শুক্রবারই আফগানিস্তানের নতুন সরকার চূড়ান্ত করে ফেলল তালিবান। মোল্লা বরাদরই নতুন সরকারের নেতৃত্ব দেবে, দোহার ৮০ শতাংশ নেতাই জায়গা পাচ্ছে শুরায়।
শুক্রবারই আফগানিস্তানে পরবর্তী সরকার চূড়ান্ত করে ফেলল তালিবানরা। প্রত্যাশা মতোই রাজনৈতিক কার্যালয়ের প্রধান মোল্লা বরাদরই নতুন সরকারের নেতৃত্ব দেবে বলে কট্টরপন্থী ইসলামি গোষ্ঠীটির অন্তত তিনটি সূত্রকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স। সূত্রের দাবি, তালিবান প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমরের ছেলে মোল্লা মহম্মদ ইয়াকুব এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রাক্তন সদস্য শের মহম্মদ আব্বাস স্টানেকজাই-ও গুরুত্বপূর্ণ পদের দায়িত্ব নেবে। তালিবান শীর্ষ নেতারা ইতিমধ্যেই কাবুলে পৌঁছে গিয়েছে।
দেশের যাবতীয় বিষয়ে নীতি নির্ধারণের দায়িত্বে থাকবে একটি 'শুরা' বা ধর্মীয় পরিষদ। এই শুরাই দেশের ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করবে। 'শুরা'র সদস্য যে শুধু বিশিষ্ট তালিবান নেতারাই হবেন, তা নয়। অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর নেতাদেরও এই শুরার অংশ করা হবে। ভয়ঙ্কর হাক্কানি নেটওয়ার্ক-সহ তালিবান ব্যতীত অন্যান্য গোষ্ঠীকে ৫০ শতাংশ জায়গা দেওয়া হবে। যুদ্ধবাজ আফগান নেতা গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ারকেও শুরায জায়গা দেওয়া হবে। হামিদ কারজাই এবং আবদুল্লা আবদুল্লা এই শুরায় জায়গা না পেলেও, উপদেষ্টার মতো কোনও এক ভূমিকায় থাকবেন বলে তালিবান সূত্র জানিয়েছে। তবে কোনও মহিলাকে এই ধর্মীয় পরিষদে জায়গা দেওয়া হবে না।
২০১০-এর দশকের গোড়ার দিকেই তালিবান পদাধিকারীরা কাতারের দোহায় চলে গিয়েছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল আফগান সরকার, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য দেশের সঙ্গে তালিবানদের রাজনৈতিক সম্পর্ক বাড়ানোর জন্য একটি কার্যালয় স্থাপন করা। যা পূর্ণ হয়েছিল ২০১৩ সালে। সেই অফিসের বিভিন্ন পদাধিকারীরা নতুন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে বলে মনে করা হচ্ছে। শুরায় দোহার কার্যালয়ের ৮০ শতাংশ ব্যক্তিই দায়গা পেতে চলেছে বলে জানা গিয়েছে। বরাদরই এগিয়ে রয়েছে প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড়ে। স্টানাকজাই-এর আন্তর্জাতিক বিশ্বে যোগাযোগ এবং জ্ঞানের কথা বিবেচনা করে তাকে বিদেশমন্ত্রী করা হতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে।
এদিকে, কাবুলে মন্ত্রিসভা ঘোষণার হোর্ডিং লাগানোর কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। আফগানিস্তান ইসলামিক আমিরশাহির সাংস্কৃতিক কমিশনার আহমদুল্লাহ মুত্তাকি সেই হোর্ডিং লাগানোর বেশ কয়েকটি ছবি টুইট করেছে। আগে মনে করা হয়েছিল, তালেবানদের শীর্ষ নেতা শেখ হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদাই রাষ্ট্রের প্রদান হিসাবে দায়িত্ব নেবে। তবে, তালিবান সূত্রে জানা গিয়েছে, সে দেশে ধর্মীয় শাসনের দিকটি দেখবে। রাজনৈতিক বিষয়ে মাথা গলাবে না। তালিবান নেতারা জানিয়েছেন, কাবুলের আফগান প্রেসিডেন্ট প্রাসাদেই একটি অনুষ্ঠান করে বরাদরকে সরকারের প্রধান হিসাবে ঘোষণা করা হবে।
আরও পড়ুন - মহিলা হয়ে তালিবানের সাক্ষাতকার, গড়েছিলেন নজির - সেই সাংবাদিকেও পালাতে হল, দেখুন
আরও পড়ুন - ডানা কেটে নিয়েছিল তালিবান, ছবিতে ছবিতে চিনে নিন আফগান বায়ুসেনার প্রথম মহিলা পাইলটকে
আরও পড়ুন- কাবুলে 'রুদ্ধ সঙ্গীত' - গানের স্কুলে ভাঙছে বাদ্যযন্ত্র, বাড়ছে তালিবানের আনাগোনা, দেখুন
গত ১৫ অগাস্ট কাবুল দখল করেছিল তালিবানরা। তারপর থেকেই কবে তারা সরকার গঠন করবে, সেই দিকে চোখ ছিল গোটা বিশ্বের। মার্কিন সেন দেশ ছাড়ার পরই নতুন সরকার ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছিল তালিবান সুত্র। তবে নতুন সরকার গঠন করলেও রাজধানী কাবুলের উত্তরে পঞ্জশির উপত্যকায় এখনও দারুণ প্রতিরোধের মুখে রয়েছে তালিবানরা। শুক্রবারও এই আফগান প্রদেশ থেকে মারাত্মক যুদ্ধ এবং ব্যাপক হতাহতের খবর পাওয়া গিয়েছে। প্রাক্তন মুজাহিদিন কমান্ডার আহমদ শাহ মাসুদের পুত্র আহমদ মাসুদ ও প্রাক্তন আফগান উপরাষ্ট্রপতি সালের নেতৃত্বে আঞ্চলিক কয়েক হাজার যোদ্ধা এবং পদচ্যুত আফগান সরকারের সশস্ত্র বাহিনীর অবশিষ্টাংশ এই দুর্গম উপত্যকায় তালিবানদের ঠেকিয়ে রেখেছে। দুই তরফে সান্তুপূর্ণ নিষ্পত্তির সমস্ত আলোচনা ভেঙে গিয়েছে বলেই মনে করছেন আফগানিস্তান বিশেষজ্ঞরা।