ইরানে ৭৫ ছাড়াল মৃতের সংখ্যা, কোনও রকমের বিক্ষোভ বরদাস্ত করা হবে না বলে স্পষ্ট বার্তা রাইসির

অশান্তিতে মদতদানকারীদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার বার্তা দিয়েছে ইরান সরকার। দেশ জুড়ে দফায় দফায় বিক্ষোভের পরও নিজের অবস্থান থেকে এক চুলও নড়তে নারাজ রাইসি সরকার। বিক্ষোভকারীদের দমন করতে শুরু হয়েছে ধরপাকড়। রাস্তায় নামানো হয়েছে মহিলা কম্যান্ডো বাহিনি।

Ishanee Dhar | Published : Sep 27, 2022 12:26 PM IST

ইরানে জ্বলছে বিক্ষোভের আগুন। শরিয়া আইনের বিরুদ্ধে সরব ইরানের মহিলারা। অন্যদিকে অগ্নিগর্ভ এই পরিস্থিতি সামাল দিতে কঠোর দমনমূলক নীতি গ্রহণ করেছে ইব্রাহিম রাইসির সরকার। ইতিমধ্যেই নিহতের সংখ্যা ছুয়েছে ৭৫। ক্রমশ বাড়ছে গ্রেফতারের সংখ্যাও। 

অশান্তিতে মদতদানকারীদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার বার্তা দিয়েছে ইরান সরকার। দেশ জুড়ে দফায় দফায় বিক্ষোভের পরও নিজের অবস্থান থেকে এক চুলও নড়তে নারাজ রাইসি সরকার। বিক্ষোভকারীদের দমন করতে শুরু হয়েছে ধরপাকড়। রাস্তায় নামানো হয়েছে মহিলা কম্যান্ডো বাহিনি। কোনও রকমের বিক্ষোভ কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা হবে না বলে জানিয়েছেন খোদ প্রসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি। ইতিমধ্যে আটক করা হয়েছে ১২০০ জনেরও বেশি বিক্ষোভকারীকে। মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৭৫-এরও বেশি। 

প্রসঙ্গত, ঠিকভাবে হিজাব না পরার 'অপরাধে' ইরানের ২২ বছরের তরুণীকে পিটিয়ে মারার অভিযোগ ইরানি পুলিশের বিরুদ্ধে। পরিবারের সঙ্গে তেহরানে বেড়াতে এসেছিলেন ২২ বছরের মাহসা আমিনি। যথাযথ ভাবে হিজাব না পরার 'অপরাধে' নীতি পুলিশের হাতে আক্রান্ত হন আমিনি। কয়েকজন স্থানীয় মহিলা আমিনির পথ আটকে হিজাব পরার জন্য বারবারই চাপ দিতে থাকে। রাজী না হওয়ায় বাড়তে থাকে বাগবিতন্ডা। ধীরে ধীরে তর্কাতর্কি ধস্তাধস্তির রূপ নেয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় ইরানি পুলিশ। হিসাব নেই দেখে তরুণীকে 'উচিত শিক্ষা' দিতে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। আমিনিকে টানতে টানতে গাড়িতে তোলার পর পুলিশের গাড়িতেই তাঁকে বেধরক মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। থানায় নিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই আমিনির পরিবার জানতে পারে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তরুণীকে। কয়েক ঘন্টার মধ্যেই কোমায় চলে যান তরুণী। চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ে ২২ বছরের আমিনি। পরিবারের অভিযোগ থানায় নিয়ে গিইয়ে বেধরক মারধর করা হয় আমিনিকে। হিজাব পরা শেখানোর নামে মেরে ভেঙে দেওয়া হয় মাথার খুলি। যদিও পুলিশের তরফ থেকে অস্বীকার করা হয়েছে যাবতীয় অভিযোগ। তাঁদের দাবি আগে থেকেই অসুস্থ ছিল তরুণী এবং হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েই তাঁর মৃত্যু হয়। পুলিশের এই যুক্তি কোনওভাবেই মানতে রাজী নন আমিনির পরিবার। 

আরও পড়ুন - 'অত্যাচারী নিপাত যাক' প্রতিবাদের আগুনে জ্বলছে ইরান, চোখ রাঙানিকে উপেক্ষা করে রাস্তায় রাস্তায় পুড়ছে হিজাব

এরপরই, রানের রাস্তায় রাস্তায় জ্বলে ওঠে প্রতিবাদের আগুন। 'অত্যাচার'-এর বিরুদ্ধে পথে নেমেছে কাতারে কাতারে ইরানি মহিলা। প্রশাসনের চোখ রাঙানিকে উপেক্ষা করে গণবিক্ষোভের আগুন দেখা গিয়েছে ইরানের রাস্তায়। সেই আগুনের আঁচ ছড়িয়ে পড়েছে গোটা বিশ্বজুড়ে। আমিনি হত্যার প্রতিবাদে প্রকাশ্য রাস্তায় হিজাব পুড়িয়ে, চুল কেটে বিক্ষোভ উত্তেজিত জনতা। মুহুর্মুহু উঠছে সরকার বিরোধী স্লোগান। তেহেরান বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে জমায়েত করেছেন শয় শয় ইরানি তরুণী। ইরানের ১৫টি শহরে ছড়িয়ে পড়েছে প্রতিবাদের আঁচ। সমবেত জনতার ওপর চাঠিচার্জ করে ইরানি পুলিশ।  কাঁদানে গ্যাসের সেল ছোড়া এমনকী চলছে গুলিও। আমিনি মৃত্যুর প্রতিবাদে পথে নেমে ইতিমধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন ৩১ জন। যদিও গুলি চালানোর অভিযোগ অস্বীকার করেছে পুলিশ।  

আরও পড়ুন - তীব্র ক্ষুধার জ্বালায় জ্বলছে বিশ্ব, প্রতি চার সেকেন্ডের মৃত্যু ১ জনের- সতর্ক করল স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলি

Share this article
click me!