বাইডেন কি পারবেন ট্রাম্প যুগের অন্ধকার আমেরিকায় আলো ফেলতে

বুধবার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেবেন জো বাইডেন

কিন্তু, তার কাজটা প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টের থেকেও কঠিন

করোনা, বেকারত্ব, উদ্বাস্তু, জাতিগত ও বর্ণবাদী বিদ্বেষ - সমস্যা অনেক

বাইডেন কি পারবেন জমানার অন্ধকার আমেরিকায় আলো ফেলতে

তপন মল্লিক - বুধবার দুপুরে যখন অসংখ্য আলো আর ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে আমেরিকার নব নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রায় জনশূন্য ওয়েস্ট ফ্রন্টে বক্তৃতা দিচ্ছেন সেই সময় তাঁর দেশে প্রতিদিন করোনায় ৪ হাজারের বেশি মানুষ মারা যাচ্ছেন, চূড়ান্ত বেকারত্ব, অনেকেই উদ্বাস্তু হচ্ছেন, কেবলই দীর্ঘ হচ্ছে সরকারি খাদ্য সহায়তার লাইন, তার সঙ্গে ট্রাম্প জমানার জাতিগত ও বর্ণবাদী বিষ।  

এসব কারণেই মনে হয় জো বাইডেন প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টের থেকেও কঠিন পরিস্থিতিতে আমেরিকার দায়িত্ব নিচ্ছেন। রুজভেল্ট দায়িত্ব নিয়েছিলেন গত শতকের তিরিশের দশকের মহামন্দার সময়। বাইডেন নিদারুণ অর্থনৈতিক সংকটেই শুধু নয়, অতিমারি ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের ছড়ানো জাতিবিভেদ ও হিংসার বিষে আক্রান্ত আমেরিকার।
প্রায় অর্ধ শতক ধরে বাইডেন আমেরিকাকে দেখছেন। যার মাধ্যে টানা ৩৬ বছর গুরুত্বপূর্ণ সিনেটর হিসেবে আর টানা আট বছর ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে। কিন্তু এবার একেবারেই আলাদা। শুধু আমেরিকা নয়, গোটা বিশ্ব পরিস্থিতি খেয়াল করতে হবে তাঁকে।

Latest Videos

আরও পড়ুন - বাইডেনের শপথের দিন ধেয়ে আসছে মহাজাগতিক বাধা, 'ভিনগ্রহী'দের সাহায্য চাইলেন নাকি ট্রাম্প

রুজভেল্টের সময়টা তুলনায় বাইডেনের থেকে কিছুটা হলেও অনুকূল ছিল। চরম অর্থনৈতিক মন্দায় সমাজে স্থিতিশীলতা ছিল না, কিন্তু সমাজের ভিতরে ক্ষয় বা পচন সেভাবে ধরেনি যা এখন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তখন অনেকেই বিশ্বজুড়ে দাদাগিরি করার জন্য সচেষ্ট।

সংকট এখন যে কেবল করোনা তাতো নয়, অর্থনীতি, রাজনীতি, জাতিগত ও বর্ণবাদী বিষে ক্রমে অসহিষ্ণুতা বাড়ছে উগ্র শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদে। বাইডেনকে এই ক্ষতগুলি মেরামত করার আস্থা অর্জন করতে হবে। তিনি আমেরিকার এই অসুখের কথা জানেন এবং তার কারণও বোঝেন। চূড়ান্ত ধৈর্যধারী, স্থিতিশীল ও প্রাপ্তবয়স্ক প্রেসিডেন্ট কি আমেরিকার এই সংকট মোকাবিলায় সফল হবেন? জানা নেই।  

আরও পড়ুন - বাইডেনের প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পাচ্ছেন ২০ ভারতীয়, দেখে নিন কে কী দায়িত্বে থাকবেন

তবে বাইডেন আমেরিকার দুনিয়ার ওপর দাদাগিরি পুনরুদ্ধার করতে এবং তা টিকিয়ে রাখতে পারবেন কি না, কার্যত তা নির্ভর করবে তিনি নিজের দেশের ভেতরের বিভেদ কতখানি দূর করতে পারবেন, আমেরিকান ভোটারদের অনেকের মধ্যে বিশ্বায়ন নিয়ে যেসব ভুল ধারণা আছে, তা ঘোচাতে পারবেন তার ওপর। ট্রাম্প বিশ্বের দরবারে আমেরিকার সম্মান ধুলোয় মিশিয়েছেন, জো বাইডেন আমেরিকার মর্যাদা ফিরিয়ে আনবেন বলে কথা দিয়েছেন। ট্রাম্প যেসব আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছ থেকে আমেরিকাকে সরিয়ে নিয়ে গেছেন যেমন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, আন্তর্জাতিক চুক্তিতে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি; বাইডেন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন আমেরিকাকে আবার একটি উদার বিশ্বব্যবস্থার নেতৃত্বে ফিরিয়ে নিয়ে যাবেন। চীনের সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করবেন। কিন্তু আমেরিকার সব মানুষ কি চায় তাদের দেশ আবার বিশ্বের নেতা হোক?

