পাকিস্তান এবার ভারতের পথে হেঁটে ইউরোপীয় শক্তিগুলির লাল চোখ উপেক্ষা করে ভারতের পথে হাঁটল। রাশিয়ার থেকে তেল কেনার পাকা বন্দোবস্ত করল শরিফ সরকার।
আর্থিক সংকটে রীতিমত বিধ্বস্ত পাকিস্তান। পরিস্থিতি সামাল দিতে এবার ভারতের পথেই হাঁটল পাক-প্রশাসন। রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল কেনার পাকা বন্দোবস্ত করল নওয়াজ শরিফ সরকার। জুন মাস থেকেই রাশিয়ার তেলেই জীবন ফিরে পাওয়ার আশা করছে পাকিস্তান। নগদ সংকটে পড়ে পাকিস্তান আগামী মাসে রাশিয়ান থেকে অপরিশোধিত তেল কিনবে। মে মাসেই রাশিয়ান অপরিশোধিত তেলের জন্য প্রথম অর্ডার দেবে। পাকিস্তানের পেট্রোলিয়াম প্রতিমন্ত্রী মুসাদিক মালিক জানিয়েছেন, বর্তমানে প্রচুর বিদেশি ঋণ আর নগদের তীব্র সংকটে ধুঁকছে পাকিস্তান। এই অবস্থায় রাশিয়া থেকে সস্তা ও অনেক বেশি ছাড়ে অপরিশোধিত তেল কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ডন পত্রিকা জানিয়েছেন গত বছরই পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী ইসহাক দার জানিয়েছিলেন , পাকিস্তান রাশিয়ান তেল কেনার বিষয়ে বিবেচনা করছে। তিনি সেই সময় বলেছিলেন প্রতিবেশী ভারত মস্কো থেকে তেল কিনছে, সেই একই পথে হাঁটতে চায় পাকিস্তানও। গত বছর থেকেই পাকিস্তান রাশিয়ার তেল কেনার জন্য আলোচনা করছিল। পাকিস্তান অপরিশোধিত তেলের ওপর ৩০ শতাংশ ছাড় দিতে বলেছিল রাশিয়াকে। কিন্তু তাতে রাশিয়া রাজি হয়নি। এই অবস্থায় চলতি বছর রাশিয়ার প্রতিনিধিরা পাকিস্তান সফর করে। মার্চের মধ্যেই চুক্তি নিয়ে আলোচনা ও সই হয়ে যায়। তিন দিনের লম্বা বৈঠকের পরই দুই পক্ষ রাশিয়ারন তেলের কথা স্বীকার করে নিয়েছে। শনিবার জিও টিভির একটি অনুষ্ঠানে পাকিস্তান প্রশাসন জানিয়েছে আগামী মাস রাশিয়ার তেল কেনার অর্ডার দেওয়া হবে। তবে রাশিয়ার তেল পাকিস্তানে পোঁছাতে সময় লাগবে ২৬-২৭ দিন। তাই জুন মাস থেকেই পাকিস্তানে তেলের সমস্যা মিটবে বলেও আশা করছে প্রশাসন। তিনি আরও বলেছেন রাশিয়ার সরকার প্রতিবেশীদের যতটা ছাড় দিচ্ছে ঠিক ততটাই ছাড় পাকিস্তানকে দেবে বলেও আশ্বাস দিয়েছে।
পাকিস্তানে আর্থিক সংকট মোকাবিলা করার জন্য ধনী ও দরিদ্রদের জন্য পৃথক গ্যাস শুল্ক নীতি চালু করা হয়েছে। এই বিষয়ে পাকিস্তান প্রশাসন জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী শেহবাদ শরিফ ও পাকিস্তান মিসলিম লিগ নওয়াজ সুপ্রিমো নওয়াজ শরিফের নির্দেশেই ধনী ও দরিদ্রদের জন্য পৃথক শুল্ক নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি বলেন দেশের মোট জনসংখ্যার ৬০ শতাংশই দরিদ্র- তাদের জন্য দ্রুত গ্যাসের শুল্ক কম করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন পেট্রোলিয়াম ভর্তুকির ক্ষেত্রেও সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ধনীরা পেট্রোলের জন্য ৩০০ টাকা দেবে । দরিদ্রদের দিতে হেব ২০০ টাকা।
পাকিস্তানের খাদ্য দফতর জানিয়েছেন দেশে ময়দার তীব্র সংকট। ময়দা বা আটার মিলগুলি আর্থিক অনটকের কারণে প্রায় বন্ধ অবস্থায় রয়েছে। পরিস্থিতি দিনে দিনে খারাপ হচ্ছে। খাইবার , পাখতুনখোয়া, সিন্ধ, বেলুচিস্তান-সহ কয়েকটি এলাকায় রীতিমত বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। একাধিক জায়গায় খাবারের সন্ধানে মানুষ পদদলিত হয়ে মারা গেছে বলেও খবর পাওয়া গেছে। এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাজার হাজার মানুষ বাজারে ভিড় করে ভর্তুকির আটার জন্য অপেক্ষায় রয়েছে। দিনের অধিকাংশ সময়ই ভর্তুকির আটা সংগ্রহ করার জন্য খরচ করছে। দেশের ক্রমবর্ধমান আর্থিক সংকটের মধ্যে গম ও আটার দাম অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। জানুয়ারির রিপোর্ট অনুযায়ী করাচিতে এক কেজি গমের দাম ছিল ১৬০টাকা। সেখানে ইসলামাবাদ, পেশোয়ারে ১০ কেটি আটা বিক্রি হয়েছে ১৫০০ পাক- টাকায়। শুধুমাত্র আটা বা ময়দা নয়, নিত্য প্রয়োজনীয় খাবারের দামও বেড়েছে হুহু করে। মাছ মাংস ,দুধ , তেল - সব কিছুরই দাম আকাশ ছোঁয়া। রোজা, ইফতারের মধ্যেই পাকিস্তানের খাবারের দেখা দেওয়ায় রীতিমত ক্ষোভ বাড়ছে সে দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে।