১৯৯৯ সালে, তিনি নওয়াজ শরিফ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে সিংহাসন উল্টে নিজেই ক্ষমতা দখল করেন। তিনি ২০ জুন ২০০১ থেকে ১৮ আগস্ট ২০০৮ পর্যন্ত পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি ছিলেন। এ সময় তিনি একটানা ভারতের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিলেন।
পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ও সেনাপ্রধান জেনারেল পারভেজ মুশারফ ৭৯ বছর বয়সে দুবাইয়ের একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। যে দেশে তিনি জন্মেছিলেন (ভারত), পাকিস্তানে গিয়ে সেই দেশেরই ঘোর বিরোধী হয়ে ওঠেন। নওয়াজ শরিফ, যিনি তাকে সেনাপ্রধান বানিয়েছিলেন, মুশারফ তার নিজের সরকারকে পতন ঘটিয়েছিলেন। মুশারফ দীর্ঘদিন বন্দুকের জোরে শাসন করেছেন। ২০১৪ সালে, আদালত তাকে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় মৃত্যুদণ্ড দেয়, তারপর তিনি স্বাস্থ্যের অজুহাতে বিদেশে পালিয়ে যান এবং আর কখনও পাকিস্তানে ফিরে আসেননি।
পারভেজ মুশারফ সম্পর্কে মজার বিষয় হল তিনি দিল্লির দরিয়াগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৪৩ সালের ১১ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দেশভাগ হলে তার পরিবার করাচিতে বসতি স্থাপন করে। তিনি পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি ও সেনাপ্রধানের পদে পৌঁছান। ১৯৯৯ সালে, তিনি নওয়াজ শরিফ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে সিংহাসন উল্টে নিজেই ক্ষমতা দখল করেন। তিনি ২০ জুন ২০০১ থেকে ১৮ আগস্ট ২০০৮ পর্যন্ত পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি ছিলেন। এ সময় তিনি একটানা ভারতের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিলেন।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ পারভেজ মুশারফকে সেনাপ্রধান বানিয়েছিলেন কিন্তু মুশারফ তার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে পাকিস্তানের গণতন্ত্রকে হত্যা করেন। এর পরে প্রথমে সামরিক শাসন ছিল এবং ২০০১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত মুশারফ রাষ্ট্রপতি হিসাবে স্বৈরাচারী শাসন পরিচালনা করেছিলেন। তারা পাকিস্তানে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে তা দেখানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল এবং সেই কারণেই তারা ২০০২ সালে গণভোটের নাটক করেছিল। কিন্তু তাদের উদ্দেশ্য পূর্ণ হয়নি।
পারভেজ মুশারফ উদারপন্থী হওয়ার ভান করেছিলেন
মুশারফ দাবি করতেন যে তিনি সন্ত্রাসবাদের অবসান ঘটাতে সক্ষম, কিন্তু বাস্তব হল পাকিস্তানের সেনাবাহিনী মুশারফে সমর্থনে সন্ত্রাসবাদের বিস্তার ঘটাচ্ছে। মুশারফ তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের কাছে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে এই জাঁকজমকপূর্ণ যুদ্ধও উপস্থাপন করেছিলেন, যার ফলস্বরূপ ন্যাটো বাহিনী পাকিস্তানে সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে নেমেছিল।
২০০৭ সালের নির্বাচনে আবারও জয়ী হন মুশারফ, কিন্তু তাতেও কারচুপির অভিযোগ ওঠে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো একজন স্বৈরাচারী শাসককে উদারপন্থী হিসেবে উপস্থাপন করা হলেও মুশারফের শাসনামলে পাকিস্তানের লাল মসজিদে ১০৫ জন নিহত হওয়ার পর মুশারফের শাসন নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। হঠাৎ করে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়।
মৃত্যুদণ্ডের আগেই দেশ ছেড়ে দেন
জেনে রাখা ভালো নওয়াজ শরিফের সরকার আবার পাকিস্তানে আসার পর, পাকিস্তানে মুশারফের জীবন কঠিন হয়ে পড়েছিল। ২০১৪ সালে ৩০ মার্চ মুশারফের বিরুদ্ধে তেসরা নভেম্বর ২০০৭-এর সংবিধান স্থগিত করার অভিযোগ আনা হয়। ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯-এ, মুশারফের বিরুদ্ধে উচ্চ রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় একটি বিশেষ আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়।
প্রাক্তন সামরিক শাসক চিকিৎসার জন্য ২০১৬ সালের মার্চ মাসে দেশ ছেড়েছিলেন এবং তারপর থেকে পাকিস্তানে ফিরে আসেননি। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের কারণে মুশারফ আর কখনো পাকিস্তানে যাননি। যদিও তার ভিডিও ও ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ ভাইরাল হয়।