কংগ্রেসে একের পর এক ইয়ং ব্রিগেডের ইন্দ্রপতন স্পষ্ট করছে নবীন প্রবীণ ভেদাভেদ

  • এক গভীর সঙ্কটে কংগ্রেস
  •  কে ধরবেন দলের হাল
  • এই প্রশ্ন নিয়ে গত এক মাস ধরে তীব্র টানাপোড়েনে ভারতের জাতীয় কংগ্রেস
  • এমন সঙ্কট এর আগে কংগ্রেস এএসেছে কি না তা খেয়াল করে কেউ বলতে পারছেন না

Indrani Mukherjee | Published : Jul 9, 2019 6:02 AM IST / Updated: Jul 09 2019, 01:44 PM IST

এক গভীর সঙ্কটে কংগ্রেস। কে ধরবেন দলের হাল? এই প্রশ্ন নিয়ে গত এক মাস ধরে তীব্র টানাপোড়েনে ভারতের জাতীয় কংগ্রেস। এমন সঙ্কট এর আগে কংগ্রেস এএসেছে কি না তা খেয়াল করে কেউ বলতে পারছেন না।  ১৯৩৮-৩৯ সালে কংগ্রেসের অন্দরে জাতীয় সভাপতি হওয়া নিয়ে একটা অশান্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল বটে। কিন্তু, সেসময় এটা অস্পষ্ট ছিল না যে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু-কে সরিয়ে কে সভাপতি হবেন, সেই নামটা। এই বর্তমান সময়ে যে পরিস্থিতি উদ্ভুত হয়েছে তাতে কংগ্রেসের হাল ধরতে রাজি নন রাহুল গান্ধী এবং তাঁর তরুণ ব্রিগেড। রাহুলের সুরে সুর মিলিয়েই এঁরা বলছেন দলের সংগঠনকে বাড়ানো এবং শক্তিশালী করার কাজে নিজেদের নিয়োজিত করবেন। 

আসলে, রাহুল গান্ধী এখন বেজায় খাপ্পা হয়েছে দলের একদল প্রবীণ নেতাদের উপরে। সূত্রে দাবি করা হচ্ছে, রাহুল মনে করছেন প্রবীণ নেতারা বলছেন অনেক ভালো ভালো কথা, কিন্তু ময়দানে নেমে তা প্রয়োগ করার মতো মানসিকতা দেখাচ্ছেন না। হরিয়ানায় এবার লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের প্রচার থেকে শুরু করে প্রার্থী বাছাই সবেতেই অগ্রভাগে ছিলেন গুলাম নবি আজাদ। রাহুল গান্ধীকে যেমন ভাবে বলা হয়েছে হরিয়ানায় প্রচার করতে তিনি সেভাবেই সেখানে প্রচার করেছেন। এমনকী, হরিয়ানা যত সংখ্যক জনসভায় রাহুল গান্ধী উপস্থিত হয়েছেন তা অন্যান্য রাজ্যে প্রচারের থেকে অনেকটাই বেশি। ফলে, হরিয়ানার হার তিনি বরদাস্ত করতে পারছেন না। রাহুলের আরও রাগের কারণ, নির্বাচনের গণনার পর দেখা গিয়েছে হরিয়ানার যে সব স্থানে গুলামনবি তাঁকে জনসভা করতে বলেছিলেন সেখানে উল্লেখযোগ্যভাবে ভোট কমেছে। উল্টে যে সব স্থানে রাহুল জনসভা করেননি সেই সব স্থানে ভোটের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। রাহুল গান্ধী এবং তাঁর টিমের মতে গ্রাউন্ট রিয়্যালিটি-কে ঠিক করে পরখ-ই করেননি গুলাম নবি এবং তাঁর সঙ্গে জুড়ে থাকা কংগ্রেস নেতারা। 

এমনকী, গান্ধী পরিবারের ঘনিষ্ঠ বেশকিছু নেতার উপরেও খেপেছেন রাহুল গান্ধী। কারণ, এই নেতারাই প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢ়ড়াকে একপ্রকার জোর করে উত্তর প্রদেশের নির্বাচনের মুখ করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছিলেন। কংগ্রেস অন্দরমহলের খবর রাহুল গান্ধী প্রচুর ওজর আপত্তি  করায় শেষপর্যন্ত প্রিয়ঙ্কা-কে উত্তর প্রদেশের মুখ করা হলেও তাঁকে আরও যে বড় মহিমা দেওয়ার তোড়জোড় চলছিল তা বন্ধ হয়েছিল। প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢ়ড়া-র সঙ্গে ইন্দিরা গান্ধীর চেহারার সাদৃশ্য থাকায় একটা নস্টালজিয়া সাধারণ জনমানসে আছে সেটা রাহুল জানতেন। কিন্তু, বিজেপি-র পরিকল্পিত ভোট মেশিনারির বিরুদ্ধে উত্তরপ্রদেশে লড়াই করার জন্য প্রিয়ঙ্কা-কে ঘিরে থাকা এই নস্টালজিয়া যথোপযুক্ত ছিল না বলেও দাবি করেছিলেন রাহুল। শেষমেশ প্রিয়ঙ্কাকে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে উত্তরপ্রদেশের ভোট রণক্ষেত্রে নামানোর বিষয়টি তিনি মেনে নিলেও সঙ্গে জুড়ে দিয়েছিলেন জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়াকে। 

