ভূমিকম্পের পর ধ্বংসস্তূপের নীচে চাপা পড়ে কতক্ষণ বেঁচে থাকা যায়? তুরস্ক-সিরিয়ার ভয়াবহতা নিয়ে সচেতন করছেন বিশেষজ্ঞরা

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি কারুর হাত-পা বা যেকোনও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কাটা যায়, অথবা কোনও ব্যক্তি যদি কোনও মৃত ব্যক্তির সঙ্গে একসাথে চাপা পড়ে গিয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে জীবিত ব্যক্তির বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে। 

২০২৩-এর শুরুতেই তুরস্ক এবং সিরিয়ায় মারাত্মক ভূমিকম্প দেখল সারা বিশ্ব। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে উদ্ধারকাজে পৌঁছে গিয়েছে বিশেষ দল। দেওয়া হচ্ছে ত্রাণসামগ্রী, পাঠানো হচ্ছে ওষুধপত্র এবং স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞ টিমও। কিন্তু, এখনও এই দেশগুলিতে ধ্বংসস্তূপের নীচে চাপা পড়ে আর্তনাদ করছেন অগুন্তি মানুষ। কিন্তু, উদ্ধারকারী দল না পৌঁছনো অবধি সবচেয়ে বেশি কতক্ষণ পর্যন্ত টিকে থাকতে পারবেন তাঁরা? এই বিষয়েই একটি সামগ্রিক ধারণা দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ধ্বংসস্তূপের নীচে যাঁরা চাপা পড়ে রয়েছেন, তাঁদের আঘাত কতটা গুরুতর, কীভাবে তাঁরা আটকা পড়ে রয়েছেন এবং আবহাওয়ার অবস্থার কেমন রয়েছে, এই সবকিছুর উপর নির্ভর করছে তাঁদের বেঁচে থাকার ভবিষ্যৎ।

Latest Videos

সারা বিশ্ব থেকে অনুসন্ধান দলগুলি তুরস্ক এবং সিরিয়ার স্থানীয় জরুরী উদ্ধারকর্মীদের সাথে হাত লাগিয়েছে। দুর্যোগের প্রথম ২৪ ঘন্টার মধ্যে বেশিরভাগ উদ্ধারকাজ করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু, অনেক মানুষকেই বিভিন্ন প্রতিকূলতার কারণে উদ্ধার করা যাচ্ছে না। এঁদের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাভাবিকভাবেই দীর্ঘক্ষণ চাপা পড়ে থাকার কারণে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা কমতে থাকে। পাথর বা অন্যান্য ধ্বংসাবশেষের নীচে চাপা পড়ে গেলে মানুষ গুরুতরভাবে আহতও হয়ে থাকেন।

চাপা পড়ে থাকা অবস্থায় নিঃশ্বাস নেওয়ার জন্য বাতাস এবং পর্যাপ্ত জল পাওয়া খুব জরুরি। কিন্তু, সিরিয়া ও তুরস্কে বর্তমানে কনকনে ঠাণ্ডা, প্রচণ্ড তুষারপাত উদ্ধার অভিযানকে ব্যাহত করছে এবং তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে নেমে গেছে। ফলত, আবহাওয়া দুর্যোগকবলিত মানুষদের পক্ষে অত্যন্ত প্রতিকূল।

“সাধারণত, পঞ্চম থেকে সপ্তম দিনের পরে বেঁচে থাকাটা বিরল ঘটনা। আর বেশিরভাগ অনুসন্ধানকারী এবং উদ্ধারকারী দল এতগুলো দিন পার হয়ে গেলে শেষমেশ হাল ছেড়ে দিতে চাইবে,” বলছেন ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতালের জরুরী ও দুর্যোগবিভাগের ওষুধ বিশেষজ্ঞ ডা. জারোন লি। যদিও তিনি এও বলছেন, “কিন্তু, সাত দিনের সময়সীমা অতিক্রম করে অনেক মানুষেরই বেঁচে থাকার নজির রয়েছে। তবে, দুর্ভাগ্যবশত, এগুলি সাধারণত বিরল এবং অসাধারণ ঘটনা।”

নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির ফেইনবার্গ মেডিক্যাল স্কুলের জরুরী ওষুধ বিশেষজ্ঞ ডা. জর্জ চিয়াম্পাস বলছেন, “ক্রাশ ইনজুরি (অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, পেশি বা নার্ভের আঘাত) এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কেটে যাওয়া সহ বিভিন্ন ট্রমাজনিত আঘাত পেলে আক্রান্ত ব্যক্তির বেঁচে থাকা খুব সংকটজনক হয়ে যায়। আপনি যদি মাত্র এক ঘন্টার মধ্যে তাঁদের বের করতে না পারেন, তাহলে সত্যিই তাঁদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা খুব কমে যাবে। আরেক ক্ষেত্রে এমন হয় যে, যারা ওষুধের উপর নির্ভর করে বেঁচে আছেন, তাঁরাও মারাত্মক ক্ষতির মুখোমুখি হন। আক্রান্ত ব্যক্তির বয়স, শারীরিক ও মানসিক অবস্থা, সবই সংকটজনক।”

সান ফ্রান্সিসকোর ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া-এর জরুরী ওষুধ বিশেষজ্ঞ ডা. ক্রিস্টোফার কলওয়েল বলছেন, “অনেকগুলি ভিন্ন পরিস্থিতি আছে, যেখানে আমরা সত্যিই কিছু মানুষকে অলৌকিকভাবে বাঁচাতে পেরেছি এবং প্রচণ্ড ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতেও মানুষ বেঁচে গেছেন। সাধারণ ক্ষেত্রে দেখা গেছে এই বেঁচে যাওয়া মানুষদের বয়স কম এবং দেখা গেছে যে, এরা ধ্বংসস্তূপের মধ্যে কোনও একটা এমন ফাঁক বা পকেট খুঁজে নিতে পেরেছে যেখান দিয়ে নিঃশ্বাস নেওয়া যায় এবং জল বা যেকোনও প্রয়োজনীয় উপাদান এদের কাছে বাইরে থেকে সাপ্লাই দেওয়া যায়।”

২০১১ সালে জাপানের ভূমিকম্প এবং সুনামির পর, এক কিশোর এবং তার ৮০ বছর বয়সী ঠাকুমাকে তাঁদের ভেঙে পড়া বাড়ির তলায় নয় দিন আটক থাকার পর জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা গিয়েছিল। তারও আগে, পোর্ট-অ-প্রিন্সের ভূমিকম্পস্থল থেকে ১৬ বছর বয়সী এক হাইতিয়ান মেয়েকে ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ার প্রায় ১৫ দিন পর উদ্ধার করা গিয়েছিল।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষের মানসিক অবস্থাও তাঁর বেঁচে থাকাকে প্রভাবিত করতে পারে। কোনও ব্যক্তি যদি কোনও মৃতদেহের পাশে চাপা পড়ে থাকেন, যিনি অন্য কোনও জীবিত ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ করতে পারছেন না, তাহলে সেক্ষেত্রে দেখা যায় যে তিনি বেঁচে থাকার আশা ছেড়ে দিচ্ছেন এবং উদ্ধার পাওয়ার বিশেষ চেষ্টা করছেন না। “যদি আপনার সঙ্গে এমন কেউ থাকেন যিনি বেঁচে রয়েছেন, তাহলে দুজন মানুষ ক্রমাগত লড়াই চালিয়ে যাওয়ার জন্য একে অপরের ওপর নির্ভর করতে পারবেন।”

আরও পড়ুন-
ধ্বংসের নীচে ভাইকে আগলে শুয়ে রয়েছে ছোট্ট দিদি, সিরিয়ার ভিডিয়ো দেখে চোখে জল সারা বিশ্বের

বিজেপি বিধায়ক তৃণমূলে যেতেই আলিপুরদুয়ারে শুভেন্দুর জনসভা, পরের দিনই কোচবিহারে অভিষেক

মাত্র ২টি উত্তরে পেনের কালি, উত্তর দেখেই সুপারিশ হওয়া চাকরিপ্রার্থীর খাতা ধরে ফেলতেন কুন্তল ঘোষ
 

Share this article
click me!

Latest Videos

'আমি বলছি, আমার নাম করে লিখে রাখুন' ঝাঁঝিয়ে উঠে যা বললেন শুভেন্দু | Suvendu Adhikari
সংসদে শীতকালীন অধিবেশন শুরু! তার আগেই বিরোধীদের কড়া বার্তা PM Modi | Parliament Winter Session 2024
Bangladesh-এ হিন্দুনেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতার, মুক্তির দাবিতে Md Yunus-কে হুঁশিয়ারি শুভেন্দুর
TMC ছেড়ে কেন BJP-তে শুভেন্দু! আজ নিজেই বলে দিলেন সব | Suvendu Adhikari | Bangla News
'আমাদের এখানে কিম জং-য়ের লাইট ভার্সন আছে' Mamata-কে নাম না করে চরম কটাক্ষ Sukanta Majumdar-এর