আগে থেকেই ঠিক করা ছিল চলতি বছরের এপ্রিলে জাপানে সরকারি সফরে যাবেন চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। তবে করোনাভাইরাস মহামারির আকারে ছড়িয়ে পড়ায় শি জিনপিংয়ের সেই সফর পিছিয়ে দিতে হয়। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সেই সফরও যাতে বাতিল হয় সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে জাপানের শাসকদল।
সম্প্রতি হংকংয়ের ওপর নিরাপত্তা আইন চাপিয়েছে বেজিং। যা একেবারেই ভাল ভাবে নেয়নি টোকিও। এই নিয়েই চিন ও জাপানের সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের লিবারাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির তরফে এই বিষয়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। তাই টোকিওর তরফে জিনপিং-এর সফর বাতিল করার বিষয়টিও ভেবে দেখা হচ্ছে।
জাপান সরকার কড়াভাবেই হংকং-এর উপর চিনের আধিপত্যের সমালোচনা করেছে। এমনকি হংকংয়ের মানুষদের অধিকারের প্রশ্নে জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রক একটি বিবৃতিও দিয়েছে। অনেকদিন থেকেই চিন-জাপান সম্পর্কের পারদ চড়ছে। দুই দেশের মধ্যে বৈরিতা নতুন কিছু নয়। কয়েক দশক থেকেই পূর্ব চিন সাগরের সেনকাকু দ্বীপসমূহ নিয়ে চিন ও জাপানের মধ্যে কলহের অন্ত নেই। তার উপর মাছ ধরা থেকে হংকং ও দক্ষিণ চিন সাগরে আধিপত্য নিয়েও দুই দেশের মধ্যে সংঘাত চলছেই। তারই ফলশ্রুতি গালওয়ান উপক্যকায় চিনা আগ্রাসনের সময় ভারতের পাশেই দাঁড়াতে দেখা গেছে জাপানকে।
তবে ক্ষমতায় এসে পুরনো শত্রুতা ভুলে চিনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করার উপর জোর দিয়েছিলেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। তার সদিচ্ছাতেই জিনপিংয়ের জাপানে আসার কথা ছিল। কিন্তু জাপানের শাসকদল লিবারাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ইয়াসুহিদে নাকাইয়ামা সাফ জানিয়েছেন , “আমাদের কাছে অন্য কোনও পথ নেই। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানাচ্ছি, তিনি যেন চিনের প্রেসিডেন্টের সফর বাতিল করে দেন।”
আরও পড়ুন: গালওয়ানে তাঁবু গুটিয়ে ফেলল লালফৌজ, উপগ্রহ চিত্রে ধরা পড়ল অস্থায়ী শিবির ভাঙার ছবিও
হংকংয়ের ওপর নিরাপত্তা আইন চাপিয়ে দেওয়ার জেরেই চিন ও জাপানের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। হংকংয়ের ব্যাপারে চিনের নতুন সিদ্ধান্তে হতবাক জাপানের আইনপ্রণেতারা। জাপান মনে করছে, হংকংয়ের ওপর নতুন নিরাপত্তা আইন চাপিয়ে দেওয়ার ফলে সেখানকার নাগরিকদের অধিকার খর্ব হবে।
বর্তমানে হংকংয়ে ১৪০০ জাপানি কোম্পানির অস্তিত্ব রয়েছে। শুধু তাই নয় দীর্ঘদিন ধরেই জাপান থেকে কৃষিজাত দ্রব্য সবচেয়ে বেশি পরিমাণ আমদানি করে আসছে হংকং। জাপানের ব্যাবসায়িক কমিউনিটি মনে করে করছে, চিনের নতুন আইন হংকংয়ে দীর্ঘদিনের প্রতিষ্ঠানকে নাড়িয়ে দেবে। যার ফলে আর্থিক দিকথেকে ব্যপক পরিমাণে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে জাপান।এই অবস্থায় শি জিনপিংয়ের সফর বাতিল করার দাবি জানিয়ে ইতিমধ্যে একটি প্রস্তাব পেশ করেছে জাপানের শাসকদল।