সাবধান! আপনার ব্যক্তিগত তথ্য যদি থাকে ভারতীয় রেলের হাতে, তাহলে তা আর গোপন না-ও থাকতে পারে

মোদী সরকার ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা বিল সংসদে পেশ করলেও সম্প্রতি তা প্রত্যাহার করে নিয়েছে। বিরোধী দলগুলির দাবি, রেল মন্ত্রক বয়স্ক যাত্রীদের টিকিটে ছাড় তুলে দিয়ে যাত্রীদের তথ্য বেচে অন্য উপায়ে আয় করতে চাইছে, যা একেবারেই সুরক্ষিত নয়।

Sahely Sen | Published : Aug 20, 2022 8:14 AM IST

রেলযাত্রীদের তথ্য বেচে এবার আইআরসিটিসি লাভ করতে চাইছে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা। পথ খুঁজতে উপদেষ্টা নিয়োগের জন্য দরপত্র আহ্বান করেছে রেল মন্ত্রকের অধীনস্থ সংস্থা আইআরসিটিসি। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, ভারতে এখনও ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা আইন তৈরি হয়নি। তার আগেই কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা সাধারণ নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য বেচে টাকা আয় করতে চাইছে কেন? এর ফলে সাধারণ মানুষের নাম, ধাম, মোবাইল নম্বর থেকে সমস্ত ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হয়ে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

কোন উপায়ে ব্যক্তিগত তথ্য বেচে লাভ তুলতে পারে রেল?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতি বছরে কতবার আপনি দূরপাল্লার ট্রেনের টিকিট কাটেন, কোথায় যান, কত টিয়ারের টিকিট কাটেন, কোন ফোন নম্বরে রেজিস্টার করেন, সব তথ্যই জমা হতে থাকে আইআরসিটিসি-র পোর্টালে। ভারতে প্রতিদিন অন্তত ২কোটি মানুষ ট্রেনে চাপেন। তার মধ্যে  প্রায় ১ কোটি যাত্রী দূরপাল্লার ট্রেনে চড়েন। সত্তর থেকে আশি ভাগ যাত্রীই টিকিট কাউন্টারের বদলে অনলাইনে আইআরসিটিসি-র পোর্টালে টিকিট কাটছেন। সব তথ্যই রেল মন্ত্রকের অধীনস্থ সংস্থা আইআরসিটিসি-র কাছে জমা থাকে। যাঁরা রেলের মাধ্যমে পণ্য পরিবহণ করছেন বা পার্সেল পাঠাচ্ছেন, তাঁদের তথ্যও জড়ো হয়। পর্যটন থেকে পরিবহণ, অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবসায় যুক্ত শিল্পমহলের কাছে এই সব তথ্য যথেষ্ট লোভনীয়। পর্যটন, হোটেল সংস্থাগুলি রেলের এই তথ্য দেখলেই বুঝে যাবে, কোন সিজনে মানুষ কোথায় বেশি বেড়াতে যান। যাঁরা বেড়াতে যাচ্ছেন, তাঁদের মোটামুটি বাজেট কত, ট্রেনের কোন শ্রেণির টিকিট কাটেন, এ সব তথ্যই ডিজিটাল সংস্থাগুলির কাছে বেচে লাভ করতে পারে ভারতীয় রেল।

আইআরসিটিসি এই তথ্য বেচার পরিকল্পনা ঘোষণা করতেই শেয়ার বাজারে চড়চড়িয়ে দাম উঠেছে সংস্থার শেয়ারের। তথ্য সুরক্ষার পক্ষে সওয়ালকারী সংস্থা ‘ইন্টারনেট ফ্রিডম ফাউন্ডেশন’-এর বক্তব্য, আইআরসিটিসি যে উপদেষ্টা সংস্থা নিয়োগ করবে, তারা যাত্রী, পণ্য পরিবহণের সমস্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখবে কোন উপায়ে আর কোন কোন সংস্থাকে তা বেচা সম্ভব। নাম, ঠিকানা, বয়স, মোবাইল নম্বর, ইমেল আইডি, টাকা মেটানোর উপায়, লগইন আইডি, পাসওয়ার্ড থেকে কোন যাত্রী কত বার, কোথায়, কী ভাবে যাতায়াত করেন, সব থাকবে চোখের সামনে।

রেল মন্ত্রক এর আগে একবার সাধারণ মানুষের ১০০ টেট্রাবাইট তথ্য বেচে ঘরে টাকা তোলার পরিকল্পনা নিয়েছিল। ‘ইন্টারনেট ফ্রিডম ফাউন্ডেশনে’র বক্তব্য, এর সবটাই হচ্ছে ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা আইন না থাকাকালীন। সুপ্রিম কোর্ট ব্যক্তি পরিসরের অধিকারকে সাংবিধানিক মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি দেওয়ার পর থেকে এ দেশে তথ্য সুরক্ষা আইনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। মোদী সরকার ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা বিল সংসদে পেশ করলেও সম্প্রতি তা প্রত্যাহার করে নিয়েছে। সংসদীয় কমিটির তথ্যের ভিত্তিতে নতুন বিলের খসড়া তৈরি করে তা ফের সংসদে পেশ করা হবে। বিরোধী দলগুলির দাবি,  রেল মন্ত্রক বয়স্ক যাত্রীদের টিকিটে ছাড় তুলে দিয়ে যাত্রীদের তথ্য বেচে অন্য উপায়ে আয় করতে চাইছে, যা একেবারেই সুরক্ষিত নয়।


আরও পড়ুন-
কতদূর এগোল বুলেট ট্রেনের অগ্রগতি, কাজের খতিয়ান পেশ করলো রেল মন্ত্রক
বাংলায় উদ্বেগ বাড়াচ্ছে ডেঙ্গু, উচ্চপর্যায়ের বৈঠক ডাকার নির্দেশ দিল নবান্ন
বিদেশি মুদ্রায় ব্যাপক ঘাটতি, শ্রীলঙ্কার পর আর্থিক সঙ্কটে পড়তে পারে ভুটানও?

Read more Articles on
Share this article
click me!