১৯৭৫ সালের ১২ জুন ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নেয় এলাহাবাদ হাইকোর্ট। তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে সরাসরি আদালত পর্যন্ত দৌড় করানো হয়। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল ভোট কারচুপির। বিচারপতি জগমোহন লাল সিনহা তাঁর বিরুদ্ধে রায় দেন। রায়ে বলা হয় কোনও ভাবেই ভোট প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন না ইন্দিরা। কেন এই রায়?
১৯৭১ সালের রায়বেরেলি লোকসভা কেন্দ্রে সোসালিস্ট পার্টির নেতা রাজ নারায়ণকে হারিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। রাজ নারায়ণ ১৯৫১ সালের 'রিপ্রেজেন্টেশন অফ পিপল অ্যাক্ট' অনুযায়ী ভোট কারচুপির অভিযোগ আনেন ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে জাস্টিস সিনহা ইন্দিরার ৬ বছরের জন্য যে কোনও ভোটপ্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ থেকে নিষিদ্ধ করেন।
কোর্টে হাজির স্তম্ভিত ইন্দিরা গান্ধীর সামনে বিচারপতির নিজেই বলেন, 'দুর্নীতির অপরাধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২৩ (৭) ধারায় এই আসামীকে ৬ বছরের জন্য ভারতীয় সাংসদী রাজনীতির সমস্ত কার্যকলাপ থেকে নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। এরপর ১৯৭৫ সালের ২৪ জুন অবসরকালীন বিচারপতি ভি আর কৃষ্ণ আইয়ার এই নিষেধাজ্ঞার উপর স্থগিতাদেশ জারি করেন। যদিও শেষমেশ ইন্দিরা ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন। একজন সাধারন সংসদ হিসেবেই তাঁকে বেতনভুক থাকতে হয়। এর পরের দিনই জরুরি অবস্থার ডাক দেন ইন্দিরা। পাঁচ মাস পরে তারিখ ঘোষণা বাতিল করে সুপ্রিম কোর্ট। যদিও তত দিনে ভারতের ইতিহাসে স্থায়ী ক্ষত তৈরি করে দিয়েছে এই জরুরি অবস্থা।
এই রায় ভারতবর্ষের ইতিহাসে কতটা বদল এনেছিল জিজ্ঞেস করা হলে বরিষ্ঠ আইনজীবী শান্তিভূষণ বলেন, হ্যাঁ এই রায়ের ফলে বিরাট ক্ষতি হয়েছিল ইন্দিরার ভাবমূর্তির। ১৯৭৭ সালের লোকসভা ভোটে বিচারপতি সিনহার এই রায়ের দরুন ইন্দিরার পরাজয় হয়।
ইন্দিরা হেরেছেন। জরুরি অবস্থা দেশের ইতিহাসে কলঙ্কের দাগ রেখে গিয়েছে। কিন্ত সেইবারেই জয় হয়েছিল ভারতীয় বিচারব্যবস্থার।