স্বাধীনতা দিবসে দেশ জুড়ে চরম বিশৃঙ্খলা আফগানিস্তানে। তালিবানদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে চলল গুলি। আগামী দিনগুলিতে চরম সংকটের মুখে পড়তে পারে দেশটি।
তালিবান অধিকৃত আফগানিস্তানে অনেকটা তালিবানি কায়দায় পালন করা হল দেশের স্বাধীনতা দিবস। ১৯১৯ সালের এই দিনটিতে আফগানিস্তান ব্রিটিশ শাসম থেকে মুক্তি পেয়েছিল। দিনটিকে দেশের স্বাধীনতা দিসব হিসেবেই পালন করে আফগানিস্তানের বাসিন্দারা। কিন্তু বৃহস্পতিবার স্বাধীনতা দিবস পালনের অনুষ্ঠানে আফগান শহরে তালিবান বিরোধী বিক্ষোভ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। স্থানীয়দের অভিযোগ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করারর নামে তালিবানরা নির্বিচারে গুলি চালায়। তাতে বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে।
তালিবানদের জব্দ করতে বড় সিদ্ধান্ত বাইডেন প্রশাসনের, আফগানিস্তানে বিক্রি বন্ধ করার পথে আমেরিকা
প্রতিবাদকারীরা দেশের কালো, লাল ও সবুজ জাতীয় পাতাকা নিয়ে তালিবানদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখায়। প্রত্যক্ষদর্শীদের কথায় বিক্ষোভকারীদের দাবি ছিল দেশের জাতীয় পাতাকাই তাদের পরিচয়। তারা কালো, সবুজ আর লাল পাতাকেই সম্মান জানাবে। তালিবানদের সাদা পাতাকেকে মান্যতা দিতে রাজি নয় অনেক অফগানই। মহিলাদেরও এই মিছিলে অংশ নিতে দেখা যায়। অনেকেই আবার 'ঈশ্বর সর্বশ্রেষ্ট' বলে মিছিলে স্লোগান তোলে। কুনার প্রদেশে প্রচুর মানুষ রাস্তায় নেমে এসে তালিবানদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়। সেই প্রতিবাদ মিছিলেই গুলি চালায় তালিবানরা। গুলির আঘাত ও হুড়োহুড়িতে পদপৃষ্ঠ হয়ে বেশ কয়েকদনের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শী মোহম্মদ সেলিম জানিয়েছেন। জালালাবাদের রাস্তাতেও বিক্ষোভ হয়েছে। শহর ছাড়িয়ে তালিবান বিরোধী আন্দোলন জেলা আর গ্রামেও পৌঁছে গেছে বলে জানিয়েছেন এক আফগান বাসিন্দা। জালালাবাদে তালিবানদের পাতাকা নামিয়ে কালো সবুজ সাদা পাতাকা তোলা হয়। সূত্রের খবর স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে তালিবানদের গুলিতে কমপক্ষে চার জন সারাধারণ আফগানবাসী নিহত হয়েছে।
Afghanistan Crisis: ৭ দুর্ধর্ষ তালিবান নেতা, ২০ বছরের যুদ্ধে নিখুঁত গেমপ্ল্যানই ছিল মূল হাতিয়ার
তবে তালিবান নেতারা আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর থেকেই একটি মধ্যপন্থী আচরণ দেখাতে শুরু করেছে। তারা বলেছেন ১৯৯৬-২০০১ সালে যে দুর্ধর্ষ তালিবানি শাসনের অভিজ্ঞতা রয়েছে আফগানবাসীর তার সঙ্গে নতুন এই তালিবানদের কোনও মিলই নেই। নতুন এই তালিবানরা অনেকটাই অভিজ্ঞ। মহিলারা কাজ আর শিক্ষার অধিকার হারাবে না বলেও জানিয়েছে তালিবান নেতারা। কিন্তু তালিবানদের এই প্রতিশ্রুতি কতটা বাস্তাবায়িত হবে তা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। আফগানিস্তানের সাধারণ মানুষ তালিবান নেতাদের কথা বিশ্বাস করতে পারছে না।
Afghan Woman: তালিবানদের হাতে বন্দি সালিমা মাজারি, মৃত্যুর সামনে দাঁড়িয়ে সাহসী জেলাশাসক
অন্যদিকে এক তালিবান নেতা স্পষ্ট করে দিয়েছেন তালিবানরা নমনীয় হলেও আফগানিস্তানে গণতন্ত্র ফিরবে না। কারণ সেই দেশে গণতন্ত্রের কোনও ভিত্তি নেই। পাশাপাশি রাজনৈতিক কার্যকলাপ পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। তবে শরিয়া আইন মেনে মহিলাকা কাজে ফিরতে পারে বলেও জানিয়েছে তালিবান নেতা। অন্যদিকে দেশের সাধারণ মানুষকেও কর্মক্ষেত্রে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান হয়েছে। আফগানিস্তানে ৯ মিলিয়ন ডলার বৈদেশিক অর্থ নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। কারণ আমেরিকা পুরো টাকা ফ্রিজ করে রেখেছে। সেন্ট্রাস রিজার্ভব্যাঙ্কও জানিয়েছে দেশে মার্কিন ডলার সরবরাহ শূন্যের কাছাকাছে। দেশে চরম আর্থিক সংকট আর মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিয়ে পারে। যা খাবারে দাম বাড়়িয়ে দেবে। অন্যদিকে গৃহযুদ্ধের কারণে ইতিমধ্যেই ৪০ শতাংশ ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। তালিবানদের কারণে বহু মানুষই বর্তমানে ভিটেমাটি ছাড়া। এভাবে চলতে থাকলে আগামী দিনে আফগানিস্তানে খাবারের সংকট দেখা দিয়ে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।