাজের আগে খাদান মালিক অবশ্য তাগের দৈনিক ২০০-২৫০ টাকা মজুরি দেওয়ার কথা জানান। কিন্তু দিনের শেষ সেই টাকা দিতে অস্বীকার করে বলে অভিযোগ। 

আর নিজের প্রাপ্য টাকার জন্যই চিত্রকূটের ছোট ছোট মেয়েদের চলে যেতে হয় বিপথে। গ্রামের তেমনই একটি মেয়ের কথায়, আমাদের কিছুই করার নেই। খাদান মালিক আর মধ্যস্থতাকারীরা আমাদের চাকরি দেয়। আর তার পরিবর্তে আমাদের দিতে হয় নিজের শরীর। এছাড়া কোনও উপায় নেই। আমরা যদি ওদের কথা না শুনি তাহলে আমরা কাজ পাব না। না খেয়ে মরতে হবে গোটা পরিবারকে। যদিও দৈনিক মজুরি ২০০-৩০০ টাকা। কিন্তু দিনভর খাদানে পরিশ্রম আর নিজের শরীর বিক্রি করে আমরা হাতে পাই মাত্র ১০০-১৫০ টাকা। মালিক খুব খুশি হলে কখনও কখনও ২০০ টাকাও দেয় বলে জানিয়েছে নির্যাতিতা। 

চিত্রকূটে চুরি হচ্ছে শৈশব। নির্বিকার নাবালিকাদের বাবা মাও। তাঁদের কথায় এছাড়া সংসার চালানোর আর অন্য কোনও পথ নেই। তাই সামঝোতা করেই চলতে হচ্ছে। 

স্থানীয় খাদানে কর্মরত এক নাবালিকার কথায়, প্রথমে ওরা কাজ দিতে অস্বীকার করে। কিন্তু কাজের প্রয়োজন থাকায় বারবার আবেদন জানান পর বেশ কয়েকটি শর্ত আরোপ করে। শর্ত পূরণ না হলে ছাঁটাই করে দেওয়ার হুমকির পাশাপাশি প্রাণনাশেরও ভয় দেখানো হয়। তাই বাধ্য হয়েও ওদের সব কথা মেনে চলতে হয়।

এক কিশোরী জানিয়েছেন মাত্র ১০০ টাকার দৈনিক মজুরির বিনিময় সে কাজ করে। কিন্তু তারপরেও কনডাক্টারের নানান আবদার পুরণ করতে হয়। তাদের নাকি সাজগোজ করে খাদানে যেতে হয়। কেউ যদি তা না করে খাদান মালিক আর মধ্যস্থতাকারীরা বকাবকি শুরু করে। নাবালিকার প্রশ্ন একশো টাকা দিয়ে সংসার চালাবে না সাজগোজের জিনিশ কিনবে? 

তবে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য স্থানীয় বাজার থেকে সস্তা দামের অনেক বালা আর কানের দুল কিনে রেখেছে ওরা। যখন কাজে যায় তখন সেগুলি হয় ওদের সম্বল। 

চিত্রকূট ও সংলগ্ন এলাকায় প্রায় ৫০টি পাথর খাদান রয়েছে। সেগুলিই রুজিরুটি যোগায় ওই অঞ্চলে বসবাসকারী কোল উপতাজির মানুষদের। এক নির্যাতিতা নাবালিকার মায়ের কথায় তিন মাস ধরে চলছে লকডাউন। রোজগারের অন্যসব রাস্তা বন্ধ। বাধ্য হয়েই ছোট মেয়েকে পাঠাতে হয় পাথরের খাদানে। 

Share this article
click me!