রাহুল গান্ধীর দলের অন্দরে সনিয়া, মনমোহন, আহমেদ প্যাটেলদের সামনেই নাকি ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন। তাঁর পরিষ্কার বক্তব্য প্রতি নির্বাচনে-ই এই প্রবীণরা এমন কিছু পরামর্শ দেন, আর যখন তা ব্যুমেরাং হয়ে যায় তখন সকলে মিলে রাহুল গান্ধীকে কাঠগড়ায় তোলেন। তাই রাহুল গান্ধীর এবার পরিস্কার জবাব, দল চালান অন্য কেউ। এখন তিনি সংগঠন এবং জনতার জন্য কংগ্রেসের যে ভাবাদর্শ আছে তার প্রচারে কাজ করবেন। ফি নির্বাচনে ব্যর্থতার কালি শুধু তাঁর উপরেই নয় গান্ধী পরিবারের দেশের জন্য আত্মত্যাগের পরম্পরাতেও আঘাত করছে। রাহুল গান্ধী আর এটা মেনে নিতে রাজি নন। তাঁর সাফ কথা হাই-ক্লাস পলিটিকসের ঘেরাটোপ থেকে বেরিয়ে এবার তিনি সত্যি সত্যি সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছতে চান। আর এই কাজে তাঁকে সহায়তা করুক তাঁর তরুণ ব্রিগেড। 

রাহুল গান্ধীর এই ডাকে ইতিমধ্যেই সাড়া পড়েছে। মিলিন্দ দেওরা, জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া-রা সকলেই কংগ্রেসের বিভিন্ন পদ থেকে পদত্যাগ করতে শুরু করেছেন। পঞ্জাবেও বেশকিছু তরুণ কংগ্রেস নেতা পদত্যাগ করেছেন। তবে, রাজস্থান থেকে শচিন পাইলটের পদত্যাগের এখনও কোনও খবর নেই। লোকসভা নির্বাচনের আগে থেকেই রাজস্থানে একটা গুঞ্জন চলছিল দলীয় অন্তঃকলহ নিয়ে। কারণ, রাজস্থানে বিজেপি-র দীর্ঘ শাসনকালকে বিদায় জানিয়ে সেখানে এখন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কংগ্রেসের শাসন। এই কাজে যে ব্যক্তির সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব রয়েছে সেই শচিন পাইলট-কে মুখ্যমন্ত্রী পদে বসানো হয়নি। কংগ্রেসের উচ্চ পর্যায়ের সূত্রে দাবি করা হচ্ছে লোকসভা নির্বাচনে তাই শচিন পাইলটের লবির অধিকাংশ তরুণ নেতা কংগ্রেসের বিরুদ্ধে কাজ করেছেন। এই পরিস্থিতিতে রাহুলের একটা সমঝোতা সূত্র ছিল যে শচিন-কে মুখ্যমন্ত্রী পদে বসিয়ে নিয়ে অশোক গেহলট-কে দিল্লি রাজনীতিতে টেনে নেওয়া। এই কাজটাই গত কয়েক বছর ধরে অশোক গেহলট করছিলেন। কিন্তু, সনিয়ামুখী কিছু প্রবীণ নেতার অশোক গেহলট-কে রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী পদে বসানোর জন্য চাপ দিয়েছিলেন। 

বিজেপি-র জাতীয় রাজনীতিতে মোদীরাজ শুরু হওয়ার পর ৭৫ বছরের ঊর্ধ্বে থাকা নেতাদের বাতিলের তালিকায় ফেলে দেওয়া হয়েছিল। যার ফলে মুরলিমনোহর যোশী, লালকৃষ্ণ আডবাণী, যশবন্ত সিং-দের জমানা বিজেপি-তে এখন স্মৃতিকথায় পরিণত হয়েছে। রাহুল গান্ধীও বুঝে গিয়েছেন নাকি যে কংগ্রেসের অন্দরে পান চিবিয়ে-আরাম-কেদারায় বসে থাকা প্রবীণ নেতাদের বাতিলের দলে ঠেলতে না পারলে মুশকিল আছে। আর সেই কারণ রাহুলপন্থী তরুণ নেতাদের নিয়ে কংগ্রেসের অন্দরে তলে তলে এক মৌন প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন রাজীব ও সনিয়া পুত্র। এর একটাই লক্ষ দলের গঠনতন্ত্রে আমূল সংস্কার এবং নতুন রক্তের আমদানি। যার হাত ধরে এতদিন পশ্চিমবঙ্গে টিম-টিম করে কংগ্রেসে বাতি জ্বালিয়ে রাখা অধীর চৌধুরী-কে দেওয়া হয়েছে লোকসভায় বিরোধী দলের পদ। রাহুল গান্ধীর মতে অধীর চৌধুরীর মতো নেতাদের আরও আগে দলের বড় কর্মযজ্ঞে সামিল করাটা দরকার ছিল। এই দর্শসনকে অনুসরণ করলে পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস আজ ফসিলে পরিণত হত না বলেই মনে করছেন তিনি। রাহুল গান্ধী তাই এখন বিজেপি- বা অন্য কোনও দলের বিরুদ্ধে লড়ছেন না, লড়ছেন কংগ্রেসের মধ্যে এমন একটা রাজনীতির বিরুদ্ধে, যার সূচনা মহাত্মা গান্ধী করেছিলেন পট্টভি সিতারামাইয়া-র হাত ধরে। আর তার শিকার হয়েছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর মতো তরুণ তুর্কি। 

Share this article
click me!