কি করবেন বাইডেন? দুনিয়ার ওপর দাদাগিরি ছেড়ে দেবেন নাকি অন্য কাউকে দাদাগিরি করতে দেবেন। আর যাই করুন আমেরিকা একই সঙ্গে দু’নৌকায় পা রাখতে পারবে না। সে দাদাগিরি ছেড়ে দেবে আর সেই জায়গা অন্য কাউকে নিতে দেবে না; সেটা কিন্তু চলবে না। তা করতে গেলে বিপদ আরও বাড়বে।

বিগত চার বছর ধরে চীনের সঙ্গে বিরোধীতা করে আমেরিকা শুধু চীনের সঙ্গেই বিচ্ছেদ ঘটায়নি, বিশ্বায়নের সঙ্গেও বিচ্ছেদ ঘটিয়েছে। এখন আমেরিকা যদি তার পুরনো জায়গা ফিরে পেতে চায়, যেখানে সে চীনের প্রতিযোগিতাতেও থাকবে আবার দাদাগিরিও টিকিয়ে রাখবে, তাহলে বাইডেনকে কিন্তু প্রচুর দাম দিতে হবে।  

আরও পড়ুন - মার্কিন ইতিহাসে এটাই প্রথম নয়, ট্রাম্পের আগেও ২ রাষ্ট্রপতিকে ইমপিচের মুখোমুখি হতে হয়েছিল

সবাই বলছেন, ট্রাম্পের চার বছর আমেরিকার পক্ষে অন্ধকার যুগ। গণতান্ত্রিক আমেরিকার ভাবমূর্তি তিনি সম্পূর্ণ নষ্ট করেছেন। গত শতকের ইউরোপীয় ফ্যাসিবাদের কায়দায় আমেরিকায় ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছেন। সেই প্রক্রিয়া যে সম্পূর্ণ থেমেছে, তা বলা যাবে না। ট্রাম্পের অবহেলায় আমেরিকায় করোনাতে লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আমেরিকা ওষুধ শিল্পে সবচেয়ে উন্নত দেশ হওয়া সত্ত্বেও ট্রাম্প করোনা প্রতিরোধে কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় আমেরিকা যেন এক মৃত্যু উপত্যকা।

প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হয়েই বাইডেন তাই বলেছেন, হোয়াইট হাউজে ঢুকেই তাঁর প্রথম দায়িত্ব মহামারি ঠেকানো এবং ট্রাম্প আমেরিকাতে যে অন্ধকার নামিয়েছেন, সেখানে আলো ফেলা। করোনা ঠেকাতে বাইডেন ইতিমধ্যে কয়েক কোটি টাকার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। কিন্তু ফ্যাসিবাদের কবল থেকে আমেরিকাকে তিনি কি মুক্ত করতে পারবেন? আমেরিকার নয়া ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে তিনি আমেরিকাকে ট্রাম্প যুগের অন্ধকার থেকেও উদ্ধার করতে পারবেন না। বর্ণবাদ ও ফ্যাসিবাদ যেভাবে মাথাচাড়া দিচ্ছে তাতে এই নির্বাচনে যারা হেরে গিয়েছে তারা ফের হোয়াইট হাউজ দখলের চেষ্টা করবে। কেউই হয়ত চান না বাইডেন জিমি কার্টারের মতো একজন প্রেসিডেন্ট হয়ে হোয়াইট হাউজ থেকে বিদায় নেন।

Share this article
click me!

Latest Videos

‘West Bengla-এ Uttar Pradesh-এর মতো সুশাসন দেবে BJP’ সনাতনী হিন্দুদের প্রতিশ্রুতি Suvendu Adhikari-র
Mamata Banerjee-র প্রশাসনকে বেলাগাম তুলোধোনা Agnimitra Paul-এর, দেখুন কী বললেন BJP নেত্রী
হিন্দুদের পাশে থাকায় শুভেন্দুকে প্রাণ নাশের হুমকি, দেখুন জবাবে কী বললেন শুভেন্দু | Suvendu Adhikari
'লুঙ্গিতে গিট বেঁধে আসুক, না হলে ওদের লুঙ্গিকে প্যারাসুট বানিয়ে ছেড়ে দেব' | Sukanta Majumdar Today
'ওদের লেজ কখনও সোজা হয় না' কেন বললেন শুভেন্দু! দেখুন বুঝে যাবেন | Suvendu Adhikari | Bangla News